কোভিড-১৯ নিয়ে পিতা-পুত্রের সংলাপ : এক সুন্দর সকালের অপেক্ষায়
মোঃ হাবিবুর রহমান, লেখক ও গবেষক, প্রেসবাংলা২৪ডটকম: শহর অনেকটা নিস্তব্ধ, কোলাহলমুক্ত ও যানজট বিহীন। এমন শহরের কথা কখনো কল্পনা করা হয়নি। আজ কাল রুম্মান-এর অফিস টাইম আগের মত না থাকলেও বাইরে বের হলে মৃত্যু ও সংক্রমিত হওয়ার ভয় থাকে । অন্যদিকে তাঁর আদরের সন্তান রুহান তাঁকে বাসায় পেয়ে মহা খুশি। যদিও রুহানের বাবা তার পরিবার ও তাঁর ছেলের ভবিষৎ নিয়ে ক্ষণিকটা চিন্তিত। তাছাড়া বাবাকে বাসায় পেয়ে তাঁর ছেলেটি পূর্বের তুলনায় প্রশ্ন করার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। সে বলল, বাবা শোন! পৃথিবী আজ এত অশান্ত ও অসুস্থ কেন? আমরা কি অতি মাত্রায় পৃথিবী ও পরিবেশের প্রতি অন্যায় করে ফেলেছি? না কি এ সকল বিষয়ের নিয়ন্ত্রক ও স্রষ্টা আমাদের ওপর অসন্তুষ্ট? না কি এটা কি কেউ আমাদের ওপর ছাঁপিয়ে দিয়েছে? এ বিপদকালিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে আমরা কি যথেষ্ট পরিমাণে প্রস্তুত আছি? আমাদের উৎসব পালন ও স্বাভাবিক জীবনে কবে ফিরে যাব?
রুম্মান আজ তাঁর ছেলের প্রশ্ন শোনে রীতিমত অবাক ও বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে রইল। এত দিন রুহান- এর প্রশ্ন সহজ, বোধগম্য ও উত্তরযোগ্য হলেও এ সকল প্রশ্নাবলী তাঁর কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিল। তিনি বললেন, জানি! আজকের উত্তর না ফেলে তুমি পড়ার টেবিলে পড়া ও অন্যান্য স্বাভাবিক কাজ করবে না। শোন খোকা! এক মহামারী করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এসে আমাদের এ ধরণীকে অস্থিশীল ও ওলট পালট করে দিয়েছে। পৃথিবী নামক গ্রহটির বিভিন্ন কার্যক্রমও আজ থমকে দাঁড়িয়েছে। আমাদের সব কাজ- কর্ম, ব্যবসা- বাণিজ্য, ও স্বাভাবিক বিষয়গুলো ঠিকমত ছলছে না। অতিত আজ আমাদের কাছে অলিক ও স্বপিল মনে হচ্ছে।
আমরা মনে হয় পৃথিবী ও পরিবেশ থেকে আমরা যে অনুগ্রহ এবং বিশেষ সুবিধা ভোগ করেছি সে তুলনায় আমরা এটার প্রতি অতি মাত্রায় নির্দয়, নিষ্ঠুর ও অমানবিক। মানুষের লোভ লালসা, হিংসা, বিদ্বেষ, ও অহংকারের মধ্যে ভারসাম্য ও এড়িয়ে চলার দরকার ছিল। তুমি কি লক্ষ্য করেছো, বাইরের পরিবেশ কত সুন্দর, নির্মল, স্বাভাবিক এবং পাখির ডাক পূর্বের তুলনায় বেশি শোনা যায়। দুষণের মাত্রা কমে গেছে এবং নিত্য নতুন সাঁজে সেঁজেছে আমাদের এ বসুন্ধরা। স্বাভাবিক অবস্থায় এমটা হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। দাঁত থাকতে আমরা দাঁতের মর্ম বুঝিনা।
এ মহাবিশ্বের স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রক আমাদের কাজে ও কর্মে অসন্তুষ্ট হতে পারে। সেটা অস্বাভাবিক না। তুমি যেমন তোমার শিক্ষকের হোম ওয়ার্ক ও আমাদের কথা না শুনলে যেমন মনে কষ্ট পাই। এটাও ঠিক অনেকটা তেমন। আমরা যে তাঁর কথা শোনছি না তা আমাদের অতিত ও বর্তমানের ঘটনা বিশ্লেষণ করলেই বুঝতে পারবে। দেখ আজ যুদ্ধ ও বিগ্রহ কমে গেছে। তবে সময় আছে আমাদের শোধরে নেয়ার। কারণ তিনি আমাদের খুব ভালবেসে এ বসূধায় পাঠিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি আমাদের সৃষ্টির সেরা করেছেন। এ থেকে মুক্তি পেতে তাঁর কাছে একনিষ্ঠভাবে ক্ষমা চাইতে হবে এবং পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে হবে । মানবতা ও বিশ্ব শান্তির জন্যে কাজ করতে হবে।
