নাগেশ্বরী উপজেলায় ৭টি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু!

 

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি, প্রেসবাংলা২৪ডটকম: কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর ভিতরবন্দ ইউনিয়নের ঝাকুয়াবাড়ী গ্রামে ডিগডারী বিলের ওপর নির্মিত সেতুটি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় বছর পাঁচেক আগে। দুই পাশের রেলিংসহ ভেঙে যায় পাটাতনের অর্ধেকেরও বেশি অংশ। কিন্তু দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি পুননির্মাণ করা হয়নি। এ অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে সেতুটি দিয়ে পারপার হচ্ছে দুই ইউনিয়নের অন্তত ৭০ হাজার মানুষ।

 

শুধু ঝাকুয়াবাড়ীর এ সেতুই নয়, নাগেশ্বরী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সূত্র অনুযায়ী, উপজেলায় বিভিন্ন সময় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরো ছয়টি সেতু ও কালভার্ট। এগুলো হলো নাগেশ্বরীর জেসি-কচাকাটা সড়কের ৩৩ মিটারের সেতু, মনছের হাজি মোড়-আছমতের মোড় সড়কের ২০ মিটারের সেতু, কামারপাড়া-বটতলা বামনডাঙ্গা ইউপি অফিস সড়কের ২২ মিটার সেতু, বাকুরের বাসা-ওয়াপদা সড়কের ৪৪ মিটার সেতু, ভিতরবন্দ-নুনখাওয়া সড়কের ১২ মিটার ও কচাকাটা বাজার-বিওপি সড়কের ৮৪ মিটার সেতু।

 

স্থানীয়রা জানান, ঝাকুয়াবাড়ীর ডিগডারী বিলে ৫০ ফুট দীর্ঘ সেতুটি নির্মিত ৩০ বছর আগে। নির্মাণের পর এটির কোনো সংস্কার হয়নি। ফলে দুর্বল হয়ে পড়া সেতুটি পাঁচ বছর আগে বন্যায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে সেতুর ওপর দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। হেঁটে পারাপারও হতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। অন্যদিকে যানবাহনে পণ্য নিয়ে জেলা শহরে যেতে অন্য পথে ঘুরতে হচ্ছে পাঁচ কিলোমিটারেরও বেশি। এতে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে তাদের অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে সময় ও অর্থ।

 

তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই সেতুটি দিয়ে পারাপারে দুর্ভোগ পোহাতে হলেও এটি নতুন করে নির্মাণে কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। এ বিষয়ে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাবিবুল ইসলাম বলেন, এ সেতু দিয়ে স্কুল-কলেজগামী বহু শিক্ষার্থীকে চলাচল করতে হয়। এর মধ্যে অনেক শিশুও রয়েছে। সেতুর মাঝখানে ভাঙা থাকায় তাদের অভিভাবকরা সবসময়ই দুর্ঘটনার দুশ্চিন্তায় থাকেন। সেতুটি নির্মাণের জন্য বহুবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

 

ভিতরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শফিউল আলম শফি বলেনে, ভিতরবন্দ ও কালীগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের মানুষের চলাচলের দুর্ভোগ নিরসনে যত দ্রুত সম্ভব সেতুটি নতুন করে নির্মাণ করা প্রয়োজন।

 

এ বিষয়ে নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বাদশা আলমগীর বলেন, ঝাকুয়াবাড়ী গ্রামের সেতুসহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার সাতটি সেতু পুননির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রকল্প প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই সেতুগুলো নির্মাণে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।

 

এদিকে এলজিইডি কুড়িগ্রাম জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ের বন্যায় জেলার নয় উপজেলায় এলজিইডির ১০৩টি পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব সড়কের দৈর্ঘ্য ১৬৫ কিলোমিটার, যা নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২ কেটি ১০ লাখ টাকা। একই সঙ্গে জেলায় মোট ৪৮৪ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪৩টি সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা পুননির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

 

কুড়িগ্রাম স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ আব্দুল আজিজ বলেন, জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পাকা সড়ক ও সেতু নির্মাণে মোট ৫০ কোটি ৩৫ লাখ টাকার প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবনা পাস হলেই এসব সড়ক ও সেতু নির্মাণ করা হবে।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com