বঙ্গমাতা সবসময় দিয়ে গেছেন, দিতেই তিনি বেশি আনন্দ পেতেন : প্রধানমন্ত্রী

বঙ্গমাতা সবসময় দিয়ে গেছেন, দিতেই তিনি বেশি আনন্দ পেতেন : প্রধানমন্ত্রী

নিজেস্ব প্রতিবেদক, প্রেসবাংলা২৪.কম: বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা সন্তানদের মাটির দিকে চেয়ে বাঁচতে শিখিয়েছেন জানিয়ে তাদের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা শিক্ষা পেয়েছি বাবা-মায়ের কাছ থেকে মাটির দিকে তাকিয়ে চলার। আব্বা-আম্মা বলতেন, অন্তত তোমার চেয়ে খারাপ অবস্থায় কে আছে তাকে দেখো। উপরের দিকে নয়, তোমার চেয়ে কে ভালো আছে সেটা না দেখে, তোমার চেয়ে খারাপ যারা আছে তাদের দিকে দেখ এবং সেটাই উপলব্ধি করো। আমার মা কখনো নিজের দৈন্যতার কথা বলতেন না। কখনো কোনো চাহিদা ছিল না। নিজে কোনো দিন কিছু চাননি। সবসময় তিনি দিয়ে গেছেন। দিতেই তিনি বেশি আনন্দ পেতেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার (৮ আগস্ট) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুনন্নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তার। অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতার কর্মমুখর জীবনের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র পরিবেশন করা হয়। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবং মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বঙ্গমাতার জন্মদিন। সেই জন্মের পর তিন বছর থেকেই তিনি পিতা-মাতা সব হারিয়ে সারাটা জীবন শুধু সংগ্রামই করে গেছেন। কষ্টই করে গেছেন। কিন্তু এই দেশের স্বাধীনতা, এই স্বাধীনতার জন্য তিনি যে কত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন সেটা আমরা জানি। এই দেশ স্বাধীন হবে, বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি আসবে, বাংলাদেশের মানুষ ভালো থাকবে, বঙ্গমাতা সব সময় এটা কামনা করতেন।

তিনি বলেন, প্রতিটি কাজে আমার মাকেও দেখেছি বাবার পাশে থেকে সহযোগিতা করেছেন। কখনো সংসারের কোনো সমস্যা নিয়ে বিরক্ত করেননি বা বলেনওনি। বরং বেশিরভাগ সময়ই তো আমার বাবা কারাগারে ছিলেন। একটানা দুই বছরও তিনি কারাগারের বাইরে থাকেননি। কিন্তু আমার মা যখন কারাগারে দেখা করতে যেতেন তখন মা নিজেই বলতেন চিন্তার কিছু নেই। সবকিছু তিনি নিজেই দেখতেন।

‘আমাদের মানুষ করার দায়িত্ব আমার মায়ের হাতেই ছিল। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ প্রতিটি সংগঠনের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। নির্দেশনা দেয়া বা বাইরের অবস্থা জেলখানায় থাকা আব্বাকে জানানো, তার নির্দেশনা নিয়ে এসে সেগুলো পৌঁছে দেয়া। এই কাজগুলো তিনি খুব দক্ষতার সঙ্গে করতেন।’

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, কাজের জন্য আমার বাবা সকালে বাড়ি থেকে নাস্তা করে চলে আসতেন। আবার দুপুরে আমার মা নিজের হাতে রান্না করে টিফিন ক্যারিয়ারে করে পাঠিয়ে দিতেন। রান্নাটা সবসময় নিজের হাতে করতেন। তিনি যে প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী, পাকের ঘরে গিয়ে রান্না করবেন, সেই সমস্ত চিন্তা তার কখনো ছিল না। আমার মায়ের হাতের রান্না খুবই সুস্বাদু ছিল।

ছেলেমেয়েরা যেন বিলাসিতায় গা না ভাসিয়ে দেয় সেদিকে বঙ্গমাতা সবসময় সচেতন ছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি নিজে গণভবনে বা সরকারি বাসভবনে থাকেননি। না থাকার কারণটা হচ্ছে তিনি বলতেন, আমার ছেলে-মেয়েকে নিয়ে সরকারি বাসভবন বা শানশওকতে থাকব না। তারা বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত হোক সেটা আমি চাই না। বিলাসিতায় আমরা যেন গা না ভাসাই সেটার ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। তিনি সবসময় আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়েছেন।

hasina

 

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তন এবং গোপালগঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হন। তিনি ১০০ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে ল্যাপটপ, দরিদ্র- অসহায় নারীদের মধ্যে ৩২শ’ সেলাই মেশিন এবং ১৩শ’ দরিদ্র নারীকে ‘নগদ’ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দুই হাজার টাকা করে দেন।

 

অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। এছাড়া গোপালগঞ্জ প্রান্তে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

 

এখানে প্রশিক্ষণ নেয়া ও সেলাই মেশিনপ্রাপ্ত সাবিনা ইয়াসমিন এবং ল্যাপটপ পাওয়া সামিয়া রহমান লিসা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন। তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং প্রধানমন্ত্রী যেন এভাবেই বাংলার প্রতিটি মানুষকে সহযোগিতা করতে পারেন, সেজন্য তার দীর্ঘায়ু কামনা করেন।

 

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com