আলোচনায় আলাউদ্দিন হাওলাদারের ‘টর্চার সেল’

ফতুল্লা প্রতিনিধি, প্রেসবাংলা২৪ডটকম: ফতুল্লায় চুরির অভিযোগ এনে এক আওয়ামী লীগ নেতার অফিসে দুই যুবককে হাত-পা বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করার ঘটনা ঘটেছে। শুধু তাই নয়, নির্যাতনের পর তাদের পুলিশে দেয়া হলে পুলিশ তাদেরকে ছাগল চুরির মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়।

 

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দুই নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি আলাউদ্দিন হাওলাদারের অফিসে। তিনি কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য।

 

স্থানীয়দের মতে, নানা অপকর্ম করলেও আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন হাওলাদারের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস দেখান না। সারাহ বেগম কবরী এমপি হবার পর তার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে আলাউদ্দিন মেম্বার দাবড়িয়ে বেড়িয়েছেন পুরো কুতুবপুর৷ বর্তমানে সাংসদ শামীম ওসমানের অনুসারী তিনি৷ কুতুবপুরে সন্ত্রাসীদের শেল্টারদাতা এবং ভূমিদস্যুতারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে৷ স্থানীয়ভাবে একজন বিতর্কিত ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন হাওলাদার৷ যিনি আলাউদ্দিন মেম্বার বলেই অধিক পরিচিত৷

 

সম্প্রতি আলাউদ্দিন মেম্বারের অফিসে দুই যুবককে পেটানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়৷ ভিডিওতে দেখা যায়, আলাউদ্দিন মেম্বারের উপস্থিতিতে হাত-পা বেঁধে দুই যুবককে কয়েকজন বেধরক পেটাচ্ছে। এ সময় নিজেদেরকে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে কাকুতি-মিনতি জানাচ্ছে। আশপাশে থাকা লোকজন দাঁড়িয়ে দেখছিল। কেউ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি।

 

জানা গেছে, ২০১৯ সালের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর রাতে নাইম ও রাতুল নামে দুই যুবককে ধরে এনে চোর আখ্যা দিয়ে আলাউদ্দিন হাওলাদারের অফিসে বেধরক পেটানো হয়। পরবর্তীতে একটি ছাগল দিয়ে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়৷

 

এদিকে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ ছাগলসহ নাঈম ও রাতুলের ছবি দিয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, শাহী মহল্লা এলাকা থেকে ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর শফিকুল ইসলামের বাড়ি থেকে দুটি বিদেশী জাতের ছাগল চুরি হয়। পরে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জ থেকে সে ছাগল উদ্ধারসহ দুজনকে আটক করা হয়। ১ জানুয়ারি তাদেরকে নিয়মিত মামলা দায়েরের মাধ্যমে কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু আলাউদ্দিন হাওলাদার দাবি করেছিলেন, সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি এলাকা থেকে ছাগল উদ্ধার করা হয়েছিলো।

 

যোগাযোগ করা হলে নাঈমের মা নাজমা বেগম বলেন, আমার পোলায় প্রিন্টিং কারখানায় কাম করে। ৩১ ডিসেম্বর রাতুলের লগে পোলারেও ধইরা লইয়া যায়। মারতে মারতে লইয়া গেছে। পরে আবার আলাউদ্দিন হাওলাদার তার অফিসে লইয়া গিয়া ইচ্ছামত মারছে। কুত্তারেও মাইনষে অমনে পেডায় না। আমার পোলায় অন্যায় করলে আমগো জানাইতো, পুলিশরে দিতো, হেয় অমন কইরা মারলো ক্যান। আমি এর বিচার চাই।

 

এদিকে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন হাওলাদার মারপিটের কথা স্বীকার করে বলেন, তারা ছাগল চুরি করেছিলো। সিসি টিভির ফুটেজে ধরা পড়েছিলো। পরে ছাগলের মালিক থানায় অভিযোগ করলে একজন দারোগা আসেন এবং আমার উপর দায়িত্ব দিয়েছিলেন বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য (তবে তিনি দারোগার নাম বলতে পারেননি)। পরে আমি রাতুল নামের একজন ধরে আনার পর সে স্বীকার করছিলো না। পরে তাকে কয়েকটি পিটুনি দিলে সে স্বীকার করে এবং নাঈম সাথে ছিলো জানায়।

 

তিনি আরও বলেন, নাঈমকে ধরে আনার পর প্রথমে স্বীকার না করলে তাকেও কয়েকটা বারি দেওয়া হয়। পরে তারা স্বীকার করে জালকুড়ি ছাগল বিক্রি করেছে। এরপর দারোগাকে খবর দিলে সেই ছাগলসহ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

 

অমন ভাবে পেটানো যে আইনে অপরাধ, সেটি জানেন কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে আলাউদ্দিন হাওলাদার বলেন, হ্যাঁ, এটা অন্যায় হয়েছে। নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি নাই। তাই মাইরটা একটু বেশি হয়ে গেছে। কিন্তু আমি তো ছাগল উদ্ধার করেছি।

 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান বলেন, কেউ আইন হাতে তুলে নিতে পারে না। এটা অবশ্যই অপরাধ। ওভাবে যদি পিটিয়ে থাকে, সেটি যদি আমাদের নজরে আসে অথবা কেউ যদি লিখিত অভিযোগ দেন তাহলে অবশ্যই আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com