শওকত আলীর কারিশমায় বক্তাবলী ইউনিয়ন আ’লীগের সম্মেলন স্থগিত
বিশেষ প্রতিবেদক, প্রেসবাংলা২৪.কম: নিজের প্রভাব ঠিক রাখতে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার বক্তাবলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থগিত করার পেছনে মুল ভূমিকা পালন করেছেন ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম শওকত আলী। দুই পক্ষ যখন বাক বিতন্ডায় জড়িয়ে পরে। তখন পরিস্থিতি শান্ত না করে উল্টো একটি পক্ষের সমর্থনে মাইকে উত্তেজিত বক্তব্য দিয়ে আগুনে ঘি ঢালেন এম শওকত আলী।
#পছন্দের প্রার্থীদের ভরাডুবি রক্ষায় রাখলেন ভূমিকা
#দোষ করলেন এক পক্ষ দোষী বানালেন আরেক পক্ষকে
#তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্মেলন স্থগিত
দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর পর অনেক নাটকীয়তায় বক্তাবলী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সম্মেলনের ঘোষণা করে ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগ। শনিবার (২৬ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত বহুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বহুল প্রত্যাশীত সম্মেলন শুধু মাত্র বাক বিতন্ডার জেড়ে স্থগিত ঘোষনা করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালে সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ইউনিয়নটির আওয়ামী লীগ নেতারা বেশ উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্যে সম্মেলনে উৎসব মুখর পরিবেশে সম্মেলন যোগ দেন। বিকাল ৩টায় শুরু হওয়া সম্মেলনে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। ফতুল্লা থানার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও এলাকা থেকে দলে দলে যোগদান করেন নেতা কর্র্মীরা। সম্মেলনে সভাপতি পদের জন্য দুইজন আবুল হোসেন প্রধান ও শফিক মাহমুদের নাম প্রস্তাব করা হয়। এবং সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য তিনজন আনোয়ার হোসেন, বাবুল মিয়া ও কামরুল ইসলামের নাম প্রস্তাব করা হয়।
সম্মেলনে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে প্রার্থী নির্বাচনে এম শওকত আলীর পছন্দের প্রার্থীদের ভরাডুবি রক্ষায় নিজের কারিশমা দেখালেন শওকত আলী। সুকৌশলে এক পক্ষকে দোষারোপ করে নিজের পক্ষকে ধোঁলা তুলসী পাতা বানালেন। তৃপ্তি ঢেঁকুর তুললেন তার সমর্থিত প্রার্থীরা এমন মন্তব্য স্থানীয় প্রবীণ আওয়ামীলীগ ও কাউন্সিলরদের।
দীর্ঘ প্রায় বিশ বছর পর অনুষ্ঠিত হয়েছে বক্তাবলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। প্রধান অতিথি, প্রধান আলোচক ও উদ্বোদকের বক্তব্যের পর সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক পদে একাদিক প্রার্থী থাকায় ও প্রার্থীদের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে বক্তাবলী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক নির্বাচনের ঘোষনা আসে। পরবর্তিতে মাগরিব নামাজের পর কাউন্সিলরদের ভোট গ্রহন শুরু হয়। মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ই ছিল এ পর্যন্ত। এর পর কাউন্সিলররা যখন ভোট দিতে যাচ্ছে তখন লাইনের সামনে দাঁড়িয়ে ভোটারদের কাছে ভোট চাইছিল সভাপতি পদ প্রার্থী আবুল হোসেন প্রধানের সমর্থক সিদ্দিক ও আমজাদ। এঘটনায় আরেক সভাপতি প্রদ প্রার্থী শফিক মাহমুদের সমর্থক দিলন প্রতিবাদ করেন। তিনি বলেন, আপনারা কাউন্সিলর না, আবার প্রার্থীও না তাহলে ভোটারদের লাইনের সামনে দাঁড়িয়ে এক জনের পক্ষে ভোট চাইতে পারবেন না। এর সাথে সাথেই সিদ্দিক, আমজাদ ও আরও অনেকেই বাক বিতন্ডায় জড়িয়ে পরেন। বাক বিতন্ডা চলাকালীন সময়ে আগুনে ঘি ঢালেন ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এম শওকত আলী। তিনি মাইকে দিলনকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে উত্তেজিত ভাষায় তাকে সম্মেলন স্থল ত্যাগ করার নির্দেশ দেন সেই সাথে তিনি মাইকে ঘোষনা করেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে দিলনকে সম্মেলন স্থল থেকে বের করে দিতে। এর পরই শুরু হয় গন্ডগোল। সবশেষে সম্মেলনের প্রধান অতিথি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মোঃ বাদল মাইকে উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, পরিবেশ পরিস্থিতি ভোটের অনুকুলে না হওয়াতে এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ায় ভোট স্থগিত করা হল। পরবর্তীতে ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক এবং নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের সাথে আলোচনা করে পরবর্তি ভোটের তারিখ জানানো হবে।
