বিতর্কে পিজ্জা বার্গ নারায়ণগঞ্জ!

স্টাফ রিপোর্টার, প্রেসবাংলা২৪.কম: অফলাইন, অনলাইন বিভিন্ন মাধ্যমে সোস্যাল মিডিয়ায় খাবারের লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে বিভিন্ন রেস্তোরা। ক্রেতাকে দেয়া হয় বিভিন্ন আশ্বাস ও তাদের ব্যবসায়িক উপস্থাপনা করা হয় জমকালো ভাবে লোভনীয় বিজ্ঞাপন ও নানা আশ্বাসে আকৃষ্ট হয়ে খেতে গিয়ে দেখলেন বিজ্ঞাপনের চাকচিক্যময় সাথে মিল নেই। যে কোন ব্যবসাতেই আলোচনা সমালোচনা থাকবেই। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের একটি রেস্তোরার ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টো। ক্রেতা সমালোচনা করায় তার বিরুদ্ধেই উল্টো মানহানিকর পোষ্ট দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্রেতাকে মানহানিকর পোষ্ট। ক্রেতাকে বানিয়ে দিয়েছে অন্য রেস্তোরাঁর ভাড়া করা লোক!
এমন ঘটনাই ঘটেছে বলে অভিযোগ পিজ্জা বার্গ নারায়ণগঞ্জ নামের রেস্তোরাঁয়।
প্রতারণার শিকার সেই ক্রেতা, তাঁর মতামত প্রকাশ করেছে। এ কারণেই ক্রেতাকে সোস্যাল মিডিয়ায় ‘তৃতীয় পক্ষের লোক’ হিসেবে উপস্থাপন করেছে বলে অভিযোগ রেস্তোরা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এতে বেশ বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন বলে জানান রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে যাওয়া সেই ক্রেতা।
পিজ্জা বার্গ নারায়ণগঞ্জ এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে এ নিয়ে ২১ আগষ্ট একটি পোষ্ট দেয়া হয়। তা হুবহু তুলে ধরা হলো- ‘‘একদল অসৎ ব্যাবসায়ী আমাদের নাম নিজেদের ভাড়া করা reviewer দিয়ে মিথ্যা রিভিউ পোস্ট করছে। প্রমান নিচে দিয়ে দিলাম।
Group এর অ্যাডমিন প্যানেল এর কোনো কোনো members ও এর সাথে জড়িত বলে মনে হচ্ছে ।
সামনে আমাদের পিৎজা তে তেলাপোকা / ইঁদুর এইগুলাও পাওয়া গেলে অবাক হবো না।
আমাদের যথেষ্ট পরিমান business etiquette আছে তাই নাম মুছে দেয়া হল।”
তবে এই পোষ্টে ক্রেতাদের সমালোচনার ঝড় দেখা দিয়েছে। Fatema BhuiYan নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী এই পোষ্টে মন্তব্য করেছেন- ভাই পজেটিভ নেগেটিভ রিভিউ থাকবে। এটা নিয়ে এত মাতামাতির কি দরকার। যারা আপনাদের আইটেম পছন্দ করে তারা আপনাদের সপেই যাবে।
Ratul Raihan নামের আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী এই পোষ্টে মন্তব্য করেছেন- ফুড পান্ডায় অর্ডার করলে পিজ্জা দেন নাকি পাউরুটি দেন? এখানে রিপ্লাই করে Faria Tasnim Simu নামের আরেক জন মন্তব্য করেছেন- রাইডার অনেক সময় লেট করে। সো পিজ্জা অরিজিনিয়াল টেষ্ট পাওয়া যায় না। এন্ড সব জায়গায় সেইম পিজ্জা দেয়া হয় আমি দুই দিন আগে আনছি, গরম ছিলো কোন প্রবলেম লাগে নি।
প্লা ব ন নামের আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী এই পোষ্টে মন্তব্য করেছেন- এই ধরনের আচরন একটা ব্র্যান্ডেড রেস্টুরেন্টের মানায় না, নেগেটিভ রিভিউ নিতে শিখুন।
MD Habibur Rahman নামের আরেক জন মন্তব্য করেছেন- উনি ফেইক রিভিউয়ার নাকি রিয়েল রিভিউয়ার সেটা আমি জানি না।
