আলোক পথের যাত্রী: ড. ইকবাল হোসেন

 

বিশেষ প্রতিবেদক, প্রেসবাংলা২৪ডটকম: শিল্প-সংস্কৃতির নগর প্রাচ্যের ডান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জে অনেক গুণীর জন্ম হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত অনেকের জন্ম এই জেলায়। ক্রীড়া-সংস্কৃতিতেও এই জেলা আলো ছড়িয়েছে। নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস ও সুনাম অতি পুরানো। মসলিনের জন্য এ জেলার বিশ^জোড়া খ্যাতি জুটে। ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম সহ নানা আন্দোলনেও এ জেলার কৃতিসন্তানরা জোরালো ভূমিকা রেখেছে।

 

এদেশের ক্রীড়াপ্রেমীরা এখনো নারায়ণগঞ্জের মোনেম মুন্না এবং আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু সহ আরো অনেক ফুটবলারকে হৃদয়ে ধারণ করে। ক্রিকেটার জাহাঙ্গীর আলমের ক্রীড়ানৈপূণ্যও কম কিসে। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে জন্ম নেয়া প্রয়াত অভিনেত্রী পারভীন সুলতানা দিতি; একজন পরিচ্ছন্ন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে সকলের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। নারায়ণগঞ্জের কে. এম সফিউল্লাহ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত হন। কে. এম সফিউল্লাহ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সেনাপ্রধান ছিলেন। সফিউল্লাহ’র ভূমিকা ও অর্জন নারায়ণগঞ্জকে করেছে সম্মানিত। এমন আরও বহুনাম রয়েছে, যারা নারায়ণগঞ্জকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতীয়ভাবে সমৃদ্ধ করেছে। অতীত ও বর্তমান সুনামের ধারাবাহিকতায় জাতীয় ক্ষেত্রে নারায়ণঞ্জের ভবিষ্যৎ অবস্থান সুদৃঢ় করার দায়িত্ব স্বাভাবিকভাবে বর্তায় বর্তমান তরুণদের প্রতি।

 

এমন তরুণ ব্যক্তিত্বদের নিয়ে প্রেসবাংলা’র ধারাবাহিক আয়োজন- ‘আলোক পথের যাত্রী’।

 

এর ধারাবাহিকতায় আজকের অতিথি-বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো: ইকবাল হোসেন

 

ড. মো. ইকবাল হোসেন ১৯৮২ সালের ২০ মে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার কাশীপুর ইউনিয়নের নলুয়া রোড এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মৃত মো. হাবিব উল্লাহ; পেশায় ছিলেন একজন সরকারী কর্মকর্তা। মাতা মোসাম্মাৎ সালমা বেগম, একজন গৃহিনী। পাইকপাড়া ১৬নং বঙ্গবন্ধু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। অতঃপর শহরের জয়গোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারী তোলারাম কলেজে লেখাপড়া শেষে ভর্তি হন এদেশের প্রকৌশল শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট)। ২০০৬ সালে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতক সম্পন্ন করেন । স্নাতক পর্যায়ে ফলাফলের জন্য বুয়েট থেকে নিয়মিতভাবেই পেয়েছেন মেধাবৃত্তি। বুয়েট তিতুমীর হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। কৃতিত্বপূর্ণ একাডেমিক ফলাফলের জন্য বুয়েট তিতুমীর হল থেকে মেধা-সম্মাননা স্মারকও লাভ করেছেন।

 

শিক্ষা জীবনে তার কৃতিত্বের সূচক সর্বদাই ছিল উর্দ্ধমূখী। নিজ মেধা ও দক্ষতা দিয়ে স্নাতক শেষের পূর্বেই পিএইচডি স্কলারশিপ লাভ করেন শিক্ষা ও গবেষণায় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় নবীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে খ্যাত সিঙ্গাপুর সরকারের নানিয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি থেকে। প্রকৌশল খাতে এটি বিশ্বের পঞ্চম শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান। তিনি কঠোর পরিশ্রমে সাফল্য পান নিজ গবেষণায়। যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে অনুষ্ঠিত কনফারেন্সে গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা’র সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের সুখ্যাতিসম্পন্ন অধ্যাপকগণ তার পিএইচডি থিসিস পরীক্ষক ছিলেন। মাত্র ২৯ বৎসর বয়সে ২০১১ সালে ডক্টরেট উপাধি অর্জন করেন।

