আ’লীগের ঘরে ১৬ বছর ধরে জামায়াত নেতা!

 

ফতুল্লা প্রতিনিধি, প্রেসবাংলা২৪ডটকম: ১৬ বছর ধরে তিনি ফতুল্লা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। ২০০৩ সালে গঠিত কমিটিতে তাকে সসম্মানে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বানানো হয়। কিন্তু পুরোনো একটি চাঁদার রশিদে জানা গেল তিনি জামায়াতে ইসলামীর একনিষ্ঠ কর্মী ও দাতা। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় থানা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাই এ বিষয়টি জানতেন না! ১৬ বছর পরে আব্দুল জলিল নামের ওই ব্যক্তিকে নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগে।

 

বিভিন্নসূত্রে জানা গেছে, আব্দুল জলিল মাদবরের পৈত্রিক নিবাস ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জের রুহিতপুরে। স্বাধীনতাযুদ্ধে সময় তার বিতর্কিত ভূমিকার কারণে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এলাকাবাসীর রোষনালে পড়ে এলাকা ছেড়ে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার দাপা ইদ্রাকপুরে শৈলকুড়িয়া চলে আসেন। আশ্রয় নেন স্থানীয় প্রভাবশালী ইয়াছিন মাদবরের বাড়ীতে। এরপর তিনি ওই মাদবর বাড়িতে বিয়ে করেন। বিয়ের পর বিয়েসূত্রে তিনিও বনে যান মাদবর। ঘর জামাই থেকে ধীরে ধীরে শৈলকুড়িয়া এলাকায় নিজের অবস্থান শক্ত করে ফেলেন। আব্দুল জলিল মাদবর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর শৈলকুড়িয়ায় জামায়াত ইসলামকে সুসংগঠিত করার কাজে সক্রিয় হয়ে উঠেন। এই সংগঠনটির আর্থিক যোগান দিতে ‘বায়তুল মাল’ নামে তহবিল সংগ্রহের কাজে মাঠে নামেন। ধীরে ধীরে সদস্য সংগ্রহ করে গোপনে জামায়াতে ইসলামীকে সংগঠিত করতে থাকেন। নিজেও চাঁদা দিতেন নিয়মিত। এসব চাঁদার রশিদ এ প্রতিবেদকের হস্তগতও হয়েছে।

 

কিন্তু ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র্রীয় ক্ষমতায় আসার পরে তিনি রাতারাতি কৌশলে বদলে যান। আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতার সাথে সর্ম্পক গড়ে তোলেন। ওইসব নেতাদের নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ক্রমে আওয়ামী লীগে প্রবেশ করতে শুরু করেন। কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি বনে যান আওয়ামী লীগ নেতা! ২০০৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তাকে বানানো হয় ফতুল্লা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। এরপর থেকে তিনি প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ নেতা।

 

দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসলেও হঠাৎ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আব্দুল জলিল মাদবরের জামায়াতে ইসলামীতে আর্থিক অনুদান দেবার রশিদের দু’টি কপি ভাইরাল হয়। এর সূত্র ধরে আওয়ামী লীগ নেতারাও নড়েচড়ে বসেন। পরবর্তীতে তদন্ত করতে গিয়ে এর সত্যতাও পান তারা।

 

এ বিষয়ে ফতুল্লা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেহান শরীফ জানান, আব্দুল জলিল মাদবরের বিষয়ে এ অভিযোগটি আসার পরে আমরা তদন্ত শুরু করি। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনি একসময় জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফলে তার বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

 

তিনি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে আগামী কাউন্সিলর উপলক্ষ্যে তালিকায় তার নাম বাদ দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে কমিটি গঠন হলে তাকে দল থেকে বাদ দেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে এখনও তাকে বহিঃস্কার করা হয়নি।

 

এতদিন পরে হঠাৎ করে তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের পেছনে কোন ব্যক্তিস্বার্থ রয়েছে কী-না এমন প্রশ্নের জবাবে রেহান শরীফ বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা দলে অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়ার নির্দেশ দেবার পরে মূলত: আমরা এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেই। এখানে কোন ব্যক্তিস্বার্থ নেই।

 

এ বিষয়ে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম শওকত আলী জানান, আমিও বিষটি শুনেছি। তবে এ বিষয়ে আমার কাছে কোন তথ্য নেই। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে কথা বলে আপনাকে জানাব।

 

তবে এ বিষয়ে আব্দুল জলিল মাদবর জানান, সামনে আওয়ামী লীগের কমিটি হচ্ছে। আমাকে এই ওয়ার্ডের (১নং) সভাপতি বানাতে চাইছে। কিন্তু কিছু নেতাকর্মী এই নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তিনি জানান, তার বাড়িতে একজন লজিং মাস্টার থাকতো ওই লোকটা শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত। সে দুই এক বার ওয়াজের নামে আমার কাছ থেকে চাঁদা নিতো। কিন্তু পরবর্তীতে জানার পরে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি। হয়তো সেসব রশিদ আপনারা দেখেছেন। আমি চাঁদা দিলেও ওইসব রশিদ আমার কাছে নেই। কিন্তু তাদের কাছে থাকা মানে প্রমাণ করে এটা ষড়যন্ত্র।

 

আব্দুল জলিল আরও জানান, তিনি কখনোই জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। তোলারাম কলেজের পড়াশোনা করার জন্য তিনি উত্তর কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জে আসেন। কলেজের পড়াশোনাকালে ওইসময়ের ভিপি (বর্তমানে কৃষক লীগ নেতা) রোকনউদ্দিন ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সাথেও তার সখ্যতা গড়ে উঠে বলে দাবি করেন।

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com