সন্তানদের স্কুলে যাতায়াতের জন্য অটো জীপ তৈরী করলেন সিদ্ধিরগঞ্জের আলম
ইসমাইল হোসেন মিলন, সিদ্ধিরগঞ্জ, প্রেসবাংলা২৪.কম: পৃথিবীতে একসময় বিলাসিতার অন্যতম উপকরণ ছিল ব্যক্তিগত গাড়ি। তবে কালের পরিক্রমায় ব্যক্তিগত গাড়ি আজ অতি জরুরি। আমাদের দেশে বিখ্যাত সব ব্র্যান্ডের অসাধারণ ডিজাইনের গাড়ি যে কারো চোখ ধাঁধিয়ে দিতে যথেষ্ট। বিভিন্ন কোম্পানির গাড়ি যেমন রাস্তায় গতির ঝড় তুলতে ওস্তাদ তেমন আরামদায়ক ভ্রমণেও সহযোগী। প্রতিনিয়ত আরও নতুন নতুন প্রযুক্তির উন্নত মডেলের সব গাড়ি বাজারে আসছে। দেখলে মনেই হবেনা এটি দেশের তৈরি বা ব্যাটারি চালিত গাড়ি। এসব গাড়ি একদিকে যেমন চোখের প্রশান্তি আনে, অন্যদিকে ভ্রমণে আনে আভিজাত্য। বিলাসবহুল এসব গাড়ির পাশাপাশি বর্তমানে বাজারে রয়েছে ব্যাটারিচালিত মাঝারি এবং স্বল্পমূল্যের অপেক্ষাকৃত কম সুবিধাযুক্ত গাড়ি। নিঃশব্দ চলাচল এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ অনেক কম হওয়ায় বিদ্যুৎচালিত গাড়িগুলো দিনদিন দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করছে।
এবার সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ব্যবসায়ী হাজী মো: আলম মিয়া দেশের মাটিতে নিজ উদ্যোগে চার চাকার একটি ব্যাটারিচালিত অটো জীপ গাড়ি তৈরি করেছেন। একান্তই নিজের কল্পনাশক্তি দিয়ে গাড়িটি তৈরী করেছেন তিনি। ব্যাটারিচালিত এই গাড়িটি ঘন্টায় ৩০-৪০ কি: মি: গতিতে একটানা ৫ ঘন্টা চলতে পারবে। সাধারনত বড় বড় বাস, ট্রাকের মতো এই অটো জীপ গাড়িটিতে রয়েছে রাউন্ড স্টিয়ারিং। যা নিয়ে স্থানীয় সমাজের মধ্যে একধরণের আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। তাই প্রতিদিন আশেপাশের এলাকা থেকে কমবেশি অনেকেই তার তৈরি এই জীপ গাড়িটি দেখতে আসেন।
কমলা রঙের চার চাকার এই গাড়িটি দেখতে অবিকল একটি জীপ গাড়ির মতন যার দৈঘ্য ৮ ফিট ও উচ্চতা প্রায় ৬ ফিট। গাড়িটির বেশির ভাগ অংশ দেশীয় লোহা ও স্টীল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। চালকসহ ৪ জন যাত্রী নিয়ে গাড়িটি একটানা ৫ ঘন্টা চলতে সক্ষম। গাড়িটিতে ব্যাটারি থেকে শুরু করে রয়েছে চারটি আসন সংখ্যা, চারটি চাকা, রয়েছে প্রাইভেট স্ট্যাডিং, বেগ গিয়ার, সিট বেল, সামনে চারটি সাদা রঙের এলিডি লাইট, সামনে পিছনে দুটি করে মোট চারটি এন্টিগেটরসহ রয়েছে ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেমও।
ব্যবসায়ী হাজী আলম মিয়া নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নং ওয়ার্ডের মিজমিজি কান্দাপাড়া এলাকার মৃত কমর উদ্দিনের ছেলে। তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে মিজমিজি কান্দাপাড়া এলাকায় বসবাস করেন।
দেশের মাটিতে তৈরি এই অটো জীপ নামের গাড়িটির উদ্যোক্তা হাজী আলম বলেন, বহুদিন দিন ধরে স্বপ্ন ছিলো আমি এই গাড়িটি তৈরি করবো। অবশেষে আমি গাড়িটি তৈরি করতে পেরেছি। আলম বলেন এই গাড়িটির কিছু যন্ত্রাংশ কিনে আনা হয় এবং কিছু নিজের পরিকল্পনায় বানানো হয়। পরে এটি ফিটিং করা হয়েছে একটি ওয়ার্কশপে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি গাড়িটির নির্মাণ কাজ শুরু করলে সম্পূর্নভাবে শেষ হয় মার্চ মাসের ৯ তারিখ। গাড়িটি তৈরি করতে এক মাস সময় লেগেছে তার।
গাড়িটি তৈরি করতে কতো টাকা খরচ হয়েছে জানতে চাইলে হাজী আলম জানান, এ পর্যন্ত তাঁর দেড় লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে গাড়িটির পিছনে। এই অটো জীপ গাড়িটি সম্পূর্ন চার্জ হতে সময় লাগে ৮ ঘন্টা।
গাড়িটি কেনো তৈরি করেছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার ছেলেদের স্কুলে যাওয়া আসার জন্য মূলত আমি গাড়িটি তৈরি করেছি। যদি কোনো পরিবার তাদের সন্তানদের স্কুলে যাতায়াতের জন্য এই গাড়ি বানাতে চায় তাহলে আমি তাদের সহযোগিতা করবো। সরকারি অনুমতি ও সহায়তা পেলে গাড়িটি বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করার ইচ্ছাও আছে বলে জানান আলম।