শামীম ওসমানের ‘অস্ত্র’ নিয়ে মুখ খুললেন আ’লীগ নেতা শহীদ উল্লাহ
বিশেষ প্রতিবেদক, প্রেসবাংলা২৪ডটকম: আলোচিত সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের দেয়া বিস্ফোরক বক্তব্য নিয়ে যখন সবমহলে আলোচনা তুঙ্গে ঠিক তখনই শামীম ওসমানের অস্ত্র নিয়ে মুখ খুললেন জেলা আওয়ামী লীগ নেতা শহীদ উল্লাহ।
বুধবার (৪ মার্চ) সকালে শহীদ উল্লাহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট করেন।
শহীদ উল্লাহ ১৯৯৬ সালে শামীম ওসমানের মনোনয়ন পাবার পেছনের কারিগর বলে নিজেকে দাবি করেন। প্রথমবার সংসদ সদস্য হবার পরে ছায়ার মতো শামীম ওসমানের সাথে ছিলেন। ১৯৮১ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০০ সাল থেকেই নানা কারণে শামীম ওসমানের সাথে তাঁর দূরত্ব বাড়ে। এরপর থেকে শামীমবিরোধী নানা বক্তব্যই দিয়ে আসছেন।
গত রোববার নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনস মাঠে পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’র আলোচনা সভা ও সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামীম ওসমান বলেন, ২০০১ সালের আগে জেলা পুলিশ ফোর্সের কাছে যত অস্ত্র না ছিল, তার থেকে বেশি অস্ত্র একা আমার নিজের কাছেই ছিল। অনুষ্ঠানে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম ও জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিনও উপস্থিত ছিলেন।
শামীম ওসমানের এ বক্তব্যে পরে জেলাজুড়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। যদিও পরবর্তীতে শামীম ওসমান নিজেই ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন।
অন্যদিকে শামীম ওসমানের দেয়া ওই বক্তব্য প্রসঙ্গে যোগাযোগমাধ্যমে শহীদ উল্লাহ লিখেছেন-‘আমাদের মাননীয় সাংসদ শামীম ওসমান বলেছেন তার কাছে যা অস্ত্র ছিল, পুলিশের কাছেও তত অস্ত্র ছিল না। ব্যক্তিগত জীবনে আমি নবম শ্রেনী হতেই তার মরহুম পিতা স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক একেএম শামসুজ্জোহা সাহেবের শীষ্য ছিলাম। ভাগ্য হয়েছিল শামীম ওসমানের রাজনৈতিক উত্থানের পুরো সময়টাতেই আমি ছিলাম সবার সামনে, তার সবচেয়ে বেশি কাছে। তার বড় ভাই নাসিম ওসমান সাহেব জাতির পিতার হত্যার পর তার প্রতিশোধ নেবার জন্য বিয়ের আসর ছেড়ে সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন এবং পরবর্তীতে এরশাদ সাহেব ক্ষমতায় আসলে তিনি ১৯৮৬ সালে জাপা হতে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখন হতেই এই পরিবারটির সদস্যদের উপর হতে জুলুমের মাত্রাটি কমে আসে।
১৯৯০ সালে এসপি হয়ে নারায়ণগঞ্জে আসেন মমিনউল্লাহ পাটোয়ারী। তিনি ছিলেন অত্যন্ত পারদর্শী ও দূরদর্শী চৌকশ কর্মকর্তা। হয়ত তারই পরামর্শে শামীম ওসমানসহ এই পরিবারের কাছে থাকা কিছু অবৈধ অস্ত্র (পূর্বেই উল্লেখিত কাদেরিয়া বাহিনীর) বিভিন্ন কৌশলে পুলিশের হাতেই পৌঁছানো হয় এবং এর ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় এবং ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জ হতে অস্ত্রের ঝনঝনানির হুংকার কমে যায়।
শামীম ওসমান সাহেব এমপি হন ১৯৯৬ সালে। তার পিছনে, সামনে আমার উপস্থিতিটা ছিল সবার অগ্রভাগে। খালেদা সরকারের আমলে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ অস্ত্রধারী হয়ে বিভিন্ন হত্যা, ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়ে এবং এর ধারাবাহিতায় আমার নিজ বাড়িও আক্রান্ত হয় এবং একজনকে গুলি করে হত্যাও করা হয়। শামীম সাহেব আমাকেই পরামর্শ দিয়েছিলেন, কী করে বিএনপির অস্ত্রধারীদের অস্ত্র উদ্ধার করা যায়। আমি তার পরামর্শে এ কঠিন কাজে নেমে কৌশলে বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার করার পর সেগুলোকেও পঞ্চবটিস্থ কলোনীর উত্তর-পূর্ব কোনের একটি কদম ফুলের গাছের নীচে রেখে তা পুলিশকে গোপনে উদ্ধার করতে সহযোগিতা করি। এগুলো ছিল শামীম সাহেবের সাহসী পদক্ষেপ; যার সহযাত্রী হয়ে নিজের মনে প্রশান্তির ছোঁয়া লেগেছিল।
আমার ভাগ্য খারাপ। ২০০০ সাল হতেই আমি তার বিরাগভাজন হয়ে দূরে সরে যেতে বাধ্য হই। কিন্তু তার এই সেনসেটিভ কথায় অনেক সমালোচনার ঝড় উঠলে আমি যতটুকু জানি ততটুকু বলাকেই কর্তব্য বলে মনে করলাম। কারণ তার প্রচেষ্টায় বহু অস্ত্র উদ্ধার/জমা হয়েছিল;- যা না বললে বঙ্গবন্ধুর সাচ্চা সৈনিক হবার কথাটা আমার মুখের শুধু বুলিই হবে বলে আমি মনে করেছি। এর মাঝে অন্য কোন কিছু আবিষ্কার কেই করলে ভাববো, আমরা শুধু সমালোচনার জন্যই সমালোচনা করে সত্যকে আড়াল করি বা করতে চাই শুধুমাত্র বিরোধীতা করে নিজেদের ফায়দা লুটার জন্য।’