এক সভাপতিতে মেয়াদপূর্ণ করলো সদর থানা আ’লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রেসবাংলা২৪.কম: ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ সহ জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক দল গুলো আগামী নির্বাচন নিয়ে ভাবছেন। ইতিমধ্যে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগকে গতিশীল করার লক্ষে মাঠ পর্যায়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়ে জেলা পর্যায় সম্মেলন শেষ করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্মেলনও শেষ হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার সাত থানার মধ্যে শুধুমাত্র নারায়ণগঞ্জ সদর থানার কমিটি ব্যতিত সকল থানা কমিটিই করেছে জেলা আওয়ামীলীগ। ২০১৯ সালে দীর্ঘ ১৬ বছর পর কমিটি হলেও সদর থানার কমিটি পূর্নাঙ্গ রুপ দিতে পারেনি নেতৃবৃন্দ। সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক পদ ঘোষনা করে পরবর্তিতে পূর্নাঙ্গ কমিটি করার ঘোষনা আসলেও ৩ বছর শেষেও কমিটি পূর্ণতা পায়নি। এরই মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে দলীয় প্রতীকের বিরুদ্ধে কাজ করায় সাধারন সম্পাদককে অব্যাহতি দেয়া হলে ২ জনের কমিটি ১ জনে রুপ নেয়।
২০১৯ সনে সদর থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান নাজির মাদবর এবং সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন আব্দুল্লাহ আল মামুন। গত বছরের গোগনগর ইউনিয়ন নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকার বিপক্ষে কাজ করা সহ নৌকা নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করায় তাকে দলের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এর পরে ওই পদ শুন্য থাকে। যা এখনো পুরণ হয় নাই। এছাড়া ইতোমধ্যে এই থানার কমিটি পূর্ণাঙ্গ হওয়ার আগেই তার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাই তৃনমূল নেতা কর্মীরা শীঘ্রই নতুন কমিটির জন্য জেলার শীর্ষ নেতৃবৃন্দের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের অন্যান্য থানা গুলোতে কমিটি থাকলেও সদর থানায় কোন আওয়ামীলীগের কমিটি নেই। আর এতে করে এখানে নামকাওয়াস্তে দলীয় কার্যক্রম চলে। ১৬ বছর পর ২০১৯ সনের ডিসেম্বর মাসে সদর থানা আওয়ামীলীগের সম্মেলন হয়। ডিসেম্বরে এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। তৃনমূল নেতা কর্মীদের অভিযোগ ১৬ বছর পর এখানে সম্মেলন হলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় নতুন নেতৃত্ব তৈরী হচ্ছে না।
অপর দিকে বর্তমান সভাপতি নাজির মাদবরও শারীরিক ভাবে দূর্বল হয়ে পরছে। নেতৃত্ব না থাকায় এখানে আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমে ভাটা পরেছে। আর যদি এই ভাবে চলতে থাকে তাহলে আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব পরবে বলে মনে করে তৃনমূল নেতৃবৃন্দ।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, সদর থানা আওয়ামীলীগের নতুন নেতৃত্বে আসার জন্য ইতিমধ্যে একঝাঁক তরুন মাঠে রয়েছেন। তারা দলীয় কার্যক্রম নিজ নিজ ঘরানার নেতাকর্মী নিয়ে করে যাচ্ছেন। পদ পদবী না থাকায় তাদের কার্যক্রমে মাঝে মাঝে ভাটা পরছে। তবুও তারা দলকে চাঙ্গা করার জন্য দলীয় নানা কর্মসূচি ও জাতীয় দিবসগুলো ঝাঁকজমকপূর্ন ভাবে করে চলছেন।