সম্মেলন স্থগিত হওয়ার পর বক্তাবলী ফেরিঘাটে সাংবাদিকদের এম শওকত আলী বলেন, ‘সভাপতি প্রার্থী শফিক মাহমুদ নিশ্চিত পরাজয় জেনে এখানে মূখ্য ভূমিকা পালন করেছে। তাঁর অনুসারীদের দিয়ে কাজ গুলো করিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতারা ঘটনার বিবরনী জানান, নারায়ণগঞ্জ -৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম সাইফুল্লাহ বাদল ও সাধারন সম্পাদক এম শওকত আলীকে জানিয়ে দেন আবুল হোসেন প্রধান ও মুহাম্মদ আনোয়ার হুসাইনকে সভাপতি সম্পাদক ঘোষনা করে কমিটি দেয়ার জন্য। এতে নাখোশ ছিলেন, এম শওকত আলী। শওকত আলী চাচ্ছিলেন আবুল হোসেন প্রধানকে সভাপতি ও বাবুল মিয়াকে সাধারন সম্পাদক করতে। যাতে করে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগে তার একক কর্তত্ব বহাল থাকে। সে মোতাবেক এম শওকত আলী ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম সাইফুল্লাহ বাদল ও এমপি শামীম ওসমানকে রাজী করান। কিন্তু বিপত্তি বাধে সভাপতি পদে তিনজন ও সাধারন সম্পাদক পদে তিন জন প্রার্থী অনড় থাকেন ভোটের মাধ্যমে পরবর্তি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক মনোনীত হউক। যখন ভোট শুরু হয় এম শওকত আলী বুঝতে পারেন, শফিক মাহমুদ ও মুহাম্মদ আনোয়ার হুসাইন জয়ী হতে চলছেন। তখন তিনি চাইছিলেন সম্মেলন ঠেকাতে। এরই মধ্যে সাপে বর হয়ে দাঁড়ায় আবুল হোসেন প্রধানের সমর্থক (মুলত চেয়ারম্যানের সমর্থক) সিদ্দিক, আমজাদ ও শফিক মাহমুদের সর্মথক দিলনের বাক বিতন্ডা। বিচক্ষন ও দীর্ঘ দিন রাজনীতি করে আসা শওকত আলী সুযোগের সঠিক ব্যবহার করতে বিন্দু মাত্র ভুল করলেন না। তিনি সাথে সাথে মাইকে উত্তেজিত ভাষায় দিলনকে দোষারোপ শুরু করে দিলেন। সেই সাথে তার সমর্থকরাও উৎসাহ উদ্দীপনায় উত্তেজনায় ঘি ডাললেন হৈ-চৈ বাড়িয়ে দিয়ে। বের করে দেওয়া হলো শফিক সমর্থকদের। তারাও লোকজন বাড়িয়ে এনে চিৎকার, চেচামেচি করে সম্মেলন স্থলের পরিবেশ অশান্ত করে তুললেন। ব্যস, এম শওকত আলী সফল। এখন তিনি, এমপি শামীম ওসমান এবং জেলা ও থানার নেতৃবৃন্দকে বুঝাবেন এশটি পক্ষ খুব খারাপ কাজ করেছে, সম্মেলন স্থলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে সম্মেলন স্থগিত করিয়েছে। কিন্তু মুল নাটের গুরু এম শওকত আলী তা জানালেন কাউন্সিলরাই। কাউন্সিলররা জানান, ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হলে শওকত আলীর সমর্থিত আবুল-বাবুল বাদ পরতো। তাই সে সামান্য ঘটনাকে পুঁজি করে সম্মেলন স্থগিত করালেন। যাতে করে তার মনোনীত প্রার্থীকে সে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক বানাতে পারেন। সম্মেলনে দুই জন প্রার্থীর পক্ষের সমর্থক বাত বিতন্ডায় জড়িত হয়েছে। কোন হামলা বা মারামারি এমনকি ভাঙচুরেরও কোন ঘটনা না ঘটলেও সম্মেলন না করতে পারাটা হতাশাজনক বলে মন্তব্য করলেন কাউন্সিলরা।
এবিষয়ে মোবাইল ফোনে এম শওকত আলীর কাছে জানতে চাইলে, তিনি দ্বি-মত পোষন করেন। এবং বলেন, পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য তিনি মাইকে বারবার বলেছেন। এবিষয়ে তিনি সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের থেকেও জানতে বলেন। আপনি মাইকে একটি পক্ষের বিরুদ্ধে আক্রমনাত্বক বক্তব্য দিয়েছেন উভয় পক্ষকে শান্ত করলেন না কেন। তিনি বক্তব্যের কথা স্বীকার করে ফোনটি কেটে দেন।
তবে সম্মেলন স্থগিত হওয়ার পর বক্তাবলী ফেরিঘাটে সাংবাদিকদের এম শওকত আলী বলেন, ‘সভাপতি প্রার্থী শফিক মাহমুদ নিশ্চিত পরাজয় জেনে এখানে মূখ্য ভূমিকা পালন করেছে। তাঁর অনুসারীদের দিয়ে কাজ গুলো করিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সম্মেলন ভালোই চলছিল। কিন্তু একটি পক্ষের উচ্ছৃঙ্খলতায় এবং দিনের সম্মেলন রাত হয়ে যাওয়ায় স্থগিত করা হয়েছে। এখানে বড় ধরণের অঘটন ঘটতে পারতো। উচ্ছৃঙ্খলকারীরা খুব বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। পরে আমরা চিন্তা ভাবনা করে স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও সংসদ সদস্যের সাথে বসে পরবর্তীতে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করবো। কিন্তু কাউকে উচ্ছৃঙ্খল কিছু করতে দিবো না।