প্রসঙ্গ প্রিয়া সাহা ও তার নীচতা :

ড. জেবউন নেছা, প্রেসবাংলা২৪ডটকম:
ঘটনা -১
গত ১১.৭.১৯ ইং তারিখে নারায়ণগঞ্জ থেকে ২.৩০ মিনিটে বের হয়েছিলাম তাড়াতাড়ি মোঃপুরে আসিরের ৪.৩০ মিনিটের কোচিং ধরব বলে, যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভার পেরুনোর পরেই দেখলাম শত শত গাড়ির জ্যাম।গাড়ি ঘুরিয়ে দোয়েল চত্বরের দিকে যেতে দেখি পুলিশ গাড়ি আটকে রেখেছে,আর ও এক ঘন্টা আগে থেকে।ঘটনা কি জানতে চাইলে এক পুলিশ ট্রাফিক জানালেন,রথযাত্রা আসছে ঢাকেশ্বরী থেকে এজন্য চারিদিকে রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়েছে রথযাত্রা যেন সুন্দরভাবে পালন করতে পারে।দীর্ঘ এক ঘন্টা পেরিয়ে কোচিং এ গেলাম ৬.০০ টায়।এতটুকু বিরক্ত ও হইনি।কারণ,এই সম্প্রীতি দেখেই বড় হয়েছি।বরং আনন্দ হিসেবে নিয়েছি।
স্মৃতি-১
নারায়ণগঞ্জে আমার বাড়ি।সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জেলা।বিভিন্ন পূজা পার্বনে নারায়ণগঞ্জ হয় আনন্দের নগর।দশমীর দিন সারা রাস্তা বন্ধ থাকে এবং নারায়ণগঞ্জবাসি হাসিমুখে সেই আনন্দ উদযাপন করে।সেই উদযাপনের আমিও একজন অংশিদার শৈশব থেকে।
স্মৃতি-২
তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে থাকি।রুমমেট একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী।সে তার বাড়িতে সেবার পূজাতে যেতে পারিনি।আমি তাকে নারায়ণগঞ্জ নিয়ে যাই এবং আমাদের বাড়িতে রেখে বিভিন্ন পূজা মন্ডপে ঘুরাই।তাছাড়া,জন্মস্থান নারায়ণগঞ্জে প্রতিদিন সন্ধ্যায় মসজিদের আযান এবং ঘন্টার শব্দ শুনে বড় হয়েছি।অসাধারণ সম্পর্ক আমাদের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সাথে।
পর্যবেক্ষণ:
আব্বুর কবিতায় শিখেছি
“বাংলাদেশের হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রীষ্টান
মোরা সমানে সমান
খুজি বাংলার মান”।
আমার এই বাংলাদেশকে প্রিয়া সাহা যেভাবে তুলে ধরল,সে আসলে কি চায়?
সে কি চায় আমেরিকায় নাগরিকত্ব?
সে কি চায় বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রে হানাহানি?
সে কি বাংলাদেশের শত্রু
সে কি জানেনা, বাংলাদেশের মানুষ,ধর্ম যার যার,উৎসব সবার”এই শ্লোগানে একসাথে হাসিমুখে দিন যাপন করে? এই প্রিয়া সাহা,নিশ্চিত বাংলাদেশি নয়,তার শেকড়ের সন্ধান করা হউক।তার এক পা,বাংলাদেশের আর এক পা কোথায়? সে খায় কোথায়,আর ঢেঁকুর তুলে কোথায়? সে নিজেকে অনগ্রসর প্রমান করে কি বুঝাতে চাইল?
প্রিয়া সাহা,
আমি জানতে চাই, আপনার পূর্ব পুরুষ কি এই বাংলাদেশের। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে কিভাবে আমার বাংলাদেশের কথা আপনি বিদেশে গিয়ে বললেন? এই বাংলাদেশের নির্মল বায়ু আর জল যদি আপনার শ্বাস প্রশ্বাসে থেকে থাকে, তাহলে আপনি কি করে আমার বাংলাদেশের বদনাম করে আসলেন? আপনি জানেননা, লক্ষ লক্ষ মুসলিম শরনার্থী আজ বাংলাদেশে অত্যাচারিত হয়ে আশ্রয় নিয়েছে তা কি কোন মুসলিমের অত্যাচারে?
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে যখন “তলাবিহীন ঝুড়ি’র বদনাম থেকে উপরে উঠাচ্ছেন,তখন এই নীচতা কি করে আপনি করলেন? যদি রাষ্ট্রীয় আইনে এমন কোন ধারা থাকে, যে দেশের বিরুদ্ধে কোন বদনাম করলে তাকে আইনের আওতায় আনা যাবে,তাহলে এই প্রিয়া সাহাকে আইনের আওতায় এনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, তার পিছনে কারা আছে চিহ্নিত করা হউক।তার পূর্ব পুরুষেরা কি এই বাংলাদেশের কিনা, সেটি বের করা হউক।
বাংলাদেশ তেরোশত নদীর দেশ,ভালবাসার দেশ।বাংলাদেশ শহীদের দেশ।এই দেশে প্রিয়া সাহা এখন এক বিষফোঁড়া। যার বিষ তেতো ওষুধে নির্মুল করা প্রয়োজন।
আমি এখনো বিশ্বাস করি
আমার দেশ সম্প্রীতির দেশ।
এই বাংলাদেশের কবি মুঃ, জালাল উদ্দিন নলুয়া লিখেছেন,
“একাত্তরে গর্জে অস্ত্র সাহসী বাঙ্গালির,
জাগে হিন্দু -বৌদ্ধ- মুসলিম- খ্রিষ্টান বীর।
পতাকায় রক্ত মিশে অগণিত সাহসীর,
বাংলাদেশে রবেনা ঠাঁই কোন সন্ত্রাসীর
হবেই হবে জয় প্রগতির।”
প্রিয়া সাহা,এখনো সময় আছে,আপনার নীচতার জন্য আপনি ক্ষমা চান।নইলে ইতিহাস একদিন আপনার মুখে ছাই দিবে। প্রিয়া সাহা আমার ভাবতে ঘৃনাবোধ হচ্ছে,আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। ছি, লজ্জা করলনা, বাংলাদেশের সার্টিফিকেট বিক্রি করে খাচ্ছেন আর বাংলাদেশকে ছোট করলেন,ছি প্রিয়া সাহা,আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলংক, বিষফোঁড়া। আমার ভাবতে অবাক লাগছে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের ছাত্রী হয়ে ও এমন নীচতা করেছেন। ছি প্রিয়া সাহা ছি।
প্রিয়া সাহা বাংলাদেশের সম্প্রীতির দেশে আপনি আমাদের অশান্তির বিষ ছড়িয়ে কি লাভ হলো আপনার জানিনা। শুধু জানি,এই দেশ সম্প্রীতির দেশ।সেই সম্প্রীতিতে আপনি কেন এমন করলেন? আমরাতো ভালই ছিলাম।
আমরা ভালই আছি।ভালই থাকতে চাই।
ড. জেবউন নেছা
সহযোগী অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়