করোনা সংকটে সহপাঠীদের পাশে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

মিজানুর রহমান (জবি প্রতিনিধি), প্রেসবাংলা২৪ডটকম: ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না’, কবি ভুপেন হাজারিকার এই অমর গানটি বারবার মনে করিয়ে দেই মানুষের প্রতি মানুষ বন্ধুত্বের হাতই বাড়িয়ে দিলেই মানবিক ও সুন্দর একটা পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব। সেই সুন্দর ও মানবিক পৃথিবী গড়তে অনন্য নজির স্থাপন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় যখন গোটা দেশ অঘোষিত লকডাউনে তখন বিপদগ্রস্ত জবি শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন জবির সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা। ৩৫ দিনে ৩২০ জন শিক্ষার্থীর হাতে ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৬৩০ টাকা পৌঁছে দিয়ে করেছেন অন্যন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন।
এই বিশাল কার্য সম্পাদন করেছে, “করোনা মোকাবেলায় জবিয়ানের পাশে জবিয়ান ” নামক একটি ফেসবুক গ্রুপ থেকে। গ্রুপটিতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন একদল সাহসী শিক্ষার্থী। স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, গত ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই কার্যক্রমে প্রাণ হচ্ছেন সাবেক বর্তমান শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় ছুটির যখন সবাই ঘরবন্দী, তখন তারা অনলাইনে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেন। সবাই শিক্ষার্থী হওয়ায় কারও পক্ষে বড় অংকের অর্থ পাঠানো সম্ভব ছিল না। সেজন্য তারা একটি ফেসবুক গ্রুপ খুলে তারপর নিজেদের টাইমলাইনে এবং গ্রুপে উন্মুক্ত পোস্ট করা হয় যারা সমস্যায় আছেন তাদের সমস্যা জানিয়ে ইনবক্সে লিখতে। এভাবে সমস্যাগ্রস্ত শিক্ষার্থীর তথ্য জেনে তার পরিচয় গোপন রেখে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে ফেসবুক পোস্ট করা হয়। এর ভিত্তিতে কাঙ্ক্ষিত আর্থিক সহায়তা পাওয়া গেলে পোস্ট ক্লোজ করে দেওয়া হয়।
সেচ্ছাসেবকরা আরও জানান তারা ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক সকল পরিচয়ের উর্ধ্বে উঠে কাজ করেছেন শুধু শিক্ষার্থী পরিচয়ে। শুধুমাত্র বিপদগ্রস্তদের পরিচয়ই গোপন রাখা হয়নি, সাহায্য বা সহযোগিতা এধরণের শব্দ বলতেও নারাজ তারা। এই কার্যক্রমকে তারা ‘উপহার’ বলেন। তাদের মতে এটা কোনো দান বা সাহায্য নয়, জবিয়ানদের জন্য জবিয়ানদের উপহার।শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগের প্রশংসা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
এছাড়া জবির সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছেন, বিশেষ করে প্রশাসন ক্যাডারে রয়েছেন, তাদের উদ্যোগেও সংকটে থাকা শিক্ষার্থীদের সহায়তা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিশেষ করে খাদ্য সংকটে থাকা জবি শিক্ষার্থীরা সমস্যার কথা জানিয়ে ইনবক্সে মেসেজ করলে তাদের নাম তালিকাভুক্ত করে পাঠানো হয় প্রশাসনের ওই কর্মকর্তাদের কাছে। তারপর পৌঁছে যায় প্রয়োজনীয় সহায়তা।
এই কার্যক্রমে সেচ্ছাসেবক হিসেবে যেসব শিক্ষার্থীরা কাজ করছেন, মার্কেটিং বিভাগের অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাইসুল ইসলাম নয়ন, রসায়ন বিভাগের অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থী জহির রায়হান, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশনসের একাদশ ব্যাচের নাজমুল ইসলাম মুন্না, ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশনের দ্বাদশ ব্যাচের মাহমুদুল হাসান মিশু, পদার্থবিজ্ঞানের দ্বাদশ ব্যাচের তৌসিব মাহমুদ সোহান ও স্বপ্নীল কনিক, নৃবিজ্ঞানের দ্বাদশ ব্যাচের আহসান জুবায়ের,একাউন্টিং ডিপার্টমেন্টের দ্বাদশ ব্যাচের লিমন, পরিসংখ্যানের ত্রয়োদশ ব্যাচের আসসাইফ সুবর্ণ, ফার্মেসির ত্রয়োদশ ব্যাচের আবু বক্কর,মার্কের্টিং বিভাগের ত্রয়োদশ ব্যাচের মো. জহির উদ্দিন,ত্রয়োদশ ব্যাচের শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিউটের রেজোয়ান সীমান্ত এবং ত্রয়োদশ ব্যাচের ইসলামিক স্টাডিজের এরফান।
কার্যক্রমের সেচ্ছাসেবক রাইসুল ইসলাম নয়ন বলেন, অামরা সকল জবিয়ান এক হয়ে এই কার্যক্রম পরিচালনা করছি যা শুধুমাত্র জবিয়ানদের কল্যাণের উদ্দেশ্যেই৷ ।এখানে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই,তবে একটি মহল একে রাজনৈতিক রুপ দেয়ার জন্য উঠে পরে লেগেছে। আমরা ইতোমধ্যে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করে একটা প্রেসরিলিজও দিয়েছি।
অপর সেচ্ছাসেবক তাওসিব সোহান বলেন,”করোনা মোকাবেলায় জবিয়ানের জন্য জবিয়ান” গ্রুপের কার্যক্রম ছিল সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক কার্যক্রম। যার মূল উদ্দেশ্যই ছিলো অসহায় শিক্ষার্থীদের পাশে দাড়ানো।গ্রুপের কার্যক্রমে যেই অংশগ্রহণ করতে চেয়েছে তাকেই সুযোগ দেয়া হয়েছে।পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেই সমস্যার কথা বলেছে তাকেই সাহায্যের চেষ্টা করা হয়েছে।কোনো ক্ষেত্রেই কারো রাজনৈতিক পরিচয়কে আমলে নেয়া হয় নাই।বরং একটি মহল এই কার্যক্রমকে রাজনৈতিক রূপ দেয়ার চেষ্টা করেছে।পাশাপাশি এই কার্যক্রমের সাথে জড়িত সবাইকে নিজেদের কর্মী হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছে।যেটা আমাদের বিব্রত করেছে।আমরা তাদের এই হীন প্রচেষ্টার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অামরা অামাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাবো কেউ ভুল বুঝবেন না।
সেচ্ছাসেবক কনিক স্বপ্নীল বলেন, আমরা দল-মত নির্বিশেষে জবি শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। সবার আগে আমাদের পরিচয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।