শিক্ষিত জীবাণু থেকে শিক্ষা : ড. জেবউননেছা

 

শিক্ষিত জীবানু থেকে শিক্ষা
ড. জেবউননেছা

 

আহারে,
ধুলো পড়েছে শখের লাল নীল চুড়ির আলনায়
টিপের বাক্সগুলো পড়ে আছে নিথর হয়ে।
শাড়িগুলো নিষ্প্রাণ হয়ে ভাঁজে ভাঁজে পড়ে আছে।
নিত্য ব্যবহৃত হাতঘড়িটা নীরবে তার মিনিট ঘন্টা সেকেন্ড পাড় করছে।
তাদের সুনশান নিরবতা দেখে মন খারাপ হয়।
ভীষণ ভাবায়।
পরক্ষনেই ভাবি
শাড়ি, চুড়ি,টিপ, হাত ঘড়ি এগুলো তো অতি সাধারণ
ওদিকে বিশ্বখ্যাত ব্রান্ডের গাড়ি
অভিজাত বাড়ি,দামি শপিংমল
ফুড কোর্ট,পাঁচতারা হোটেল, টাকা রাখার সিন্দুক।
সব মুখ থুবড়ে পড়ে আছে
শুনেছি এই জীবাণু নাকি টাকাতেও চার দিন বেঁচে থাকে।
এত প্রিয় বস্তু  ‘টাকা’ তা ও আজ অপ্রিয়।
এখন শুধু আরাধনা বেঁচে থাকার।
বন্দী জীবনের নোনাজলে ভাসছে অপূর্ণ স্বপ্নগুলো।
এ যেন মরে যাবার আগেই মরে যাওয়ার স্বাদ গ্রহণ করা।

 

তাই যদি হয়
তাহলে
নিঃস্বের রিজিকের চাল,তেল লুকিয়ে রাখায় কি মাহাত্ম্য।
আচ্ছা কি করে তারা বুঝতে পারল,তারা ও এই ফাঁদে পড়বেনা?
ছেলে বাবার লাশ গ্রহণ করেনা
সন্তানেরা মাকে জংগলে ফেলে দেয়
মনে প্রশ্ন আসে
এরকম অমানবিক সমাজ কি একদিনে তৈরী হয়েছে?
না একদিনে হয়নি
ইটের পর ইটের বাড়িতে থেকে থেকে
যৌথ পরিবার থেকে একক পরিবারে যেতে যেতে
সবার হাতে একটি করে এন্ড্র‍য়েড মুঠোফোন থাকতে থাকতে
কেমন যেন যন্ত্র হয়ে গিয়েছি আমরা।
কিইবা আছে পদ্ম পাতার জলের জীবনের।
চোখ বন্ধ করলেই অনিশ্চয়তা।

 

আজকের রাতে ঘুমিয়ে পরদিন চোখ খুলে সকাল দেখা এখন এক একটা জন্মদিনের মতো।
এখন প্রতিদিনই আমাদের জন্মদিন।
একেবারেই অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে সবাই আজ তাকিয়ে আছি।

 

মাঝে মাঝে মনে হয় এই তাকিয়ে থাকা চোরাবালির দিকে তাকিয়ে থাকা নয়ত!
কোথায় কোথায় সেসব ক্ষমতাবানেরা?
যারা একমুঠোতে আনতে চেয়েছিল বিশ্বকে?
নাফিসাদের বন্দী করে রাখা শক্তিশালীরাই আজ ঘরবন্দী।

 

তথাকথিত বর্ণবাদী, জ্ঞানপাপীদের মুখে কুলুপ এটে দিয়েছে এক শিক্ষিত জীবাণু।
যে জীবাণু পুরো বিশ্বকে শিখিয়ে পড়িয়ে দিয়ে গেল
মারনাস্ত্র, যুদ্ধ, দুর্নীতি, লুটপাট, গীবত না করেও জীবনটা নিয়ে টিকে থাকা যায়।।।।।।
শুনেছি, এই শিক্ষিত জীবাণু নাকি আর ও বছর খানেক থাকবে।

 

আচ্ছা যদি সে থেকেই যায়
তাহলে এর মধ্যে না হয় নেমে আসুক বিশ্বশান্তি।
বন্ধ হয়ে যাক ততক্ষনে হানাহানি
আর না হয় তনু,ফেলানি,ইয়াসমিনেরা অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে বিদায় না নিক।
নাফিসারা মুক্তিলাভ করুক।
আমি ভীষণ আশাবাদী,
এই জীবাণুর বিদায় নিয়ে।
সে চলে যাবে শীগ্রই।
আশায় বুক বেঁধে শপথ হউক আমাদের
জীবন যাবে জীবনের মতই
জীবনকে যেন জোর না করি।
তাকে যেন নদীতে সাঁতার কাটার সময় দেই।।।।
তাকে যেন প্রতিদিন একবার করে হলেও নীল আকাশ দেখার সময় দেই
পূর্ণিমা উপভোগের সময় দেই
পাহাড়ের স্থিরতা, সাগরের উচ্ছলতা দেখার সময় দেই।

 

একটি ভোর দেখার সময় দেই।
হ্যা, জীবনকে যেন সময় দেই।।

 

 

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com