সিসিতেই ফাঁসলেন ডিসি!

প্রতিবেদক, প্রেসবাংলা২৪ডটকম: নারী সহকর্মীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ব্যাপক আলোচনায় রয়েছেন জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর। জেলার সরকারি শীর্ষ একজন কর্মকর্তার এমন কান্ড হতবাক করেছে সবাইকে। ভাইরাল হওয়া ভিডিও এখন ‘টক অব দ্যা কান্ট্রি’।

গত বৃহস্পতিবার রাতে খন্দকার সোহেল আহমেদ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে জেলা প্রশাসকের আপত্তিকর ৪ মিনিট ৫৭ সেকেন্টের ভিডিটি ভাইরাল হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হওয়া ভিডিওর খবর প্রকাশ হওয়ার পর ভিডিওটি সিসি ক্যামেরায় নাকি গোপন ক্যামেরায় এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার-সমালোচনার জন্ম দেখা দিয়েছে। এমনকি আর্ন্তজাতিক পর্ন সাইটগুলোতে দেখা গেছে আলোচিত সেই ডিসির ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি। তবে অনেকেই বলছেন, ভিডিওটি অফিসের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় (সিসি) ধারণ করা। আবার কেউ বলছেন, ডিসি নিজের অফিসে সিসি ক্যামেরার সামনে নেক্কারজনক কাজটি করতে যাবেনই বা কেন ?

 

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর জামালপুরে যোগদান করেন ২০১৭ সালের ২৭ মে। যোগদানের কিছুদিন পর থেকেই তিনি তার অফিসের কক্ষের পাশে ছোট্ট একটি কক্ষে ধূমপান ও ব্যক্তিগত সরকারি গোপনীয় বৈঠকের জন্য কক্ষটি ব্যবহার করে আসতেন। সম্প্রতি ওই কক্ষে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য একটি খাট বসানো হয়েছে। মূলত নিজের গোপন কাজগুলোই ওই কক্ষে সারতেন ডিসি। এছাড়া ডিসির রুমে যাওয়ার জন্য যে দুটি রাস্তা ছিল, তার একটি বন্ধও করে দেওয়া হয়। অপর গেটটির উপরে আছে লাল এবং সবুজ বাতি। বিশ্রাম কক্ষে নারী নিয়ে প্রবেশ করার সময় লাল বাতি জ্বালিয়ে রাখতেন ডিসি। বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখতেন একজন পিয়ন, যার কাজ ছিলো পাহারা দেওয়া।

 

এছাড়া ভিডিওতে যে নারীকে দেখা যাচ্ছে তিনি এই জেলা প্রশাসকের মাধ্যমেই সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া একই অফিসের একজন অফিস সহায়ক। আর এই নারীর সঙ্গে ডিসির সম্পর্ক এতটাই ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠে যে, অফিস সহায়ক হলেও সবার সঙ্গে তিনি খবরদারি চালাতো এবং অনেকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতো। ফলে তার ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়েই অফিসের কর্মীদের মধ্যে কেউ একজন ওই রুমে গোপন ক্যামেরা সেট করেন। আর তাতেই ধরা পড়ে বিশ্রাম রুমে ডিসির আপত্তিকর ভিডিও। আর সিসিতেই ফেসে যান ডিসি।

 

এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর মানসিকভাবে বিপর্যস্তের কথা স্বীকার করে বলেন, আমি মানষিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত আছি। একটি হ্যাকার গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাকে ‘ব্লাকমেইল করার’ চেষ্টা করে আসছিলো। আমি বিষয়টি গুরুত্ব দেইনি। তিনি আরও দাবী করেন, এটি একটি সাজানো ও বানোয়াট ভিডিও যা একটি ফেক আইডি থেকে পোস্ট দেওয়া হয়েছে। এসময় তিনি সাংবাদিকদের এ বিষয়ে সংবাদ পরিবেশন না করার জন্যও অনুরোধ করেন।

 

এদিকে, ডিসির এই অনৈতিক কর্মকান্ডে জামালপুর জেলার ভাবমূর্তি ক্ষুন্নের অভিযোগে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে জামালপুরবাসীও। দ্রুত নিরপেক্ষ বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি জানিয়েছে নানা পেশার মানুষ।

 

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহম্মদ বাকী বিল্লাহ বলেন, এ ঘটনায় জামালপুর জেলাবাসীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। প্রশাসনিকভাবে নিরপেক্ষ তদন্ত করে বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন।

 

জামালপুরের নারী নেত্রী অ্যাডভোকেট শামীম আরা বলেন, জেলার সরকারি শীর্ষ একজন কর্মকর্তার কাছে নানা সমস্যা নিয়ে নারীরা তার কার্যালয়ে যান। নিরাপত্তাও চান তার কাছে। কিন্তু রক্ষক যদি ভক্ষকের ভূমিকা পালন করেন তাহলে নারীরা কোথায় নিরাপদ। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান।

 

ডিসির সঙ্গে নারীকর্মীর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছড়িয়ে পড়া আপত্তিকর ভিডিওটির তদন্ত করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। অভিযোগ প্রমাণিত হলে উদাহরণ সৃষ্টির মতো শাস্তি হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। রোববার (২৫ আগস্ট) সচিবালয়ে নিজ দফতরে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা জানান তিনি।

 

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘অবশ্যই উদাহরণ সৃষ্টি করার মতো পানিশমেন্ট তার হবে। আমাদের চাকরির বিধানে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়ে গেছে। সেটিই হবে। আমরা খুব দ্রুত একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবো। ইতিমধ্যে নারী অফিস সহকারীর সঙ্গে আপত্তিকর ভিডিও প্রকাশের পর বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয় জামালপুরের ডিসি আহমেদ কবীরকে।

 

এদিকে, আদেশ আসার আগেই জনরোষ আতঙ্ক রাতের আধারে জামালপুর ছেড়েছেন ডিসি। বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গত শনিবার রাত ৩টায় তিনি জামালপুর ত্যাগ করে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে আশ্রয় নেন। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব কে.এম. আল আমীন স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপনে মোহাম্মদ এনামুল হককে জামালপুর জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। উপসচিব এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার স্বাক্ষরিত আরও একটি প্রজ্ঞাপনে আহমেদ কবিরকে ওএসডি করা হয়।

 

অপরদিকে, আলোচিত নারী অফিস সহকারী সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা রোববার (২৫ আগস্ট) কর্মক্ষেত্রে যোগদানের কথা থাকলেও তিনি অনুপস্থিত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাজিব কুমার সরকার।

 

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com