জেলা আ’লীগের সম্মেলন ঘিরে চলছে লবিং
স্টাফ রিপোটর্টার, প্রেসবাংলা২৪.কম: আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দলের জাতীয় সম্মেলন করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেন্দ্রীয় নির্দেশের প্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের সম্মেলনের তারিখও ঘোষনা করেছে দলটি। দুই কমিটির বর্ধিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৩ অক্টোবর জেলা আওয়ামীলীগের এবং ২৫ অক্টোবর মহানগর আওয়ামীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। দুই সম্মেলনকে সফল করতে দুই কমিটিই মাঠে নেমে পড়েছেন।
আওয়ামীলীগ সুত্র জানাচ্ছে, আভ্যন্তরিন কোন্দল ও মত পার্থক্যের মধ্য দিয়েই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি। জেলা আওয়ামীলীগ পুরণ করতে পারেনি শূন্য ৬ পদ। অভিযোগ রয়েছে, ভাগাভাগির কারণে পদগুলো পুরন হয়নি। ফলে তৃণমূলে নানা আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে বর্তমান কমিটি নিয়ে। গত ৫ বছরে উল্লেখ করার মতো সাংগঠনিক কোন কর্মকান্ড দেখাতে পারেনি জেলা আওয়ামীলীগ। এ নিয়ে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে আব্দুল হাই ও ভিপি বাদলের নেতৃত্বাধীন জেলা আওয়ামীলীগ।
বিভিন্ন সময়ে জেলা আওয়ামীলীগের বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে নানা ইস্যুতে। দুই ধারায় বিভক্ত জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ একাধিক নেতা পত্রিকার শিরোনাম হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনের বাতাস বইতে শুরু করেছে নেতাকর্মীদের মাঝে। ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সম্মেলনের আগেই অনুষ্ঠিত হবে জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন। আর সেটা হবে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে। ফলে আগামী সম্মেলনে কারা আসছে জেলা আওয়ামীলীগের নতুন নেতৃত্বে এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। এদিকে সম্মেলন ঘিরে পদ প্রত্যাশী নেতারা কেন্দ্রীয় নেতাদের আস্থা অর্জনের প্রচেষ্টায় মাঠে নেমে পড়েছেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগও জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে কারা আসবেন সেই সকল নেতাদের নানাভাবে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন বলে জানা যায়।
নারায়ণগঞ্জ জেলার সর্বশেষ কাউন্সিল হয় ১৯৯৭ সালের ২০ ডিসেম্বর। অধ্যাপিকা নাজমা রহমান সভাপতি ও এমপি শামীম ওসমান সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। এর পর ২০০২ সালের ২৭ মার্চ নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এস এম আকরামকে আহ্বায়ক করে কেন্দ্র থেকে ৬১ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি করে দেওয়া হয়। পরে ২০১১ সালে নাসিক নির্বাচনের পর আকষ্মিকভাবে আহ্বায়কের পদ থেকে এস এম আকরাম পদত্যাগ করে যুক্ত হন নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে। পরে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয় যুগ্ম-আহ্বায়ক মফিজুল ইসলামকে। কিন্তু ২০১৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী মফিজুল ইসলাম মারা যান। ফলে দীর্ঘ ১৪ বছর জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি উপহার দিতে পারেনি এস এম আকরাম ও মফিজুল ইসলাম। মফিজুল ইসলামের মৃত্যুর পর দুই বছর আট মাস নেতৃত্ববিহীন থাকে জেলা আওয়ামীলীগ।
পরে ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের তৎকালীন প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইকে সভাপতি এবং সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও এড. আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদলকে সাধারণ সম্পাদক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট জেলা আওয়ামীলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। এর ১৩ মাস পর ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর ৬টি পদ শূন্য রেখে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ৭৪ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। কিন্তু ৫ বছরেও পূরণ হয়নি শূণ্য পদগুলো। অভিযোগ রয়েছে, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে ৬টি পদ ভাগাভাগি নিয়ে শেষ পর্যন্ত তার আর পুরণ হয়নি। এদিকে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা আওয়ামীলীগ সম্পন্ন করেছে, রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার, বন্দর, ফতুল্লা ও সর্বশেষ সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন। বাকী রয়েছে নারায়ণগঞ্জ সদর থানা আওয়ামীলীগের সম্মেলন।
শুরু থেকে অদ্যাবধি এক হতে পারেনি ৭৪ সদস্যের ঘোষিত জেলা কমিটি। জেলা আওয়ামীলীগের ব্যানারে নারায়ণগঞ্জে আগমন ঘটেনি কোন কেন্দ্রীয় নেতার। বরং প্রকাশ্যে দুই ধারায় বিভক্ত জেলা আওয়ামীলীগ নানা ইস্যূতে হয়েছে সমালোচিত।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের কমিটির বর্ধিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৩ অক্টোবর জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনকে সফল করতে ইতিমধ্যে জেলা কমিটি মাঠে নেমে পড়েছেন। এতোদিনের তিক্ত সম্পর্কও কোমল করে সম্মেলন বাস্তবায়ন করতে চলেছেন নেতৃবৃন্দ। তবে পর্দার আড়ালে সম্মেলন সফল করার পাশাপাশি নেতৃত্বের প্রতিযোগিতাও শুরু হয়েছে। যে যার অবস্থান থেকে জেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতে শীর্ষ দুই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং সমর্থন আদায়ের চেষ্টা শুরু করেছেন। চলছে কেন্দ্রে লবিং।