কী ঘটছে নবীনগর শাহ্ওয়ার আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে!
ফতুল্লা প্রতিনিধি, প্রেসবাংলা২৪ডটকম: দূর্নীতি অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে অনেকটা রাম রাজত্ব কায়েম করেছেন নবীনগর শাহ্ওয়ার আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুণ অর রশিদ। ফতুল্লার এনায়েতনগর ইউনিয়নের নবীনগরের এই বিদ্যাপীঠটি অল্প সময়ে বেশ সুনাম কুড়ালেও ভেতরে ভেতরে শিক্ষাবাণিজ্যের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন হারুণ অর রশিদ। শুধু তাই নয়, স্কুলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় যেই প্রতিবাদ মুখর হয় তার বিরুদ্ধেই আদা-জল খেয়ে নামেন এই প্রধান শিক্ষক।
স্থানীয়দের দাবি, শুধুমাত্র প্রধান শিক্ষকের এহেন কর্মকাণ্ডে একদিকে যেমন বিদ্যাপীঠটির সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে, অন্যদিকে এলাকায় স্কুল প্রতিষ্ঠাতা পরিবার সর্ম্পকে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি হচ্ছে।
তাদের দাবি, ১৯৯৫ সালে এনায়েতনগরের নবীনগর এলাকায় দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ হামিদা আলীর স্বামী মোহাম্মদ আলী তার বাবার নামে প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার আলো জ্বেলে দেবার উদ্দেশ্যে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত করেন। শুধুমাত্র হামিদা আলীর কারণে এই স্কুলটির নাম দ্রুত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ২০১৫ সালে স্কুলে যোগদানের পর থেকে একশ্রেণীর অসাধু শিক্ষকদের যোগসাজসে হারুণ অর রশিদ স্কুলটিকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করছেন। প্রায় ১৩শ’ শিক্ষার্থীর বিশাল আয়তনের এই স্কুলটি সুনামের সাথে দুই দশক পার করলেও সম্প্রতি স্কুলটি নিয়ে নানা নেতিবাচক ঘটনা শোনা যাচ্ছে।
স্থানীয়দের দেয়া তথ্যমতে, স্কুলে প্রধান শিক্ষক হারুণ অর রশিদ-ই যেন শেষ কথা। তিনি যা বলেন, স্কুলে তাই হয় এর বাইরে কিছু নয়। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। তবে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি স্কুলে ৮ম ও দশম শ্রেণীতে বাধ্যতামূলক কোচিং করান। শুধু তাই নয়, নিজের পছন্দমতো শিক্ষকের কাছেই কোচিং করতে হবে। যদি কেউ তার নিদের্শমতো শিক্ষকের কাছে না পড়ে তবে তাকে পরীক্ষার সময় নানাভাবে হয়রানি করা হয়। এমনকি ফেল-ও করিয়ে দেয়া হয়।
আরও অভিযোগ রয়েছে, তার পছন্দের ওই তিন শিক্ষক মিজান, হিমেল ও রাসেলের কাছ থেকে শিক্ষার্থী রেফার্ড করা বাবদ একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের মাসোহারা নেন। বছরে দু’টি পরীক্ষার কথা থাকলেও তিনি নেন চারটি পরীক্ষা। বাকি দু’টো পরীক্ষার ফি-ও ওই পরীক্ষার সমান। প্রায় ১৩শ’ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে গড়ে ৩২০টাকা করে দুই পরীক্ষায় তিনি হাতিয়ে নেন প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা।
খোদ স্কুলের কয়েকজন শিক্ষকের অভিযোগ, পুরো স্কুলটি সিসি ক্যামেরার আওতায় হলেও প্রধান শিক্ষকের কক্ষটি সিসি ক্যামেরার আওতামুক্ত। তাদের দাবি, নানা সময় অনেকেই তার সাথে অবৈধ লেনদেন করেন। কেউ কেউ আসেন স্কুল পরিদর্শনের নামেও।
২০২০ সালে অনুষ্ঠেয় এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য ৭২ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নেয়ারও অভিযোগ তুলেছেন কয়েকজন অভিভাবক। ৩১জন ছাত্রী ও ৪১জন ছাত্রের ‘শর্তযুক্ত তালিকা’ স্কুল প্রাঙ্গণে টাঙিয়ে দিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়।
তবে এই অল্প সময়ে দূর্নীতি স্বেচ্ছাচারিতার যে কেউ প্রতিবাদ করেননি তা নয়। স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক বিভিন্ন সময় এসব কাজের প্রতিবাদ করেছেন। এমনকি এসব বিষয় হামিদা আলীকেও জানানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে হামিদা আলীও নীরব।
স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন, শুধুমাত্র প্রতিবাদ করার কারণে আরমান, সোহাগ ও শারিরিক প্রতিবন্ধি জাকির নামের তিন শিক্ষক একে একে তার রোষানলে পড়েছেন। এরমধ্যে জাকিরকে তিনি স্কুল ছাড়া করেছেন। আরমান নামের শিক্ষককে এক স্কুল ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অপবাদ দিয়ে শায়েস্তা করেন। তবে সোহাগ নামের অপর শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল-তিনি বেনামে প্রধান শিক্ষকের দূর্নীতিকে নিয়ে একটি কবিতা লিখে সামাজিক যোগাযোম মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে স্কুলের প্রধান শিক্ষক হারুণ অর রশিদ বলেন, আপনি জানেন এই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কে? হামিদা আলী; তাঁর সামনে এ ধরণের কাজ করার বুকের পাটা ক’জনের আছে। স্কুলের এ ধরণের কোন অনিয়ম হয় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, দূর থেকে অনেক কিছুই শোনা যায়। আপনি কাছে আসেন, দেখে যান। ফোনে সব বলা যায় না, আশা করি ভাল লাগবে-বলেই ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা আবু তালেব বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে কোন অভিযোগ আসে নাই। যদি কোন অভিযোগ আসে তবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।