ফের উত্তপ্ত আকবর নগর, রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষের আশংকা

ষ্টাফ রিপোর্টার, প্রেসবাংলা২৪.কম: নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আবারও সংঘর্ষের আশংকা করছে এলাকাবাসী। মাত্র ২ মাস শান্ত থাকার পর আবারও অশান্ত হয়ে উঠেছে এলাকা। এতে করে করে এলাকাবসীর মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আগবরনগর এলাকার প্রভাশালী সামেদ আলী হাজী ও প্রতাপনগরের সলিমুল্লাহ হাজীর সাথে দীর্ঘদিনের ব্যাবসায়ীক দ্বন্দ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মামলার হামলার ঘটনা ঘটছে।

গত ৬ জুলাই হাজী সলিমউল্লাহ বাহিনীর দেদলোয়ার হোসেন দেলু বাদী হয়ে আকবর নগর এলাকার সামাদ হাজীর ছেলে গনি, সজিব, রাজীব, হৃদয় সহ ৯জন কে বাদী করে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। যেখানে দেলোয়ার দেলুকে প্রতাপনগর মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। অথচ ঘটনার দিন সামাদ হাজীর ছেলেরা নিজ বাড়িতে একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে ছিলেন বলে জানিয়েছেন আশপাশের লোকজন।

এর আগে দীর্ঘদিন আকবর নগর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বহু বছর ধরে সামেদ আলী গ্রুপের সঙ্গে রহিম মিয়া গ্রুপের প্রবল বিরোধ চলে আসছিল। ইতোপূর্বে তাদের মধ্যে অনেকবার সংঘর্ষ ঘটে। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি স্থানীয় সাংসদ শামীম ওসমানের নির্দেশে এবং মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম ও বক্তাবলীর চেয়ারম্যান শওকত আলীর তাদের বিরোধ মিটিয়ে মিলিয়ে দেন। পরবর্তীতে এই দুই গ্রুপের মধ্যে আর কোন বিরোধ দেখা দেয়নি।

সামেদ আলী হাজীর ছেলে গনি অভিযোগ করেন নতুন করে আবারও চরাঞ্চল বক্তাবলীর আকবর নগরকে অশান্ত করতে চাইছে হাজী সলিমুউল্লাহ বাহিনী। এদিকে দেলোয়ার হোসেন দেলুর ছেলে ইমরান অভিযোগ করেন সামেদ আলী বাহিনী তার পিতার উপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে, বর্তমানে সে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে সামেদ আলীর হাজীর ছেলে গনি বলেন তাদের নিজেদের মধ্যে ঝগড়া অন্যের ঘাড়ে তুলে দেবার জন্য বিভিন্ন সময় ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে নানাভাবে হয়রানী করছে। ঘটনার দিন আমাদের বাড়িতে আমার ছোট ভাইয়ের বউয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠান নিয়ে আমরা সবাই ব্যাস্ত ছিলাম কিন্তু পরবর্তীতে জানতে পারি অন্য এলাকার মারামারি ঘটনায় আমাদের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।

এলাকায় সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, সলিমউল্লাহ হাজীর সাথে ব্যাবসায়ী দ্বন্দ থাকায় তার ইন্ধনে অন্য লোকদের মারামারির ঘটনা চাপিয়ে দিয়ে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে সামেদ আলী হাজীর ছেলেদের বিরুদ্ধে। তবে এ বিষয়ে সলিমউল্লাহ হাজীর সাথে ফোনে কথা বলতে চাইলে তিনি রাজি হননি।

অভিযোগের বিষয়ে দেলোয়ার দেলুর ছেলে ইমরান জানান, আমার বাবা সলিমুল্লাহ হাজীর ইটের ভাটায় চাকুরী করে। আগের শত্রুতা থেকে আমার বাবাকে সামাদ হাজীর ছেলেরা প্রতাপ নগর গিয়ে মারধর করে। আমার বাবা ঢাকা একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল বর্তমানে তিনি ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আমরা এ বিষয়ে ফতুল্লা থানায় একটি অভিযোগ করেছি।

এ ঘটনায় প্রতাপ নগর এলাকার আরেক দেলোয়ার জানান, রাতে আমরা হইচই শুনে ঘর থেকে বের হয়ে শুনি, সলিমউল্লাহর ইটের ভাটার কর্মচারী দেলুকে মানুষ আটকায়। পরে শুনলাম তিনি নাকি গরু চুরি করেছে। কিন্তু ঐ ঘটনায় পরে সামাদ হাজীর ছেলেদের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা অভিযোগ করেছে। কিন্তু আমরা প্রতাপনগরের মারামারির ঘটনার সময় সামাদ হাজীর লোকজন বা ছেলেদের দেখিনি। ঐ ঘটনায় আমাকেও মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।

আকবর নগর বাইতুস জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাহবুবুর রহমান জানান, আমি এই এলাকায় দুইবছর ধরে চাকুরী করছি। এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে সামাদ হাজী ও তার ছেলেদের দেখছি। মানুষের সঙ্গে কখনো খারাপ ব্যবহার বা খারাপ কোন কাজে লিপ্ত হতে দেখিনি।

আকবর নগর পঞ্চায়েত সদস্য ফুঁলচান মিয়া জানান, গত কয়েকদিন আগে ঝগড়াটা হয়েছে প্রতাপ নগর। কিন্তু সামেদ আলীর ছেলেরা থাকে আগবরনগর। সেই ঝগড়ার অভিযোগে আসামী করা হয়েছে সামেদ আলীর ছেলেদের। এটা একটা মিথ্যা সাজানো ঘটনা।

সিরাজুল ইসলাম নামের এক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমার পাশের বাড়ি সামাদ হাজীর। যেদিন ঝগড়া হয়, সেদিন রাতেই সামাদ হাজীর বাড়িতে একটি পারিবারিক অনুষ্ঠান ছিলো। সেখানে আমাদেরও দাওয়াত ছিলো, কিন্তু রাতে শুনি টেটা সহ সলিম হাজীর লোক দেলুকে প্রতাপ নগর আটকায়।

দেলোয়ার হোসেন দেলুর অভিযুক্ত সামাদ আলীর ছেলে হাজী ওসমান গনি বলেন, যেদিন এই ঘটনাটা হয়, সেদিন আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর জন্মদিন ছিলো। আমরা বাড়িতেই ছিলাম। আর দেলোয়ার দেলু আমার পাশের বাড়িতে থাকে। ওনাকে মারতে হলে কেনো প্রতাপ নগর যেতে হবে। বাড়ির পাশেই ঝগড়া করা যায়। কিন্তু কে বা কারা দেলুকে মেরেছে, দোষ পড়েছে আমাদের উপর। কোন কিছু ঘটলেই আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করা হয়।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এম শওকত আলী বলেন, প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন যাবৎ এই এলাকায় মারামারির ঘটনা ঘটে। তবে মননীয় এমপি সাহেবের নির্দেশে আমি রহিম হাজী ও সামেদ আলী হাজীর দীর্ঘদিনের দ্বন্দ মিটিয়ে দেই। এখন নতুন করে আবার উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে থানায় অভিযোগও হয়েছে। তবে সব পক্ষকে নিয়ে আবারো বিষয়টি কিভাবে মিমাংসা করা যায় তা নিয়ে আলোচনা চলছে। আশা করি খুব শিগ্রই এর একটা সুষ্ঠ সমাধান করতে পারব।

ফতুল্লা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রওশন ফেরদৌস জানান, যারাই অপরাধ করুক তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। কেউ আইনের উর্দ্ধে নয়, থানায় অভিযোগ হয়েছে তদন্তের পর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ##

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com