জীবানুনাশক ট্যানেল কতোটা নিরাপদ!

প্রতিবেদক, প্রেসবাংলা২৪ডটকম: নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা জীবাণুনাশক ট্যানেলের কার্যকারিতা ও স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একদিকে প্রকৌশলগত ত্রুটি ও অন্যদিকে এ টানেলের মানবদেহের ক্ষতিকর দিক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নজরে এসেছে। ফলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকেও এর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। একই কারণে এর আগে ভারত ও মালয়েশিয়া এ ধরনের ট্যানেল নিষিদ্ধ করা হয়।
ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ ৩শ’ শয্যা হাসপাতালে দেয়া বস্ত্র ও পাট মন্ত্রীর দেয়া জীবাণুনাশক ট্যানেলটি অকেজো হয়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রকৌশলগত ত্রুটির জন্য এ ট্যানেলটি অকেজো হয়ে পড়েছে। জীবানুনাশক ট্যানেল ব্যবহার নিয়ে কথা হয়, নারায়ণগঞ্জের সন্তান এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কেমিকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল হোসেন এর সাথে।
তিনি জানান, জীবানুনাশক প্রবেশদ্বার বা ট্যানেলের ব্যবহার আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রথমে দেখি ল্যাটিন আমেরিকান কান্ট্রি চিলিতে। চিলিতে মূলত ফুড মার্কেটের প্রবেশদ্বারে এমন জীবানুনাশক ইউনিট স্থাপন করা হয়েছিল। তারপর চীন, মালয়েশিয়া ও ভারতে দেখি। বাংলাদেশে প্রথম সম্ভবত ক্রিকেটার ও সাংসদ মাশরাফি বিন মূর্তজা’র উদ্যোগে, তার এলাকায় এমন একটি জীবানুনাশক ইউনিট স্থাপন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে একইভাবে বেশ কিছুসংখ্যক ইউনিট দেশের নানান জায়গায় স্থাপন করা হয়েছিল।
ড. ইকবাল বলেন, মূল সমস্যা ছিল ব্যবহৃত জীবানুনাশক রাসায়নিক এবং প্রক্রিয়াগত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়ে। ব্যবহৃত হাইপোক্লোরাইট রাসায়নিক নভেল করোনা ভাইরাস-কে নিষ্ক্রিয় করতে কার্যকর ঠিক, কিন্তু তা মানবদেহের জন্যও নানাভাবে অনেক ক্ষতিকর হতে পারে। মানবদেহের উপযুক্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা ছাড়া অবৈজ্ঞানিকভাবে এসব জীবানুনাশক ইউনিট চালানো হয়েছিল। যা আসলে কোনোভাবেই কল্যাণকর ছিলোনা। বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে ভারত ও মালয়েশিয়া সরকারিভাবে দ্রুত তা নিষিদ্ধ করে দেয়। বাংলাদেশেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এধরণের জীবননাশকের বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থারও এক ধরণের নিষেধ রয়েছে।
ড. ইকবাল আরও জানান, তবে যথাযথ জীবানুনাশক রাসায়নিক দিয়ে প্রক্রিয়াগত সকল নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে সঠিকভাবে এধরণের প্রবেশদ্বার ও ট্যানেল স্থাপন ও পরিচালনা করা সম্ভব হলে, বেশ কিছু উপকারিতা ও সুবিধা পাওয়া যাবে। স্বাস্থ্যবিদ্যার জ্ঞান এবং কেমিকৌশল, যন্ত্রকৌশল, তড়িৎকৌশল ও স্থাপত্য বিষয়ক দক্ষতা প্রয়োজন হয়, এধরণের স্বয়ংক্রিয় ইউনিট ডিজাইন, স্থাপন ও পরিচালনা করার জন্য। বুয়েটের শিক্ষক ও সাবেক শিক্ষার্থীদের একটি দল এমন একটি নতুন স্বয়ংক্রিয় ইউনিট ডিজাইন করেছেন। দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের পরিহিত পিপিই গাউন জীবনমুক্তকরণের জন্য এই ইউনিটটি ডিজাইন করা। ইতিমধ্যে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে গত শুক্রবার একটি চেম্বার সরবরাহ করা হয়েছে। এই ইউনিটের কার্যকারিতা কারিগরিভাবে মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু মতামত দেয়ার সুযোগ আমার হয়েছে। আমি নিজে একটি দল করে এয়ারপোর্টের জন্য জীবানুনাশক ইউনিট ডিজাইন, স্থাপন ও পরিচালনা নিয়ে গবেষণামূলক একটি কাজ করছি।