প্রতিবন্ধীদের মজার পাঠশালা-আর্ণ এন লিভ সিন

 

 

ইসমাইল হোসেন মিলন, সিদ্ধিরগঞ্জ, প্রেসবাংলা২৪ডটকম: অর্থের অভাবে ভালভাবে শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা দিতে পারছে না সিদ্ধিরগঞ্জে বেসরকারীভাবে গড়ে উঠা প্রতিবন্ধীদের একমাত্র স্কুলটি। স্কুলটিকে আরো ভালভাবে চালানোর জন্য স্কুলের শিক্ষকরা আর্থিক অনুদান প্রত্যাশা করছেন দানবীরদের কাছ থেকে। ২০১৯ সালের এপ্রিলে ইংল্যান্ড প্রবাসী জনৈক ফরিদা ইয়াসমিন জেসি সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিল এলাকায় স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। আর্ণ এন লিভ সিন স্কুল নামে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটিতে বর্তমানে বিনা বেতনে ও কোন প্রকার ফি ছাড়া ৩৯ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী চিকিৎসা সেবা ও শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছেন।

ফরিদা ইয়াসমিন জেসি প্রায় ২০ বছর পূর্বে পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে। সেখানে লন্ডনের একটি প্রতিবন্ধী স্কুলে শিক্ষকতা করেন। প্রতিবন্ধী স্কুলে শিক্ষকতা করতে গিয়ে ভালবাসা বাড়তে থাকে প্রতিবন্ধীদের উপর। এরই ধারাবাহিকতায় ইতিপূর্বে টাঙ্গাইল শহর, সাভার ও মির্জাপুরে তিনটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সিদ্ধিরগঞ্জে তার প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি পরিচালনার জন্য অর্থের যোগান দেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ফরিদা ইয়াসমিন জেসি। তার স্কুলে সহযোগীতার হাত বাড়ান লন্ডনে বসবাসরত তাঁর কিছু বন্ধু, শুভাকাঙ্খী। তার মতে, প্রতিবন্ধী মানুষেরা যেভাবে বৈষম্যের শিকার হয় সেটা সমাজের চারিদিকে চোখ রাখলে হরহামেশাই দেখা মিলে। এমনকি প্রতিবন্ধীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হয়ে আত্মবিশ্বাস হারায়। অথচ প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করতে সমাজের মানুষেরা দায়বদ্ধ। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই প্রতিবন্ধীদের প্রতিবন্ধীদের জন্য তার এগিয়ে আসা। কিছু করার চেষ্টা করা।

 

বর্তমানে ৩৯ জন শিক্ষার্থী এ স্কুলে অধ্যয়নরত। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য রয়েছে একজন শিক্ষক, পাঁচজন শিক্ষিকা ও একজন প্রশিক্ষক। শিক্ষার্থীরা বিনা বেতনে পড়লেও শিক্ষক-শিক্ষিকারা সবাই বেতনভুক্ত। প্রতিষ্ঠানটির নিয়মিত কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পাশাপাশি ব্যবহারিক হস্তশিল্প প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। যাতে করে প্রতিবন্ধী শিশুরাও ভবিষ্যতে আত্মকর্মসংস্থান করতে পারে।

 

একজন প্রতিবন্ধী মানুষের নিয়মিত চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হয়। সেজন্য স্কুলটিতে সপ্তাহে একদিন প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা সেবাও প্রদান করা হয়। তাছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির সেবাসমূহের মধ্যে রয়েছে ফিজিওথেরাপি, স্পিচ থেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি। রয়েছে খেলাধুলা, নাচ,গান শিখানোসহ বিনোদনমূলক কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ।

 

 

 

 

স্কুলটির দেখভালের দায়িত্বে আছেন আয়েশা আক্তার নামে এক শিক্ষিকা। স্কুল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য প্রতিমাসে ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। সমাজের বিত্তবান লোকেরা চাইলে প্রতিষ্ঠানটির জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন। সেই ক্ষেত্রে আমরা প্রতিবন্ধীদের জন্য সেবা ও শিক্ষার হারটা আরো বাড়িয়ে দিতে পারবো। প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, বর্তমানে একটি শিফটে শিক্ষাদান কর্মসূচি চলে। শিক্ষার্থী ও অর্থের যোগান বাড়লে আমরা আরও একটি শিফট চালু করবো। তবে সেজন্য আমাদের অর্থনৈতিক সহায়তা দরকার বিত্তবানদের কাছ থেকে।

 

 

স্কুলটির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক নাম প্রকাশের শর্তে জানান, আমাদের এলাকায় অনেক স্কুল থাকলেও প্রতিবন্ধীদের জন্য কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। এই (আর্ণ এন লিভ সিন স্কুল) স্কুলটি গড়ে উঠায় প্রতিবন্ধীরা অনেক উপকৃত হবে বলে আমি মনে করি।

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com