বাথরুমে মাদ্রাসা ছাত্রের লাশ, অধ্যক্ষ আটক
সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি, প্রেসবাংলা২৪ডটকম: সিদ্ধিরগঞ্জে আবু তালেব আকাশ (১২) নামে এক মাদরাসা ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। মাদরাসার পরিচালক ও অধ্যক্ষের মতে, মাদরাসার বাথরুমে আবু তালেবের লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। অন্যদিকে নিহতের পরিবারের অভিযোগ, তাদের ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকার সুলতানিয়া তাহফিজুল কুরআনিয়া মাদরাসায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আবু তালেব রূপগঞ্জের গন্ধবপুর উত্তরপাড়া এলাকার সিএনজি চালক জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে। কোরআনের ২১ পারার হাফেজ আবু তালেব মাদরাসাটির হেফজ বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিল।
সুলতানিয়া তাহফিজুল কুরআনিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা আব্দুল নোমান জানান, আড়াই বছর পূর্বে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকার ছয় তলা আবাসিক ভবনের ষষ্ঠ তলায় মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। পরে পার্শ্ববর্তী মাদরাসা থেকে এই মাদরাসায় ভর্তি হয় আবু তালেব। সে ২১ পারার হাফেজ ছিল।
তিনি আরও জানান, আসরের নামাজ শেষে মাদরাসার সহকারি শিক্ষক মাওলানা শোয়াইব জানান, আবু তালেবকে অচেতন অবস্থায় বাথরুম থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। পরে তাকে নিয়ে কাঁচপুরের সুগন্ধা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে থেকে খানপুর হাসপাতালে পাঠালে এখানে নিয়ে আসি। হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মাওলানা নোমান বলেন, সবাই বলতেছে, আবু তালেবের ঝুলন্তভাবে উদ্ধার করেছে। আমি তো তখন ছিলাম না। আমি এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে পারছি না।এদিকে নিহতের আপন চাচা আলমগীর বলেন, এটা কোন স্বাভাবিক মৃত্যু না। আত্মহত্যার কোন প্রশ্নই ওঠে না। আমার সন্দেহ হয়, তারে হত্যা করা হয়েছে। আমি এর সুষ্ঠ তদন্তের দাবি জানাই। এদিকে নাতিকে হারিয়ে হাসপাতালের ভেতর আহাজারি করছেন দাদী মোসলেমা। তিনি বলেন, আমার ভাইরে (নাতি) মাইরা ফালাইছে। আমার ভাইরে কাইড়া নিছে। ভাইয়ে কোরআন পড়তো। কোরআন নাকি সত্য। তাইলে কেন এই কাজটা হইলো!
নিহত আবু তালেবের দুই সহপাঠী আতিকুল ইসলাম ও মারুফ বিল্লাহ জানান, আবু তালেবের পেট ব্যাথা করছে বলে বাথরুমে যায়। অনেকক্ষন ধরে না আসাতে আমার গিয়ে দরজা ধাক্কা দেই। না খুললে দরজা ধাক্কাতে থাকি। পরে দরজা ভেঙ্গে গেলে ভেতরে গিয়ে দেখি বাথরুমের গ্রিলের সাথে গামছা পেছানো আর তাতে ঝুলে আছে আবু তালেব। কিন্তু তার পা বাথরুমের টাইলসের সাথে লাগানো ছিল বলে নিশ্চিত করে নিহতের দুই সহপাঠী।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ ৩শ’ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. অমিত রায় বলেন, হাসপাতালে আসার পূর্বেই তার মৃত্যু হয়েছে। শরীরে কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্ত করলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।
এদিকে খবর পেয়ে হাসপাতালে আসে সদর মডেল থানা পুলিশ। সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সাব্বির খান বলেন, প্রাথমিকভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ময়নাতদন্ত শেষে মৃত্যুর আসল কারণ বলা যাবে। মাদরাসার ছাত্ররা একরকম বলতেছে, নিহতের স্বজনরা অন্য অভিযোগ করতেছে; এই মুহুর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না। অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়টিও এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না।