আমরা এ বসুমতীতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও আন্তঃসম্পর্ক বজায় রাখার জন্যে অন্য রাষ্ট্রের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছি। মুক্ত বাজার অর্থনীতি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কারণে পৃথিবীর অন্য দেশের ভাল মন্দ আমাদের স্পর্শ করে। আর সেটা যদি হয় অচেনা শ্রত্রু ও ভাইরাস, তাহলে তো আর চিন্তার অন্ত নেই। এ সমস্যা আমাদের ওপর কেউ ছাঁপিয়ে দেয়া নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। তবে এ সমস্যা এখন বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। সময় এসেছে সম্মিলিতভাবে কাজ করার ও এ থেকে পরিত্রাণের জন্য ভেকসিন ও প্রতিষেধক আবিষ্কার করা।
এ মহামারী থেকে পরিত্রাণ ও তা মোকাবেলা করার জন্যে আমাদের কোন সামর্থ নেই। কারণ আমরা পর্যাপ্ত সময় পেলেও বিমানবন্দর, বিদেশগামী ও ফেরৎ ব্যক্তিদের আলাদা করতে পারেনি। ফলত, প্রতিকারই প্রতিরোধ অন্যতম মাধ্যম হতে পারে। তবে সচেতনতা, পারস্পারিক সহানুভূতি প্রদর্শন, সামাজিক দূরত্ব, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড-১৯ নিয়ে দিক নির্দেশনা, সরকার ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মাবলী ও বাধ্যবাধকতা মেনে চলা, চলমান লকডাউন জারি রাখা, হোম কোয়ারেন্টাইন ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশন চালিয়ে যাওয়া এবং ভেকসিন ও প্রতিষেধক আবিষ্কার করার চেষ্টা অব্যাহত রাখা। গ্রামীণ ও শহরের অর্থনীতির গতি সচল রাখতে হবে।
আমাদের গতানুগতিক উৎসব পালন ও স্বাভাবিক জীবনে কবে ফিরে যেতে সময় লাগবে এবং কখন ফিরবো তা আমাদের জানা নেই। তবে মানুষ কখনো হার মানে না এবং টিকে থাকার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। তার পদচারণা ও গবেষণার কারণে পৃথিবী সুন্দর হয়ে উঠেছে। কিছু মহামারী যেমন ছোটপক্স, প্লেগ, হলুদ জ্বর, ফ্লু, পোলিও, এইডস (এইচআইভি), সার্স (সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিনড্রম), এইচওয়ান এনওয়ান ফ্লু, কলেরা, ইবোলা হমরজিক ফিভার, জিকা ভাইরাস ইত্যাদি পৃথিবীতে হানা দিয়েছিল। মানব সমাজ তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্যে বিভিন্ন ভেকসিন ও প্রতিষেধক আবিষ্কার করেছে। যেমন দেখ আগে মানুষ যোগাযোগ করতো চিঠি লিখে ও অন্য পন্থায়। কিন্তু বতর্মানে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও প্রযুক্তির উন্নতির কারণে এ পদ্ধতির উন্নত ঘটেছে। যেমন মুঠোফোন, টেলিফোন (টিএনটি), বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইন্টারনেট ও ভিডিও কলের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করছে। এ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্যে মানুষকে পর্যালোচনা ও গবেষণার মাধ্যমে অনেক সময় ব্যয় করে আজকের অবস্থানে এসেছে। মহাবিশ্ব এক অফার রহস্যময়। মানুষ প্রতিনিয়ত এটা নিয়ে গবেষণা করে চলছে। সুতরাং এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যে ধৈর্য ও গবেষণার মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
পৃথিবী এক বৈচিত্রময় ও অপার রহস্যময়। মানুষ এ মহাজগৎ ও পৃথিবী নিয়ে প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন চিন্তার বহিঃ প্রকাশ করছে। স্রোত যেমন বয়ে চলে তেমনি মানুষও তার গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্যে অভিরাম ছুটে ছলছে। যদিও আজকে এ সকল স্বপ্ন ও বাস্তবতা কিছুটা মলিন হয়ে গেছে। গত একশ বছরের ইতিহাসে বড় ধরনের মহামারী পরিলক্ষিত হয়নি যেখানে বিশ্বকে হিমশিম খেতে হয়েছে। ভালবাসা,পরোপকারিতা, ও সহমর্মিতা প্রদর্শন, ভেকসিন ও প্রতিষেধক আবিষ্কার, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার মাধ্যমে আমরা এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে পারি। তোমাকে নিয়ে এক সুন্দর সকালের অপেক্ষায় রইলাম যেখানে তুমিসহ ও আমরা সবাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবো।