সিদ্ধিরগঞ্জে আ’লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ৩ মামলা, গ্রেফতার ২২
সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের কেরামবোর্ড খেলাকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের দুই গ্রুপের মধ্যে দু’দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় নাসিকের বর্তমান ও সাবেক কাউন্সিলরকে আসামী করে বুধবার আরও দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ নিয়ে মামলার সংখ্যা দাঁড়ালো তিন-এ। এ সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ মোট ২২ জনকে গ্রেফতার করেছে। তিনটি মামলা দায়ের পর এলাকায় পূরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। তবে সংঘর্ষের ঘটনায় নিরীহ এলাকাবাসী মধ্যে চরম ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মামলায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক ও ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতিকে প্রধান আসামী করে সিরাজুল ইসলামের সমর্থক ইয়াসমিন বাদী হয়ে ২৩
জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা (নং-৫) দায়ের করেন।
অন্যদিকে কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতির সমর্থক লিটন বাদী হয়ে নাসিক ৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মন্ডলকে প্রধান আসামীকে ৫৬ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ২০ থেকে ২৫জনকে আসামী করে পাল্টা মামলা (নং-৬) দায়ের করেন।
বুধবার (৫ আগস্ট) পুলিশ মামলা দুটি রুজু করেন। এ সংঘর্ষের ঘটনায় সোমবার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার
এস আই মাহবুব উর রহমান বাদী হয়ে নাসিক কাউন্সিলর মতিউর রহমানের সেকেন্ড ইন কমান্ড ও বিএনপি থেকে যুবলীগে আসা আশরাফ, মতিউর রহমান মতির ভাগ্নে মামুন ওরফে ভাইগ্না মামুন, সহযোগী মানিক মাষ্টার ওরফে ফারা মানিক, সাবেক কাউন্সিলর সিরাজ মন্ডলের ভাই জেলা আওয়ামীলীগ সদস্য মজিবুর রহমান মন্ডলসহ ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ২০০-২৫০ জনকে আসামী করে প্রথম মামালাটি (নং-৩) দায়ের করেন।
অপরদিকে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় মঙ্গলবার দিনে ও রাতে আরও ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদেরকে বুধবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের মামলার পর নতুন করে পাল্টাপাল্টি আরও দুই মামলাসহ তিন মামালার কারণে সিদ্ধিরগঞ্জের ৬নং ওয়ার্ড পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে উভয় গ্রুপের লোকজন গা- ঢাকা দিয়েছেন। এই মামলার পর উভয় গ্রুপের সন্ত্রাসীদের কোন আনাগোনা নেই এলাকায়।
একটি সূত্র জানায়, বর্তমান কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতির সমর্থকরা এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তার সমর্থকরা আদমজী ইপিজেডে একচেটিয়া ব্যবসা ও চোরাই তেলের রমরমা ব্যবসায় মেঠে উঠেছে। ফলে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে এলাকার শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করে তুলছে। মতিউর রহমান মতির সেকেন্ড ইন কমান্ড ও বিএনপি থেকে যুবলীগে আসা আশরাফের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে একটি তদন্তদল তেল চুরির প্রতিবেদন দিয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতরে। যা একটি দৈনিকে উঠে আসে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ফারুক জানায়, সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ১টি ও দুপক্ষের দু’জন বাদী হয়ে ২টিসহ মোট ৩টি মামলা হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত পুলিশ এ ঘটনায় ২২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দায়ের করা তিন মামলার অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
ঊল্লেখ্য, রোববার রাতে কেরামবোর্ড খেলাকে কেন্দ্র করে ৬নং ওয়ার্ডের সুমিলপাড়া (আইলপাড়া) কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি ও সাবেক কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম মন্ডল সমর্থিত দুই গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। মতি গ্রুপের পানি আকতার ও সিরাজ মন্ডল গ্রুপের শাকিল গ্রুপের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের ওই রাতে পুলিশ সিরাজ মন্ডলের বড় ভাই জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মজিবুর রহমান মন্ডলসহ নয় জনকে গ্রেফতার করে মঙ্গলবার আদালতে পাঠানো হয়।