নজিরবিহীন ভর্তি ফি ও বেতন কমালো রাবেয়া হোসেন উচ্চ বিদ্যালয় !
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি, প্রেসবাংলা২৪ডটকম: নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ইসদাইর রাবেয়া হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২৭৪ জন শিক্ষার্থীদের বেতন ও ভর্তি ফি কমানোর ঘোষনা দিলেন স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। স্কুলের শিক্ষার্থীদের বেতন ৩৫০-৪৫০ টাকার স্থলে ৬০-৭০ এবং ভর্তি ফি ২২৩৯ – ২৫৩৯ টাকার পরিবর্তে ৩০০ টাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে করে স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আনন্দ দেখা দিয়েছে। তবে নজিরবিহীন বেতন-ভর্তি ফি কমানোর সিদ্ধান্তে সভাপতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী ও অভিভাবকবৃন্দ।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টায় স্কুলে হাজির হয়ে সকল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে এমন ঘোষনা দেন কমিটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।
এদিকে রাবেয়া হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান স্কুলের শিক্ষার্থীদের ইতিহাস গড়ার মত বেতন ও ভর্তি ফি কমানোর যে ঘোষনা দিয়েছে তা শুধু ঘোষনার মধ্যে সিমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবায়ন দেখতে চায় অভিভাবকরা। আর সভাপতির এমন ঘোষনাকে সাধুবাদ জানান স্কুলের অভিভাবক সদস্য ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক।
স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জানান, বিদ্যালয়ে উন্নয়নের জন্য এতদিন ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সাড়ে ৩শ টাকা মাসিক বেতন ৮ম থেকে ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের থেকে ৪৫০ টাকা নেয়া হতো এবং ভর্তির জন্য সকলের কাছ থেকে ২২শ থেকে ২৫শ টাকা নেয়া হতো। দীর্ঘদিন যাবৎ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের দাবি ছিল বেতন ও ভর্তি ফি কমানোর। তাদের দাবির পেক্ষিতে তাদেরকে আশ্বাস দিয়েছিলাম। পরে স্কুলের কমিটির অন্য সদস্য ও শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করি এবং তাদের সাথে পরামর্শ করি। তাদেরকে বুুুজানো হয় আমরা যেন ভাল কোন কাজ করতে পারি।
আর আমাকে স্কুলের অভিভাবকরা জানিয়েছেন, ইসদাইর ও আশেপাশে এলাকায় ছেলে মেয়েরা যারা এই প্রতিষ্ঠানে পড়েন তারা অতি গরীব শ্রেণীর। অনেকের একাধিক সন্তান হওয়ায় ভর্তি হতে হিমশিম খেতে হয়। প্রতি মাসে বেতন দিয়ে সংসারে টানাপড়েন থাকে। তাই স্কুলের গভনিংবডির চেয়ারম্যান ও সকল মেম্বার একসাথে বসে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।
সিদ্দিক আরো জানান, শিক্ষার্থীদের থেকে নেয়া ভর্তি ফি, বেতন ও স্থানীয় এমপি শামীম ওসমানের অনুদানে মাধ্যমে বিদ্যালয়ের ল্যাব, উন্নত ওয়াশ রুমসহ সকল উন্নয়ন কাজ করতে পেড়েছি। শিক্ষার্থীদের সকল সমস্যা সমাধান হয়েছে, তাদের শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ চলছে। বেতন ও ভর্তি ফি কমানো কারণে, শিক্ষার্থীদের মধ্য বাড়তি আমেজ লক্ষ্য করা গেছে। নতুন বেতন ও ফি অনুযায়ী এখন থেকে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণীতে সাড়ে ৩শ টাকার বদলে মাত্র ৬০ টাকা, ৮ম থেকে ১০ম শ্রেণীতে সাড়ে ৪শ টাকার বদলে মাত্র ৭০ টাকা বেতন দিতে হবে এবং সকল ভর্তি ফি ২২শ টাকা থেকে ২৫শ টাকার বদলে মাত্র ৩০০ টাকা করা হয়েছে।
সভাপতি সিদ্দিক বলেন, স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সামান্য বেতনের টাকা দিয়ে এমপিও ভুক্ত ছাড়া শিক্ষকদের বেতন দেয়া হবে। সাথে দারোয়ান ও বুয়াদের বেতন দেয়া হবে। আর যারা এমপিও ভুক্ত শিক্ষক রয়েছে তারা তো সরকারী ভাবে বেতন পাচ্ছে। বর্তমান সরকার শিক্ষকদের যে পরিমান বেতন দিচ্ছেন তা দিয়ে তারা স্বচ্ছল ভাবে চলতে পারছে। গরীব শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকা দিয়ে শিক্ষকরা বিলাসীতা করবে তা তো হতে পারে না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের এটি দাবি ছিল। এখানে যারা পড়ে তাদের বেশিরভাগই দরিদ্র শ্রেণীর লোক। অভিভাবকরা বিনা বেতনে পড়ানোর একটি আবেদন করেছিলেন। আমরা তাদের দাবি মেনে নিতে পারিনি। কিন্তু আমাদের সকলের মতামতের ভিত্তিতে আমাদের স্কুলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সাহেব যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে যে ঘোষনা দিয়ে আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। ওনার এ ঘোষনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইতিহাস সৃষ্টি করলো।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলী আকবর, ম্যানেজিং কমিটি সদস্য বাদল মিয়া, কবির হোসেন, ফয়সাল বিন মান্নান, গোলাম মোস্তফা, সাজেদা বেগম, শরিফা মজিদ ও জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাইসুল আহমেদ রবিন ও সোহানুর রহমান শুভ্র প্রমুখ।