বিএনপির আন্দোলনের গতি হঠাৎ পাল্টে যেতে পারে!

বিএনপির আন্দোলনের গতি হঠাৎ পাল্টে যেতে পারে!

 

ষ্টাফ রিপোর্টার, প্রেসবাংলা২৪.কম:  নির্বাচনের আগেই সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনের ছক কষছে বিএনপি। কি হবে আন্দোলনের রূপরেখা এবং এর গতি-প্রকৃতি কি হবে তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। এ লক্ষ্যে প্রাথমিক খসড়া প্রস্তুতির কাজ চলছে। সোমবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে।

সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপের পর তা চূড়ান্ত হবে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলন এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে করণীয় নিয়ে একটি রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরবে দলটি।

রাজপথে অলআউট নামার আগেই আন্দোলনের ওয়ার্মআপ সেরে ফেলতে চায় দলটি। নেতাকর্মীদের চাঙাভাব ধরে রাখতে ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের মাঠে রাখা হবে। এ লক্ষ্যে ২২ আগস্ট থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ধারাবাহিক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকার বিরোধী মত সৃষ্টির পাশাপাশি রাজপথের আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে চায়। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় চলমান আন্দোলনের ধরন হঠাৎই পালটে যেতে পারে বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারকরা।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি আদায়ে এ ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটাতে আন্দোলনের বিকল্প নেই। আমরা সেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির কর্মসূচিতে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতি বলে দেয় আমাদের কতটা প্রস্তুতি রয়েছে। প্রতিটি কর্মসূচিতেই বাড়ছে নেতাকর্মীর উপস্থিতি।

শুধু আমরা নই, অন্যান্য রাজনৈতিক দলও সরকারবিরোধী কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে আছে। একটি সফল আন্দোলনের লক্ষ্যে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। আপাতত রাজপথে যুগপৎ আন্দোলন করতে চাই। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিসহ সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে ইতোমধ্যে যুগপৎ আন্দোলন শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে সেই পরিকল্পনায় পরিবর্তনও হতে পারে। সুনির্দিষ্ট ইস্যুতে পালটে যেতে পারে আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি। যেমন ডা. মিলন হত্যার পর এরশাদবিরোধী আন্দোলন এবং আসাদ হত্যার পর আইয়ুববিরোধী অভ্যুত্থানের গতি নতুন মোড় নেয়। আমাদের প্রাথমিক পরিকল্পনায় রয়েছে কখন আন্দোলনের গতি পরিণত রূপ নেবে। কিন্তু তার আগে যদি সেটা ম্যাচিউরড হয়ে যায় তাহলে সে সময়ই আমরা চূড়ান্ত আন্দোলনে নামব।

বিএনপির একাধিক নেতা জানান, সরকারবিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস। লোডশেডিংসহ গ্যাস সংকটে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। ডিজেল ও সারের দাম বাড়ায় কৃষক দিশেহারা। সাধারণ মানুষের এ ক্ষোভকে কাজে লাগাতে হবে। তৈরি করতে হবে বিএনপির প্রতি তাদের আস্থা। মামলা-ভয় এমনকি মৃত্যু উপেক্ষা করে জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে বিএনপি রাজপথে আছে এমন বিশ্বাস তৈরি করতে হবে। এমনকি ক্ষমতায় গেলে আমরা কি করতে চাই সেই পরিকল্পনাও জাতিকে অবহিত করা উচিত। আমরা সেটাও করার পরিকল্পনা নিয়েছি। আশা করি, আমাদের কর্মকাণ্ড দেখে এক সময় মানুষের আস্থা আসবে এবং তারা রাজপথের আন্দোলনে শরিক হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে নামলে সরকারে পক্ষে ক্ষমতায় টিকে থাকা কঠিন। অতীত ইতিহাস তাই বলে। এই মুহূর্তে আমরা সেই কাজটিই করছি। গণদাবির পক্ষে কর্মসূচি নিয়ে কেন্দ্র থেকে গ্রাম পর্যন্ত নেতাকর্মীরা ছড়িয়ে পড়ছে।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে অনেক কিছু বিবেচনায় নিতে হচ্ছে। আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত এতে কোনো সন্দেহ নেই। সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনে দেশি শক্তির পাশাপাশি প্রভাবশালী দেশগুলোর ভূমিকাও বিবেচনায় নিতে হয়। আমাদের আন্দোলনে তারা কতটা সমর্থন দেবে সেই বিষয়টিও দেখতে হবে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রভাবশালী দেশগুলো যাতে আমাদের পাশে থাকে এবং সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে সেই কূটনৈতিক তৎপরতাও ঠিক রাখতে হচ্ছে। সবকিছু গুছিয়ে এনে সুযোগ বুঝে রাজপথের চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য এ সরকারের পতন। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি। সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্যের জন্য ইতোমধ্যে অনেক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা সবাই সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। যার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার আমরা ঢাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ করেছি। একই দাবিতে গণতন্ত্র মঞ্চও কর্মসূচি পালন করেছে। বলতে গেলে এটা যুগপৎ আন্দোলনের সূচনা। সরকারের অনুগত অনেক দলকেও এ আন্দোলনে দেখলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

তিনি বলেন, সরকারবিরোধী কর্মসূচি চূড়ান্ত করা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপ হবে। সবার মত নিয়ে চূড়ান্ত হবে কঠোর কর্মসূচির কৌশল। এরপর যখন যেটা প্রয়োজন ধাপে ধাপে সেটা চলে আসবে। শেষ পর্যায়ে তা সরকার পতনের এক দফায় রূপ নেবে। আটঘাট বেঁধেই এবার চূড়ান্ত আন্দোলনে রাজপথে নামা হবে বলে জানান বিএনপির এই নেতা।

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শরিক নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আরও বড় মাপের শক্তিশালী রাজনৈতিক কর্মসূচি ডিমান্ড করে। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। সময় পেরিয়ে গেলে সেটা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নিতে পারবে কিনা তা আমি ক্লিয়ার নই। আমার মনে হয়, আমরা প্রপার ট্রিটমেন্ট দিতে পারছি না। তবে আমরা যে অবস্থায় ছিলাম তার চেয়ে এগিয়ে আছি। এখন আমরা মাঠে আছি। মাঠে থাকতে বলছি।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চূড়ান্ত আন্দোলন যেমন দিনক্ষণ ঘোষণা করে হয় না তেমনি দিন-তারিখ দিলেই যে হয়ে যাবে সেটাও ঠিক নয়। তবে দেশের মানুষ চায় একটা কিছু হোক। কিন্তু সে সময় আমি যদি পুতুপুতু করি তাহলে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় হবে না।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com