সভাপতি পদে আসতে দীর্ঘ দিন ধরেই মাঠে রয়েছেন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, তরুন সমাজসেবক, করোনাকালীন সময়ে সদর থানার এলাকার মানুষের মাঝে ব্যাপক ত্রান কার্যক্রম পরিচালনা করে আলোচিত, গোগনগর ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি ইব্রাহিম মোল্লা। তিনি এর আগে ২০১৯ সালেও সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। নাজির মাদবর প্রবীন নেতা হওয়ায় সমঝোতার মাধ্যমে ইব্রাহিম মোল্লাকে আগামী বার নেতৃত্ব দেয়ার আশ^াস দিয়ে জেলার শীর্ষ নেতৃবৃন্দ তাকে প্রস্তুতি নেয়ার জন্য বলেন। তার সাথে প্রতিযোগী হিসেবে রয়েছেন সদর থানা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এসটি আলমগীর সরকার। এছাড়া সাধারন সম্পাদক পদ প্রত্যআী গোগনগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম, জসিম রয়েছেন।
গোগনগর ও আলীরটেক ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা কর্মীদের দাবী তারা ইব্রাহিম মোল্লাকে সভাপতি হিসেবে পেতে চান। কেননা তিনি দলীয় নেতা কর্মীদের বিপদে আপদে ঝাঁপিয়ে পরেন। সেই সাথে তৃনমূল পর্যায়ের নেতা কর্মীদের খোঁজ খবর রাখেন। এর আগেও গত বছরের কাউন্সিলে তিনি সদর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি পদে প্রার্থী ছিলেন। তখন অদৃশ্য ইশারায় তাকে বসে পরতে হয়। তবে এবার আট ঘাট বেধে মাঠে নেমেছেন ইব্রাহীম মোল্লা।
পাশাপাশি তার সাথে পিছিয়ে নেই আরেক সভাপতি প্রার্থী সদর যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এসটি আলমগীর সরকার। তিনি সাংগঠনিক ভাবে দলের জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহিদ বাদল বলেন, সদর থানা সাধারণ সম্পাদক আল মামনুকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এখানকার পূর্ণাঙ্গ কমিটি এবং থানা কমিটির বিষয়ে জেলা সভাপতি আব্দুল হাই সাব বলতে পারবেন। তার সাথে যোগাযোগ করেন।
এবিষয়ে আবদুল হাইয়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,
সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী ইব্রাহীম মোল্লা বলেন, আমি বর্তমানে গোগনগর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি এবং জেলা যুবলীগের সদস্য পদে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। কমিটিবিহীন থাকায় সদর থানা আওয়ামীলীগ হযবরল হয়ে আছে। তাছাড়া এখানে এক বছর অতিবাহিত হলো অথচ সাধারণ সম্পাদক শূন্যপদে এখনো পুরন হয় নাই। তার চেয়ে বড় বিষয়ে হলো এখানকার কমিটির মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে আছে। তাই তৃনমূল নেতা কর্মীদের থেকে নতুন কমিটির দাবী উঠেছে। সেখানে আমি দলের সভাপতি পদে প্রার্থী হিসেবে আছি। নেতা কর্মীরা আমাকে যোগ্য হিসেবে এই পদে দায়িত্ব দিবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তাছাড়া আমাদের যুবলীগের কমিটি গঠনের প্রস্তুতি চলছে।
আরেক সভাপতি প্রার্থী এসটি আলমগীর সরকার বলেন, আমরা দীর্ঘ দিন যাবৎ সদর থানা আওয়ামী লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি দেয়ার দাবী জানিয়েছি। কিন্তু পুর্ণাঙ্গ কমিটির হওয়ার আগে আমাদের সদর থানার সাধারণ সম্পাদক আল মামুনকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ায় এই পদ শূন্য হয়ে আছে। এছাড়া ইতোমধ্যে সদর থানার কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে আছে। তাই আমরা সব কিছু মিলিয়ে সদর থানা আওয়ামী লীগে নতুৃন কমিটি চাই। কেননা আগামী নির্বাচনের জন্য নতুন করে শক্তিশালী কমিটি দেয়া প্রয়োজন। তাছাড়া সদর থানা যুবলীগে দক্ষতার সাথে আমি দায়িত্ব পালন করেছি।