রাজপথে আ’লীগে বিরোধ, বিএনপিতে ঐক্য
স্টাফ রিপোর্টার, প্রেসবাংলা২৪.কম: নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগ ও বিএনপির রাজনীতিতে চাঙ্গা ভাব দেখা দিয়েছে। বিএনপি মাঠে রয়েছে সরকারের কর্মকান্ডের নানা সমালোচনা নিয়ে আর আওয়ামীলীগ নিজেদের দ্বন্দ্ব নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পরেছে। এনিয়ে দুই দলের পাল্টা পাল্টি চ্যালেঞ্জ আর বক্তব্যে রাজনৈতিক মাঠ গরম হয়ে উঠেছে। আওয়ামীলীগের ব্যানারে শামীম ওসমান সমাবেশ করেছে। অন্যদিকে, আলাদা ভাবে দলীয় ব্যানারে সিটি মেয়র আইভীকে নিয়েও দলীয় কার্যালয়ে সমাবেশ করেছে জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ। বিএনপিও জেলা ও মহানগর এক্যবদ্ধভাবেই কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলায় নানা কর্মসূচি পালন করছে।
আওয়ামীলীগ নিজেরাই পাল্টা পাল্টি কর্মসূচিতে ব্যস্ত ও নিজেদের দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে সমালোচনায় মূখর হলেও বিএনপির নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবেই দলীয় কর্মসূচি পালন করছে।
তবে আওয়ামীলীগের নিজেদের বিরোধ যেন থামছেইনা। দিন দিন আরো প্রকট হতে শুরু করেছে। শামীম ওসমানের ঐক্যের ডাকে কেউ সারা দেয়নি। সকলেই নিরব ভূমিকা পালন করছে। জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতারা শামীম ওসমানের লাখো মানুষের জনসভায় যোগ দেয়নি। বরং শামীম ওসমানের জনসভাকে দলীয় নয় বলে সমালোচনা করেছে। শামীম ওসমানকে ইঙ্গিত করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ দাবি করছে তারা মাঠে আছে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে রক্ষার জন্য। কিন্তু তাদের কর্মকান্ডে দেখা যাচ্ছে উল্টো ঘটনা। দীর্ঘদিন ধরে চলা আসা আওয়ামীলীগের বলয় ভিত্তিক রাজনীতিরই পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে। দুই বলয় একে অপরকে দোষারোপ করেই সভা সমাবেশ করছে। একে অপরকে ইঙ্গিত করে নানা বক্তব্য দিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম করে রাখছে উভয় পক্ষই।
অন্যদিকে, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির ধারাবাহিকতা নিয়ে সভা, সমাবেশ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে বিএনপি।
কিছু দিন আগে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান সমাবেশ করেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। শামীম ওসমান বলেন, ওরা বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চায়। ওরা এখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারছে না। আগে অনেকদিন পর পর একজন মীরজাফর আসতো। এখন ক্ষণে ক্ষণে মীরজাফর আর খন্দকার মোশতাকেরা জন্ম নেয়। এখন সরকার না বরং দেশকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। বিএনপি খেলতায় আমি বলি খেলতে হলে আসেন ডেট দেন আমরা খেলবো।
অন্যদিকে, জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে ২ নং রেল গেইটের দলীয় কার্যালয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী বলেন, একবার হকার ইস্যুতে হকার নয় বরং কতিপয় নেতৃবৃন্দ এক বড় ভাইয়ের নির্দেশে আমার উপর হামলা করলো। আমরা ৯ জনকে আসামী করে একটা মামলা করলাম। এতেই নাকি তার মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেছে। এই মামলা আমাদের এলাকা থেকে দশ বিশ তিরিশ পঞ্চাশটা মামলা হওয়ার কথা ছিলো। আপনার ভাগ্য ভালো আপনি বেঁচে গেছেন আমরা এতোগুলো মামলা মোকদ্দমা করি নাই। আমরা বঙ্গবন্ধন্ধুর আদর্শে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মী। দেশের কাজ জনগণের কাজ করতেই আমরা ব্যস্ত থাকি। মামলা মোকদ্দমা করার কিংবা আপনাকে নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় আমাদের নাই। অনেক হুঙ্কার দিয়েছেন কিন্তু আপনার হুঙ্কারে আর কেউ ভয় পায় না। তাই এসব ছাড়ুন নয়তো ভবিষ্যতে আপনার অবস্থান আর থাকবে না।
তবে বিএনপি নেতাদের দাবি, সরকার উন্নয়নের নামে লুটপাট করে দেশকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত করেছে। তারা মিডিয়ার সামনে এসে গণতন্ত্র রক্ষার কথা বলে, অথচ মানুষের ভোটাধিকার, মৌলিক অধিকার, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিসহ জ¦ালানী তেলের অস্বাভাবিক মূল্য, অসহনীয় লোডশেডিং, গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি করে দেশের মানুষকে চুষে খাচ্ছে। সরকার উন্নয়নের নামে বিদেশে টাকা পাচার করছে যা জনগনের সামনে প্রমানিত। দেশের সাধারণ মানুষ এখন পরিবার পরিজন নিয়ে দুবেলা ঠিক মত খাবার জোগার করতে পারছে না। তাদের এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলেই প্রশাসনকে ব্যবহার করে। বর্তমান সরকার জুলুমবাজ, দুর্নীতিবাজ। আর বেশিদিন ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন না, বিদায়ের ঘন্টা বেজে গেছে পালাবার পথ পাবেন না। এদেশে ৭১ এর মত আবারো যুদ্ধ প্রয়োজন। এই যুদ্ধহবে দুর্নীতিবাজ, ভোটাধিকার হরন, মানুষের মৌলিক অধিকার হরন কারীদের বিরুদ্ধে। এবারো তাদের বোরখা পরে পালাতে হবে। তারা আরও বলেন, আপনি ডেট চেয়েছেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপনার সাথে আমাদের খেলা হবে। যে খেলার রেফারি হবে নারায়ণগঞ্জের জনগণ। যদি ফাউল করেন জনগণ আপনাকে লাল কার্ড দিয়ে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দিবে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জ সহ সারা বাংলাদেশের রাজনীতির বর্তমান অবস্থা উত্তাল। এখন দেখার বিষয় জনস্বার্থে দুই দলের আন্দোলন কতটা সফলতা আসে।