 

ড. মো. ইকবাল হোসেন পেশাজীবন শুরুর মুহূর্তে সৌদি আরবের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার প্রস্তাব পান। তবে দেশে ফিরে এসে যোগদান করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সম্মানজনক ফেলোশিপ পেয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষন নেন জার্মানি, নেদারল্যান্ডস ও মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে। বর্তমানে বুয়েট কেমিকৌশল বিভাগে কর্মরত আছেন সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে। খ্যাতিসম্পন্ন আন্তর্জাতিক প্রকাশক: এসিএস, এল্সভিয়ার ও স্প্রিঞ্জার সহ অন্যান্য সাময়িকীতে প্রকাশিত তার নির্বাচিত নিবন্ধের সংখ্যা ১৫। স্নাতকোত্তর পর্যায়ের একটি গবেষণা পুস্তক প্রকাশিত হয় জার্মানিতে। বুয়েট আহসান উল্লাহ হলের ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্ট সহ বিশ্ববিদ্যালয় ও নিজ বিভাগের বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন দক্ষভাবে।

 

ইতিমধ্যে তিনি জাতীয় সংসদ, জাতীয় নির্বাচন কমিশন, ন্যাশনাল অথোরিটি ফর কেমিক্যাল ওএপান্স কনভেনশন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং বিএসটিআই ইত্যাদি জাতীয় প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কমিটি ও সভায় বিশেষজ্ঞ কারিগরি সহযোগিতা দিয়ে চলেছেন। পেশাদার পরামর্শক হিসেবে কারিগরি সেবা দিয়েছেন বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে। তিনি আইএসও ৫০০০১:২০১১ এনার্জি ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম সনদপ্রাপ্ত (সাউথ কোরিয়া) সিনিয়র অডিটর।

 

ড. ইকবাল কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের সর্ববৃহৎ আন্তর্জাতিক পেশাজীবী সংগঠন-আমেরিকান ইনস্টিটিউট অফ কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার্স (এআইসিএইচই) এর সিনিয়র মেম্বার এবং বাংলাদেশ স্টুডেন্ট চ্যাপ্টার এর উপদেষ্টা। তিনি বাংলাদেশ সোসাইটি অফ স্কলারলি জার্নাল এডিটরস এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এছাড়াও আরও রয়েছে তার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংযোগ।

 

এক আলাপচারিতায় ড. ইকবাল জানান, ‘কথায় নয়, আমি কাজে বেশি বিশ্বাসী। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হবে। যথাযথভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালনে দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। নিজেকে একজন দক্ষ পেশাদার হিসেবে দেখতে চাই।’

 

নিজের জন্মস্থান কাশীপুরে বিজ্ঞান শিক্ষাকে জনপ্রিয় করতে তার ইচ্ছার কথা জানান। সেই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে হাটখোলা উচ্চ বিদ্যালয়ে গড়ে তুলেছেন একটি আধুনিক বিজ্ঞানাগার। কাশীপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় বিজ্ঞানাগারে ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রয়োজনীয় সকল বিজ্ঞান সামগ্রী-যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সকল বিদ্যালয়ে আধুনিক বিজ্ঞানাগার করতে সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি জানান।

 

পারিবারিক জীবনে ড. ইকবাল এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। স্ত্রী রেজওয়ানা ইসহাক ঐশী একজন পোস্টগ্রাজুয়েট।

 

প্রেসবাংলা https://www.facebook.com/iqbal.che.buet?epa=SEARCH_BOX  ড. ইকবাল হোসেন ও তার পরিবারের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল ও সফলতা কামনা করে।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com