সিদ্ধিরগঞ্জে আ’লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ: প্রধান আসামিরা অধরা!
সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি, প্রেসবাংলা২৪ডটকম: নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের কেরামবোর্ড খেলাকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের দুই গ্রুপের মধ্যে দু’দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় নাসিকের বর্তমান ও সাবেক কাউন্সিলরকে আসামী করে বুধবার আরও দুটি মামলা দায়ের করা হলেও প্রধান আসামিরা রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। রঘববোয়ালরা ধরা ছোঁয়ার বাহিরে থাকলেও পুলিশ চুনোপুটিদের গ্রেফতার করায় এলাকায় জনসাধারনের দেখা দিয়েছে ক্ষোভ।
পুলিশের কাছে গ্রেফতার হওয়া ভূক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, আমার ছেলে মারামারিতে ছিলো না। পুলিশ আমার ছেলেকে শুধু শুধু ধরে নিয়ে এসেছে। কই পুলিশতো বড় বড় নেতাদের মধ্যে কাউকে এখনো পর্যন্ত আটক করতে পরলো না। তাহলে আমার ছেলেকে কেনো আটক করলো?
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, ৩ আগষ্ট (সোমবার) সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এস আই মাহবুব উর রহমান বাদী হয়ে নাসিক কাউন্সিলর মতিউর রহমানের সেকেন্ড ইন কমান্ড আশরাফ উদ্দিন (এলাকাবাসী জানায়, বিএনপি আমলে সুমিলপাড়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা সামছুল হক ওরফে পুলিশ সামছুর বিশ্বস্ত সহযোগী এবং বিএনপির একনিষ্ট কর্মী ছিলেন আশরাফ। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলে মতিউর রহমান মতি এলাকায় ফিরে আসলে বোলপাল্টে আশরাফ তার সহযোগী হয়ে পড়ে), মতিউর রহমান মতির ভাগ্নে মামুন ওরফে ভাইগ্না মামুন, সহযোগী মানিক মাষ্টার ওরফে ফারা মানিক, সাবেক কাউন্সিলর সিরাজ মন্ডলের ভাই জেলা আওয়ামীলীগ সদস্য মজিবুর রহমান মন্ডলসহ ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ২০০- ২৫০ জনকে আসামী করে প্রথম মামালাটি (নং-৩) দায়ের করেন।বুধবার (৫ আগস্ট) সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক ও ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতিকে প্রধান আসামী করে সিরাজুল ইসলামের সমর্থক ইয়াসমিন বাদী হয়ে ২৩ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা (নং-৫) দায়ের করেন।
অন্যদিকে কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতির সমর্থক লিটন বাদী হয়ে নাসিক ৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মন্ডলকে প্রধান আসামীকে ৫৬ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ২০ থেকে ২৫জনকে আসামী করে পাল্টা মামলা (নং-৬) দায়ের করেন। সংঘর্ষের ঘটনায় ৩টি মামলায় পুলিশ মোট ২২ জনকে গ্রেফতার করেছে। তবে পুলিশ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সংঘর্ষের নায়ক ও সংঘর্ষকারীদের অধিকাংশকেই গ্রেফতার করতে পারেনি। এ কারণে নিরীহ এলাকাবাসী মধ্যে চরম ক্ষোভ ও আতঙ্ক লক্ষ্য করা গেছে। এদিকে তিনটি মামলা দায়ের পর এলাকায় পূরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। যারা সংঘর্ষের দিনে এলাকায় ছিলেন না, আতঙ্কে তারাও এখন এলাকায় নেই।
ঊল্লেখ্য, রোববার রাতে কেরামবোর্ড খেলাকে কেন্দ্র করে ৬নং ওয়ার্ডের সুমিলপাড়া (আইলপাড়া) কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি ও সাবেক কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম মন্ডল সমর্থিত দুই গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। মতি গ্রুপের পানি আকতার ও সিরাজ মন্ডল গ্রুপের শাকিল গ্রুপের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের ওই রাতে পুলিশ সিরাজ মন্ডলের বড় ভাই জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মজিবুর রহমান মন্ডলসহ নয় জনকে গ্রেফতার করে মঙ্গলবার আদালতে পাঠানো হয়। বুধবার পর্যন্ত পুলিশ মোট ২২ জনকে গ্রেফতার করেছে সংঘর্ষের ঘটনায়।
একটি সূত্র জানায়, বর্তমান কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতির সমর্থকরা এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তার স্বজন ও সহযোগীরা আদমজী ইপিজেডে একচেটিয়া ব্যবসা করায় তারা আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে এলাকায় বেপরোয়া হয়ে এলাকার শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করে তুলছে। মতিউর রহমান মতির সেকেন্ড ইন কমান্ড ও একটি শ্রমিক সংগঠনের সভাপতির (বিএনপি থেকে যুবলীগে আসা) বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে একটি তদন্তদল তেল চুরির প্রতিবেদন দিয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতরে। যা দৈনিক আমাদের সময়ে ইতিপূর্বে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিলো। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ফারুক জানায়, সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ১টি ও দুপক্ষের দু’জন বাদী হয়ে ২টিসহ মোট ৩টি মামলা হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত পুলিশ এ ঘটনায় ২২ জনকে গ্রেফতার করেছে। দায়ের করা তিন মামলায় প্রধান আসামীসহ অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।