তবে আপনারা যে সব সময় ভালো কোয়ালিটি দিতে পারবেন সেটাও কিন্তু না।মানলাম সব গ্রুপে আপনাদের সব পজেটিভ রিভিউ। কিন্ত ১০০ টা পিজ্জা বানালে ৩-৪ টা খারাপ হতেই পারে।তাই বলে সব ভালো হবে তা না।
আপনাদের থেকে পিজ্জা পার্সেল নিয়ে আমারো অভিজ্ঞতা খারাপ হয়েছে।স্বাদ একবারে বিস্বাদ লেগেছে।তবে পরে আপনাদের ইনবক্স করার পর আমাকে নেক্সট অডার এর জন্য ১০% ডিসকাউন্ট দিয়েছিলেন।
এখন আমি যদি নেগেটিভ রিভিউ দিতাম তাহলে এভাবে আমারো মান হানী করতেন দেখা যায়।আপনারা কি বুঝাতে চান?আপনাদের নামে নেগেটিভ রিবিউ দেয়া যাবে না?ব্যাবসা করতে হলে নেগেটিভ রিভিউ হজম করতে হবে এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে আপনারা কাস্টমার কে এভাবে পোস্ট দিয়ে ছোট করতে পারেন না। আপনারা দুধে ধোয়া তুলসি পাতা না।
Mahzabeen Labiba নামের এক ব্যবহারকারী লিখেছেন- Pizzaburg নিয়ে কিভাবে মানুষ এমন করে? ওরা বুঝে নাহ এইসব জিনিষ এর Pizzaburg যায় আসবে নাহ
যে ক্রেতাকে নিয়ে ফেসবুকে এ সমালোচনার ঝড় সেই ক্রেতার নাম সোনিয়া আক্তার। সে সরকারি তোলারাম কলেজের শিক্ষার্থী।
সোনিয়া আক্তার জানান, পিজ্জা বার্গ নারায়ণগঞ্জ খাবার নিয়ে খুবই সুন্দর উপস্থাপন করেন, বিজ্ঞাপনও উপস্থাপন করে চোখে পড়ার মতো। তাই বান্ধুবীরা মিলে সেখানে খেতে গিয়ে ছিলাম। কিন্তু যে ভাবে উপস্থাপনা ও বিজ্ঞাপন দেখেছি, সে অনুযায়ী অর্ডার করা খাবার ভালো পাওয়া যায়নি। আমি তাই খাবার নিয়ে মতামত প্রকাশ করেছিলাম। কিন্তু ‘পিজ্জা বার্গ নারায়ণগঞ্জ’ তাদের ফেসবুক পেইজে উল্টো আমার বিরুদ্ধে আক্রমন করে উপস্থাপন করেছেন। এতে আমি বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ছি। অনেকে আজে বাজে কমেন্ট করছে।
সোনিয়া প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, ‘আমার টাকা দিয়ে আমি খাবার কিনে খাবো। অথচ, আমার মতামত প্রকাশ করার অধিকার থাকবে না? তা কি করে হয়।’
অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে পিজ্জা বার্গ নারায়ণগঞ্জ এর পক্ষ থেকে আসিফ নামের এক ব্যক্তি জানান, আমাদের পিজ্জা খুবই মানসম্মত, সার্ভিসও ভালো। আমরা চেষ্টা করি ক্রেতাকে সন্তুষ্ট করতে। তারপরেও ক্রেতার অভিযোগ থাকলে তাৎক্ষণিক জানালেই সমাধান হয়ে যেতো। কিন্তু সে যে ভাবে মতামত প্রকাশ করেছে, এতে অন্যকিছু বুঝাতে চেয়েছে।’
গত কয়েক দশকে নারায়ণগঞ্জে খাবার হোটেলের চিত্র বদলে গেছে। অল্প পুজিতে অধিক লাভ হওয়ায় অলিগলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গড়ে উঠছে রেস্তোরাঁ। এ গুলোর কোনটার মান কেমন, তা না খেয়ে বোঝার উপায় নেই। এতে অনেকেই নিম্নমানের খাবার খেয়ে যেমন প্রতারিত হন, তেমনি অসুস্থ হওয়ার ঘটনারও অভিযোগ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ নিরাপদ খাদ্য অফিসার ফারজানা ইয়াসমিন সোনিয়া জানান, ‘অনেক রেস্তোরা বা খাবার দোকানী জানেই না। খাবার মান উন্নয়নের পাশাপাশি তাঁদের কি কি করণীয়। তাই অনেক সময় না জেনেই ভুল কেন। আমরা খাবার পাশাপাশি হোটেলের পরিবেশ ও কর্মচারীদের ব্যবহারের উপর একটি মার্ক দিয়ে থাকি। সেই কর্মসূচি নারায়ণগঞ্জেও শুরু হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এমন অভিযোগ কমে যাবে।