র‌্যাবের অভিযানে পাসপোর্ট তৈরির প্রতারক চক্রের ২জন আটক

নারায়নগঞ্জ প্রতিনিধি, প্রেসবাংলা২৪ডটকম: নারায়ণগঞ্জে র‌্যাবের অভিযানে পাসপোর্ট তৈরির প্রতারক চক্রের আরো ২জন সদস্য আটক হয়েছে । তাদের বিরুদ্ধে জন্ম সনদে চেয়ারম্যানের জাল স্বাক্ষর ও সচিবের জাল স্বাক্ষর করে পাসপোর্ট তৈরী করার প্রমান পাওয়া গেছে । জন্ম সনদে স্বাক্ষর এর ব্যাপারে র‌্যাব -১১ চেয়ারম্যান ও সচিবকে জিজ্ঞাসা করলে তারা তাদের জাল স্বাক্ষর বলে নিশ্চিত করে ।

 

বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) বিকেলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানায় র‌্যাব-১১।

র‌্যাব জানায়, র‌্যাবের অভিযানে ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে পাসপোর্ট তৈরির প্রতারক চক্রের আরও ২ সদস্যকে আটক করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৬০টি ভুয়া জন্ম সনদপত্র, ১০টি ভুয়া জাতীয় পরিচয় পত্র, ৭টি পাসপোর্ট ও জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত ১টি মনিটর, ১টি সিপিইউ এবং ১টি স্ক্যানার মেশিন জব্ধ করা হয়।

র‌্যাব-১১ এর সিনিয়র সহকারি পরিচালক মো. জসিম উদ্দীন চৌধুরী জানান, ৯ অক্টোবর রাতে ঢাকার ফকিরাপুল ও মতিঝিল এলাকা থেকে দুইজনকে আটক করা হয়। আটকরা হলো, মো. হেদায়েতুর রহমান (৪৫) ও মো. ইব্রাহীম (৩০)। প্রাথমিক অনুসন্ধান ও আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাতে র‌্যাব জানায়, আটকৃত হেদায়েতুর রহমান জালিয়াতি বা প্রতারক চক্রের মূলহোতা। আটককৃত ইব্রাহীম ফকিরাপুলে একটি কম্পিউটার কম্পোজের দোকানের কর্মচারী এবং সে উক্ত জালিয়াতির চক্রের সহযোগী। গ্রেফতারকৃত হেদায়েতুর রহমানের বাড়ী কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানাধীন কাকারা গ্রামে। সে দীর্ঘ এক যুগ ধরে ঢাকার ফরিকাপুল এলাকায় বসবাস করে আসছে। শুরুতে পাসপোর্ট অফিসের অফিসের দালালি ও ভিসা প্রসেসিং এর কাজ করলেও পরবর্তীতে পাসপোর্ট জালিয়াতি চক্রের সাথে জড়িয়ে পড়ে। তার বাড়ী কক্সবাজার জেলাতে হওয়ায় কক্সবাজার এলাকায় কয়েকজন পাসপোর্টের দালাল চক্রের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা তৈরী হয়। কক্সবাজারে উক্ত পাসপোর্টের দালাল চক্রগুলো মূলত মায়ানমারের বাস্তচ্যুত নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) ভুয়া পাসপোর্ট তৈরীর মাধ্যমে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ করে দিত। সম্প্রতি কক্সবাজার জেলার জন্ম নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট তৈরীতে সরকারী বিধি নিষেধের কারণে উক্ত এলাকার জালিয়াতি চক্রগুলো হেদায়েতুর রহমানের মাধ্যমে ঢাকায় পাসপোর্ট তৈরী করত।

 

ঢাকায় হেদায়েতুর রহমানে ঘনিষ্ট সহযোগী হিসেবে কাজ করত তার ভাতিজা সুমন। হেদায়েত কক্সবাজার ও অন্যান্য এলাকায় দালাল চক্রের চাহিদা মোতাবেক ভাতিজা সুমনের মাধ্যমে ব্যক্তির নাম, ঠিকানা ও জন্ম তারিখ দিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার আজিম নামের এক ব্যক্তির নিকট হতে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সংগ্রহ করত। প্রতিটি অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের জন্য ১৩০০ টাকা দিত।

এর আগে গত ১১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের পাশে র‌্যাব-২ এর অভিযানে আজিম গ্রেফতার হয়। র‌্যাব-২ এর দায়েরকৃত মামলায় বর্তমানে আজিম জেল হাজতে রয়েছে।

 

র‌্যাব আরো জানানয়, র‌্যাব -১১ এর অভিযানে উদ্ধারকৃত অধিকাংশ জন্ম নিবন্ধনে রূপগঞ্জ উপজেলার রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিবের স্বাক্ষর রয়েছে এবং যাদের নামে উক্ত জন্ম নিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হয়েছে তাদের অধিকাংশের স্থায়ী ঠিকানা কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকায়। রূপগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবের সাথে কথা বলে ও সরেজমিনে যাচাই করে জানা যায় জালিয়াতি চক্র তাদের স্বাক্ষর ও সীল জাল করেছে। কিন্তু ইস্যুকৃত জাল জন্মসনদে উল্লেখিত ১৭ ডিজিটের নিবন্ধন নাম্বার দিয়ে ওয়েব সাইটে যাচাই করে দেখা যায় উক্ত নাম্বারের অনুকূলে উল্লেখিত ব্যক্তির নাম, ঠিকানা ও জন্ম তারিখ মিল রয়েছে।

 

র‌্যাব জানায়, উক্ত তথ্য ভান্ডারে কোন ছবি থাকে না পরবর্তীতে উক্ত জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে পাসপোর্টের আবেদন করলে আবেদনকারীর উল্লেখিত তথ্য জন্ম নিবন্ধনের ডাটাবেসের সাথে মিল থাকলে তারা সহজেই পাসপোর্ট পেয়ে যেত। একইভাবে ব্যক্তির নাম, পিতার নাম, ঠিকানা, বয়স পরিবর্তন করেও পাসপোর্ট করিয়ে নিত এই জালিয়াতি চক্র। কোন ব্যক্তির নামে বিরূপ তথ্য থাকলে কিংবা সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী হলেও নতুন পাসপোর্ট করেও সহজে বিদেশ চলে যাওয়া যায় বলে জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা জানায়।

 

র‌্যাব-১১ কর্মকর্তা জানান,  তাদের বিরূদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং এই জালিয়াতি চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত থাকবে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত পক্রিয়া চলমান ।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com