আ’লীগের সম্মেলন: আলোচনায় আইভী-শামীম-বাবু
প্রতিবেদক, প্রেসবাংলা২৪ডটকম: দীর্ঘদিন ধরে দলের পদে নেই আলোচিত শামীম ওসমান। জেলার সাধারণ সম্পাদক ছাড়ার পর থেকেই পদবিহীন এই প্রভাবশালী নেতা নানা সময়ে আলোচিত। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে দক্ষিণমেরুর নিয়ন্ত্রক বলে পরিচিত স্বচ্ছ রাজনীতির নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীও খুব একটা বড় পদে নেই। সম্প্রতি যুবলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের সময় বেশ জোরেশোরেই উচ্চারিত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর নাম। আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে এই তিন নেতার নাম আবারও আলোচনায় এসেছে।
জন্মলগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগের ইতিহাসের সাথে নারায়ণগঞ্জের নাম জুড়ে আছে। আওয়ামী লীগের সম্মেলনের ঘোষণা এলেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া নিয়ে সবসময় আলোচনায় থাকেন নারায়ণগঞ্জের নেতারা। এবারও বাদ নেই সেই আলোচনা। বিগত কাউন্সিলগুলোতে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারায়ণগঞ্জের একাধিক নেতার নাম বার বার আলোচনায় এলেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পেয়েছিলেন মাত্র দু’জন- মোস্তফা সারোয়ার ও অধ্যাপিকা নাজমা রহমান। এরমধ্যে মোস্তফা সারোয়ার হলেন প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সন্তান। তিনি খান সাহেব এম ওসমান আলীর ছেলে। ভাষা আন্দোলনেও রয়েছে তার অবদান। তিনি ৭৪ সালের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সংস্কৃতি সম্পাদক হন। এরপর দীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পায়নি নারায়ণগঞ্জের কেউ। সর্বশেষ ২০০২ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জের অধ্যাপিকা নাজমা রহমান কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। নাজমা রহমান ছিলেন আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে আসা নেত্রী। তারপর থেকে আবারও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বশূন্য নারায়ণগঞ্জ।
তবে আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য আওয়ামী লীগের ২১তম সম্মেলন ঘিরে আবারও নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে উচ্ছ্বাস ও প্রাপ্তির আকাঙ্খা। তারা নারায়ণগঞ্জ থেকে এবার কাউকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে চাইছেন।
জানা গেছে, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতারাই এবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পাবেন। দুর্নীতি ও অপকর্মের সঙ্গে জড়িতরা কোনভাবেই কেন্দ্রে জায়গা পাবেন না বলে ইতিপূর্বে জানিয়েছেন একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা। সম্মেলন নিয়ে সারা বাংলাদেশেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে উত্তেজনা ও ব্যাপক উচ্ছ্বাস। বাদ পড়ছে না নারায়ণগঞ্জও। ইতিমধ্যে স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে কেন্দ্রে স্থান পাওয়া সম্ভাব্য নেতাদের নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও রয়েছে জোর প্রচারণা। কেন্দ্রে স্থান পাওয়া সম্ভাব্য নেতাদের এই তালিকায় রয়েছেন- নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবু।
তবে কেন্দ্রীয় পদ পেতে এই দৌড়ে এগিয়ে আছেন রাজনীতিতে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অধিকারী নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। নারী কোটায় এগিয়ে থাকা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে থেকে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার গুডবুকে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে এবার সম্মেলনে সারা বাংলাদেশের তৃণমূলের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে বলে জানা গেছে। সেদিক থেকে এগিয়ে আছেন সাংসদ শামীম ওসমান, নজরুল ইসলাম বাবু ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন। বিগত সময়ের মতো নারায়ণগঞ্জে বিশাল কর্মীবাহিনী নিয়ে নিজের প্রভাব বজায় রেখেছেন সাংসদ শামীম ওসমান। তবে বিগত সম্মেলনগুলোতে শামীম ওসমানের অনুসারীরা যেমন কেন্দ্রীয় পদ পাওয়ার বিষয়ে নেতার হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালাতেন এবার তা লক্ষ্য করা যায়নি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবুও রয়েছেন তালিকায়। এক সময়ের তুখোর ছাত্রনেতাকে মূল্যায়ন করে কেন্দ্রীয় কমিটিতে দেয়া হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদ। তৃণমূল থেকে উঠে আসা ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে আনোয়ার হোসেনের নামও রয়েছে আলোচনায়।
তবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে যেই আসুক না কেন নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দাবি, দলের প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা নারায়ণগঞ্জ থেকে কাউকে যেন এবার কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখা হয়।