ছাত্রলীগ পরিচয়দানকারী মাদক ব্যবসায়ী আরিফ গ্রেফতার!
প্রেসবাংলা ২৪.কম: নিজেকে ছাত্রলীগের অন্যতম নেতা পরিচয় দিয়ে বেড়াত আরিফুল ওরফে বিয়ার আরিফ। বিভিন্ন সময় জেলা ও স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলে তাদের সঙ্গে বেশ সখ্যতা রয়েছে বলেও দাবী করত এই মাদক ব্যবসায়ী। এমনকি সে ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী হিসেবে নিজেকে প্রচার করে বেড়াত। গত ৯ আগস্ট ভোর রাতে ফতুল্লা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় সে।
জানা যায়, ফতুল্লার মুসলিম নগর এলাকার শীর্ষ স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীও মাদক মামলার পলাতক আসামী আরিফুল ওরফে বিয়ার আরিফ (২৫)। মুসলিমনগরের আলী আহম্মেদের পুত্র। তবে নিজেকে ছাত্রলীগের নেতা বলে পরিচয় দিয়ে দাপিয়ে বেড়াত সে। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আজিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম রাফেল, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এমএ মান্নানের সঙ্গেও রয়েছে একাধীক ছবি। আর সেই ছবিকে পুঁজি করেই তিনি ছাত্রলীগের নামধারী সেজে চালিয়ে যেতেন বিয়ারের ব্যবসা।
তবে এ বিষয়ে কড়া জবাব দিয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম রাফেল। তিনি জানিয়েছেন, বিগত সময়ে আমরা ছাত্রলীগের যেকোন সদস্য বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পেলেই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। সোনারগাঁ থানার সাবেক সেক্রেটারীও বিরুদ্ধেও আমরা সাংগঠনিক ভাবে ব্যবস্থা নিয়েছি। ছাত্রলীগ কখনো অপরাধীকে পশ্রয় দেয় না। যে অপরাধের সঙ্গে সংপৃক্ত হবে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবো। জেলা ছাত্রলীগে অপরাধী, মাদক ব্যবসায়ীর স্থান নেই। ছাত্র ছাড়া আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারবে না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমাদের সংগঠন আমরা গতানুগতিকভাবেই চালাচ্ছি।
জেলা ছাত্রলীগের সঙ্গে একাধিক ছবি রয়েছে মাদক ব্যবসায়ী আরিফের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাই, যেতে হয়। অনেকেই ছবি তুলে। কে কোন মাইন্ড নিয়ে ছবি তুলে সেটাতো বলা যায় না।
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আজিজুর রহমানের সঙ্গে একাধীকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি তার মুঠোফোনটি রিসিভ করেননি।
ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এমএ মান্নানের সঙ্গে একাধিক ছবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এলাকার অনেকেই আমার সঙ্গে ছবি তুলে। তবে আমার সঙ্গে রাজনীতি করেনা। আরিফ কিসের রাজনীতি করে এটা আমি জানি না।
উলেখ্য, ৬ আগস্ট রাতে ফতুল্লার মুসলিমনগর থেকে ৮০ ক্যান বিয়ারসহ ওয়াসিম নামক এক জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো। সে রাতে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে গ্রেপ্তারকৃত আরিফুল ওরফে বিয়ার আরিফ পালিয়ে যেতে সক্ষম হলে ও সোমবার ভোর রাতে তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
এদিকে এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, আরিফুল দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার সাথে সস্পৃক্ত রয়েছে। বীরদ্বর্পে মাদক ব্যবসা করতে স্থানীয় ভাবে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে। সে বাড়ির সামনে লোকজন নিয়ে অবস্থান করে গভীর রাত পর্যন্ত মাদক বিক্রি করে। তার বিশাল একটি নেটওয়ার্ক রয়েছে। মুসলিমনগর সহ ধর্মগঞ্জ, বক্তাবলী, নরসিংপুর, পঞ্চবটি, শাসনগাও, ভোলাইল, কাশিপুর এলাকায় বিয়ার সাপ্লাই দেয়।
মাদক ব্যবসা করতে স্থানীয় ভাবে প্রভাব বিস্তার করতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আজিজুর রহমান আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক রাফেল প্রধানের সাথে তাদের সাথে ছবি তুলে ফেইসবুকে নিজেকে ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে প্রচার করে। এ দুই নেতার নাম ব্যবহার করে নিজেকে ছাত্রলীগের নেতা হিসাবে দাবি করে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে আসছিল। সেই প্রভাবে বীরদ্বর্পে বিয়ারের ব্যবসা করে আসছিল সে।
সম্প্রতি প্রাইভেটকার দিয়ে শিবুমাকেট এলাকা হতে গাড়ি সহ বিয়ার নিয়ে একজনকে স্থানীয় লোকজন আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। আটককৃত সেই ব্যক্তি আরিফুলের কাছে বিয়ার ডেলিভারী দিতে এসেছিল। চলতি বছরের ২ জুন মুসলিমনগর এলাকা হতে বিয়ার ব্যবসায়ী দুলুকে ২৫০ ক্যান বিয়ার সহ গ্রেপ্তার করে। মুসলিমনগরে যারা বিয়ার ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত সবাই আরিফুলের বিয়ার বিক্রি করে বলে এলাকাবাসী জানান। তবে তাকে যারা সেল্টার দিয়ে সহযোগীতা করছেন তাদের বিষয়ে ও প্রশাসনকে খাতিয়ে দেখার দাবী জানান এলাকাবাসী।
ফতুল্লা থানার ওসি (তদন্ত) তরিকুল ইসলাম জানান আসামী আরিফুলকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
ফতুল্লা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) দেবাশীষ কুন্ড জানান, ৮০ ক্যান বিয়ার সহ ওয়াসিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সেই মামলায় আরিফুল পলাতক ছিল। সেই মামলায় সোমবার ভোরে মুসলিম নগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরিফুলকে গ্রেফতার করা হয়।