নিরবে কাঁদছে গণমাধ্যমকর্মীরা
ইসমাইল হোসেন মিলন,সিদ্ধিরগঞ্জ, প্রেসবাংলা২৪ডটকম: মরণঘাতী করোনার থাবায় থমকে গেছে গোটা বিশ্ব। যতই শক্তিধর রাষ্ট্র হোক না কেন সব রাষ্ট্রকেই নাকানি- চুবানি খাইয়ে নাজেহাল করে দিচ্ছে এই ভাইরাসটি। পাশাপাশি বিশ্বকে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে দিচ্ছে শত বছর। করোনার ভয়াল থাবায় ছাড় দেয়নি আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি কেও। আমাদের প্রিয় নারায়ণগঞ্জ আজ স্তব্ধ। ভালো নেই আমাদের এই নারায়ণগঞ্জ। চারিদিকে মৃত্যুর সংবাদ।
মরণঘাতী করোনা ভাইরাস এই দেশের অনেক মায়ের বুক খালি করে দিচ্ছে। বৃদ্ধ, যুবক, শিশু, নারী কাউকেই ছাড় দিচ্ছে না এই ঘাতক করোনা। প্রতিদিন প্রতিযোগিতা করে বৃদ্ধি করেই চলছে আক্রান্তের এবং মৃত্যুর সংখ্যা। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। এই ঘাতক করো না এ পর্যন্ত দেশে প্রাণ নিয়েছে ১১০ জনের এবং আক্রমণ করেছে ৩৩৮২ জন নিরীহ মানুষকে।
ঘাতক করোনার হাত থেকে রক্ষা করতে দেশ ও দেশের নাগরিকদের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন সরকার। ইতিমধ্যে সব সরকারি ও বেসরকারি অফিস-আদালত বন্ধ রয়েছে। দেশকে সুরক্ষা দিতে লক ডাউন ঘোষণা করে জনগণকে নিরাপদে থাকতে সর্বাত্তক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এবং অসহায় মানুষদের যাতে না খেয়ে থাকতে না হয় সেজন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রান সামগ্রী বরাদ্দ দিয়েছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি ত্রাণ সামগ্রী দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠানগুলো।
তবে এই মহামারিতে অনেক পেশার মানুষরা ঘরে থাকার সুযোগ পেলেও দেশের এই দুঃসময়ে জীবন বাজি রেখে মাঠে কোমড় বেঁধে নেমেছে স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রিয় সংবাদকর্মীরা।
এই তিন পেশায় নিয়োজিতরা সবাই মানুষ হলেও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সংবাদকর্মীরা। অন্যসব পেশার মানুষদের পাশে সরকার বা বিভিন্ন সংগঠন দাঁড়ালেও সংবাদকর্মীদের পাশে নেই কেউ।
তবুও সংবাদকর্মীরা দিনরাত ছুটে চলছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। খুঁজে খুঁজে বের করছেন সাধারণ মানুষের কষ্টের নানা কথা। তুলে ধরেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
তবে মাঠে যে তিন পেশার মানুষ যুদ্ধ করছেন তাদের মধ্যে রয়েছে শ্রেণি ভেদ। এরমধ্যে স্বাস্থ্যকর্মী বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সরকারের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার আওতায় থাকার পরেও সরকার দিচ্ছেন প্রণোদনা। কিন্তু সংবাদকর্মীরা কেমন আছে, কিভাবে আছে, তাদের পরিবারের লোকেরা কি খাচ্ছে এমন কোন খোঁজ রাখছে না কেউ। মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা বুঝি অন্য গ্রহের প্রাণী।
একদিকে সংবাদকর্মীদের বঞ্চিত করছে সংবাদপত্রের মালিকরা অন্যদিকে বঞ্চিত করছে সরকার। মালিকদের উচিত আগে তাদের নিজের প্রতিষ্ঠান যারা জীবন বাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের পাশে দাঁড়ানো।
মালিকরা সংবাদকর্মীদের পাশে না দাঁড়ালেও সংবাদকর্মীরা তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে। সরকারও কেন জানি সংবাদকর্মীদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। যেদিনই জাতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর কোন সংবাদ সম্মেলন বা দিকনির্দেশনামূলক কোন অনুষ্ঠান থাকে সেদিন হতভাগা সংবাদকর্মীরা এক বুক আশা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সেই অনুষ্ঠানের দিকে তাকিয়ে থাকে। সংবাদকর্মীদের ভাবনা কেউ পাশে না দাঁড়ালেও প্রধানমন্ত্রী পাশে দাঁড়াবেন এবং সংবাদকর্মীদের জন্য আশার বাণী শোনাবেন প্রণোদনা ঘোষণার মাধ্যমে। কিন্তু না পত্রিকার মালিকদের মত সরকারেও সংবাদকর্মীদের এড়িয়ে যাচ্ছেন। সীমাবদ্ধতা রাখছেন শুধু ধন্যবাদ এর মধ্য দিয়েই।
সংবাদকর্মীরা যে ভালো নেই এটা হয়তো প্রধানমন্ত্রীর কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি। যাদের মাধ্যমে পৌঁছানোর কথা তারা কেনইবা সংবাদকর্মীদের দুর্বিষাহ জীবনের কথা তুলে ধরছেন না সেটা বোধগম্য নয়। জানাবেন বা কি করে, যারা জানাবেন তারা তো ভালই আছেন।
অনেক সংবাদকর্মীদের ঘরে খাবার ফুরিয়ে আসছে, অনেকেই পরিবার নিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত, অনেকেই কারো কাছে হাত পাততে না পেরে নীরবে কাঁদছেন। অনেকেই বেতন না পেয়ে নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন চাকরি বাঁচানোর আশায়। অনেকেই পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দিতে লকডাউন এর মধ্যে অফিসে ছুটছেন।
তবে ইতিমধ্যে সংবাদকর্মীদের জন্য সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলসহ সাংবাদিক সংগঠনগুলো। এখন শুধু অপেক্ষার পালা! কখন সংবাদকর্মীদের দিকে তাকাবেন দেশের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ সহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
সরকারের কাছে অনুরোধ রইলো দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে অন্য পেশার মানুষদের পাশে যেভাবে দাঁড়িয়েছেন সংবাদকর্মীদের পাশেও একটু সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিন। সত্যিকার অর্থে এই পেশার মানুষ রা ভালো নেই। নিরবে অনেক সংবাদকর্মীরা যে কাঁদছে বিশ্বাস না হলে জরিপ করে সত্যতা যাচাই করতেও পারেন।