মুসলিমনগরে আগুন: স্বামীর তালা স্ত্রীকে নিয়ে গেল যমের ঘরে

 

রুদ্র প্রকাশ, প্রেসবাংলা২৪ডটকম: ছুটির দিন। স্বামী ঘুরতে যাবেন বাইরে, তাই নিজেকে ঘরে তালা দিয়ে যেতে বললেন স্বামীকে। কিন্তু কে জানতো এই তালাই শেষ তালা। তাকে নিয়ে যাবে যমের ঘরে।

 

শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ফতুল্লার মুসলিমনগরে আগুনের ঘটনায় নিহত শম্পা বেগম (২২) তালাবদ্ধ ঘরেই পুড়ে ছাঁই হয়েছেন। স্ত্রীকে বাঁচানোর শত চেষ্টাও কাজে লাগেনি স্বামী সুমনের। আগুনের খবর শুনে দ্রুত বাড়িতে ফিরে তালা খোলার নানা চেষ্টা করলেও তা খোলা সম্ভব হয়নি। তবে শেষ পর্যন্ত তালা খুলে পেয়েছেন স্ত্রীর দগ্ধ লাশ।

 

স্বামী সুমন জানান, বিকালে বাড়িতে আসার পর শম্পা বলল, বাইরে গেলে ঘরে তালা মেরে দিয়ে যান। ঘরে তালা মেরে দিয়ে আমি নামাজ পড়তে যাই। আগুনের খবর শুনে দৌড়ে ফিরে আসি। কিন্তু আগুনের কারণে কেউ আমাকে তালা খুলতে দেয়নি। পরে স্ত্রীর কথা বলায় তালা খুলতে দেয়। কিন্তু ততক্ষণে শম্পা আর নেই।

 

শম্পা মুন্সিগঞ্জের কলমা এলাকার সুমনের স্ত্রী। স্বামী-স্ত্রী উভয়ে ক্রোনী গ্রুপ নামে একটি পোষাক কারখানায় কাজ করতো। তারা মুসলিমনগর নয়াবাজারে ইলিয়াস মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকতো। কম টাকা ভাড়ায় থাকার জন্য নভেম্বরে শুরুতে তারা বাড়ি বদল করে এই বাড়িতে আসে।

 

শুক্রবার সন্ধ্যায় ফতুল্লার মুসলিমনগর নয়াবাজারে ইলিয়াস মিয়ার বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের ধারণা, গ্যাসের চুলা থেকে আগুন লেগে অন্তত পুরো পুড়ে ছাঁই হয়েছে। আগুনে ইলিয়াস মিয়ার বাড়িটি টিনসেটের দোতালা এবং নিচে ২০টি রুম উপরে ২০টি রুম ছিল। আগুনে বাড়িটির সবগুলো রুম পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবে কোন হতাহত হয়নি। ভাড়াটিয়াদের মালামালও পুড়ে ছাই হয়েছে।

 

বাড়ির এক ভাড়াটিয়া সূত্রে জানা গেছে, সিলিন্ডার গ্যাসের চুলা থেকে আগুনের উৎপত্তি। চুলায় আগুন জ্বালিয়ে কাপড় শুকানো হচ্ছিল। পরে কাপড়ে আগুন লেগে উপড়ে উঠে যায় শিখা এবং ঘরে আগুন লেগে যায়।

 

খবর শুনে নিকটবর্তী একটি পোষাক কারখানার বিসিকের ফায়ার সার্ভিস এসে আধ ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ফায়ার কর্মী জানায় বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের উৎপত্তি হতে পারে।

 

তবে দমকল কর্মীদের অভিযোগ, রাস্তায় জ্যাম থাকার কারণে নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট দেরীতে পৌছায়।

 

এদিকে ঘটনার কথা শুনে ঘটনাস্থলে পৌছান নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা বারিক। তিনি  নিহতের স্বামী ও পরিবারকে সান্তনা জানান এবং তাদের হাতে ২০ হাজার টাকা অনুদান তুলে দেন । এ সময় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান ও নিহতের পরিবারকে লাশ দাফনের জন্য ১০ হাজার টাকা অনুদান দেন।

 

 

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com