করোনা সঙ্কটকালে সময়মতো কিছুই পায়নি না’গঞ্জ

নেয়ামতউল্লাহ, প্রেসবাংলা২৪ডটকম: করোনা সঙ্কটকালে সময়মতো কিছুই পায়নি নারায়ণগঞ্জ। নানা প্রতিশ্রুতি ও বক্তব্যের রাজনীতির শিকার হয়েছে রাজধানীর পাশের এই জেলাটি। করোনার উৎপত্তিস্থল বা হটস্পট বলা হলেও এই জেলার জন্য যত বিশেষ ব্যবস্থার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তার কোনটাই বাস্তবায়িত হয়নি। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও এই জেলার জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় করোনার নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়ার পরেও একটানা এক সপ্তাহ আটকে ছিল এ জেলার পাঁচ শতাধিক নমুনার ফল!

 

সর্বপ্রথম গত ৮ মার্চ নারায়ণগঞ্জের টানবাজার এলাকায় তিনজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। বাংলাদেশে মূলত ওই তিনজন রোগীই প্রথম করোনা রোগী। এরপর থেকে গত ৬ মে পর্যন্ত এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ১২৩। একই দিন পর্যন্ত মারা গেছে ৫০ জন।

 

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জ থেকেই দেশের ২৪টি জেলায় করোনা রোগ ছড়িয়েছে। অথচ এই জেলায় করোনা শনাক্তের পরেও কালক্ষেপণ করা হয়েছে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব করে করোনাকে এক ধরণের নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

 

শিল্প-বাণিজ্য ও পোশাক শিল্পের লাখ লাখ শ্রমিক অধ্যুষিত এই জেলাটিকে করোনা মোকাবেলায় গৃহীত নীতির প্রথম থেকেই অবহেলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। করোনা আক্রান্তরাও পাননি স্বাস্থ্যসেবা। করোনার নমুনা পরীক্ষা নিয়েও একধরণের তাচ্ছিল্যের শিকার হয়েছে জেলাটি। যার ফলে কাছাকাছি সময়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন ও করোনা প্রতিরোধ কমিটির ফোকাল পার্সনসহ শীর্ষ কর্মকর্তারাও করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এর ফলে গত ১৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জেলা প্রশাসনের ভিডিও কনফারেন্সে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন কেউ উপস্থিত থাকতে পারেননি।

 

জেলার পাঁচজন সাংসদের মধ্যে নজরুল ইসলাম বাবু ছাড়া কেউ ছিলেন না। সেদিন নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসক প্রধানমন্ত্রীর কাছে করোনা পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাব বসানোর আবেদন জানান। হটস্পট নারায়ণগঞ্জে করোনা পরীক্ষাগার নেই জেনে বিস্ময় প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগকে নির্দেশনা দেন। ল্যাব না হওয়া পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের করোনা নমুনার পরীক্ষা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু বাস্তবে বিষয়টি আরও উল্টো হয় এবং এরপর প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ৫ শতাধিক নমুনা পরীক্ষার জন্য আটকে ছিল আইইডিসিআরে।

 

অনেকে উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষার সুযোগ পাননি। করোনা প্রতিরোধ কমিটির দেওয়া তথ্যমতে, এ জেলায় করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন প্রায় ২০ জন। এরমধ্যে মৃত্যুর পরে সকলের কোভিড-১৯ পজেটিভ এসেছে।

 

অথচ এর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র, সাংসদ শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জে ল্যাব হচ্ছে- এমন কৃতিত্ব নেওয়ার প্রতিযোগিতায় নামেন। কিন্তু ১৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সে নারায়ণগঞ্জবাসী বুঝতে পারেন আসলে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছায়নি।

 

জেকেজি নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ১৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল ও আদমজী এমডব্লিউ স্কুল এন্ড কলেজে দুটি করোনা পরীক্ষা কেন্দ্র চালু করলেও সেখান থেকে কী ফলাফল পাওয়া গেছে তা জানেন না বলে খোদ সিভিল সার্জন মন্তব্য করেন।

 

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুতে যদি নারায়ণগঞ্জকে নিয়ে সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা নেওয়া যেত তবে মূলত পুরো দেশই এ থেকে রক্ষা পেতে পারতো। কিন্তু সরকারি আমলাদের ফাঁদে পড়ে এ জেলাটি অবহেলায় পড়ে।

 

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ করোনা প্রতিরোধ কমিটির ফোকাল পারসন সদর উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদ বলেন, সময়মতো প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ লকডাউন ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি না মেনে সামাজিক সংক্রমণ ঘটিয়েছে।

 

তিনি আরও বলেন, প্রথমদিকে ৫ হাজার প্রবাসী নারায়ণগঞ্জে ঢুকেছে। কিন্তু তাদের তালিকা আমাদের দেওয়া হয়নি। এদের মধ্যে ৬শ’ জনকে খুঁজে বের করে কোয়ারান্টিন করা হয়েছে। অথচ এটা স্বাস্থ্য বিভাগের কাজ না। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জে বেসরকারিভাবে যে দুটো নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্র করা হয়েছে, তা আদৌ ফলপ্রসু হয়নি। তারা প্রতিদিনি কতজনের নমুনা সংগ্রহ করে তা স্বাস্থ্য বিভাগ জানে না। এমনকি সংগ্রহ করা নমুনার ফল ১২ দিন পরে পাওয়া গেছে।

 

ফলে সবমিলিয়ে এক ধরণের সমন্বয়হীনতায় এ জেলার করোনা মোকাবেলা কার্যক্রম হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঠিক সমন্বয়হীনতা নয়, তবে সাধারণ মানুষ লকডাউন না মানায় পরিস্থিতি একটু অন্যরকম হয়েছে।

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com