যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে খুন, ঘাতক স্বামী নয়ন গ্রেফতার
বন্দর প্রতিনিধি, প্রেসবাংলা২৪ডটকম : নারায়নগঞ্জের বন্দরে যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতন করে খুন করল নয়ন। এ ঘটনায় ঘাতক স্বামী নয়নকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ।
১৯ আগষ্ট (সোমবার) দিবাগত রাত আনুমানিক ১০টার দিকে বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের আলী সাহার্দী এলাকায় বর্ষার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ । ধারনা করা হচ্ছে রাত আটটায় নয়ন তার স্ত্রী বর্ষাকে খুন করে ।
নয়ন আমাকে প্রতিদিনই মারধর করে । নয়ন আমাকে মেরেই ফেলবে । তোরা আমাকে বাড়ি নিয়ে যা । এখানে থাকলে হয়তে আমার লাশ হতে হবে । আমি এখানে আর থাকতে চাইনা । ছোট বোন মিমকে ভিডিও করে একথা বলছিলেন সুমাই আক্তার বর্ষা। কিন্তু এই কথাগুলো বলার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই নিজের শেবার ঘরের বিছানার উপর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, মাত্র পাঁচ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য প্রায় মারধর করা হতো সুমাইয়া আক্তার বর্ষা (২২) কে । প্রতিদিনের মতো ঘটনার দিনও বর্ষার স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান নয়ন তার দাবিকৃত ৫ লাখ টাকা না পাওয়ায় বর্ষাকে মারধর করে এবং শ্বাসরোধে হত্যা করে বর্ষাকে ।
ছোট বোন মিম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আপুর চোখে মুখে একটা ভয় আর আতঙ্ক দেখা যাচ্ছিল । বেঁচে থাকার আকুতি ছিল তার কন্ঠে । মাত্র পাঁচ লাখ টাকার জন্য তাকে বাঁচতে দেওয়া হলো না । তাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হলো । আমরা নয়নের ফাঁসি চাই তার বিচার চাই ।
নিহতে স্বজনের দাবি, নয়ন একটি প্রাইভেট কোম্পানীর মার্চেন্ডাইজার হিসেবে কাজ করত । কিন্তু কোম্পানীটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সে বেকারগ্রস্থ হয়ে উঠে। পরবর্তিতে সে মাদকে সাথে জড়িয়ে পড়ে । এর মধ্যে নয়নের শশুর মঞ্জুর ভুঁইয়া একটি জমি বিক্রি করে টাকা পেলে ব্যাবসা করার নাম করে পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে । এ নিয়ে প্রায়ই বর্ষাকে মারধর করতো নয়ন । ৩০ জুলাই বর্ষাকে মারধর করে তার মেয়েসহ বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয় নয়ন ।
বর্ষার বাবা বলেন, মেয়ে ও নাতনির মুখের দিকে তাকিয়ে আমি নয়নকে কথা দেই সাধ্যমত আমি টাকা দেওয়ার চেষ্টা করব । ১০ আগষ্ট নয়নকে ডেকে এনে মেয়েকে তার বাড়িতে পাঠিয়ে দেই । কিন্তু টাকা দিতে বিলম্ব করায় প্রায় প্রতিদিন মেয়েকে মারধর ও নির্যাতন করত । ১৯ আগষ্ট বিকেলে আমার ছোট মেয়েকে ইমো নাম্বারে কল দিয়ে তার উপড় নির্যাতনের কথা বলে এবং ঐদিন যৌতুকের টাকা না দিলে মেরে ফেলবে বলে জানায় ।
এঘটনার কয়েক ঘন্টা পর রাত প্রায় ৮টার দিকে নয়নের বাবা শহিদুল্লাহ মিয়া আমাকে ফোন করে জানায়, বর্ষার অবস্থা ভালো নয়, দ্রুত তাদের বাড়িতে আসতে বলে । পরে আমি ও আমার স্ত্রী এবং আমার বড় ভাই দ্রুত মেয়ের শশুর বাড়ি যাই । সেখানে গিয়ে দেখি বাড়িতে অসংখ্য লোকজন শোবার ঘরের বিছানায় আমার মেয়ের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখি এবং ঘটনাস্থতে পুলিশ ও দেখি । আমার মেয়ের গালায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাই । মঞ্জুর ভুঁইয়া কান্না জড়িত কন্ঠে বলতে থাকে নয়ন আমার মেয়েটাকে মেরে ফেলল সে মানুষ না অমানুষ। আমি তার ফাঁসি চাই ।
বন্দর থানার ওসি ইনচার্জ মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, বর্ষার দেহে, গলায় সহ শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে । নিহত বর্ষার বাবা বাদি হয়ে নয়নকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন । হত্যাকান্ডের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে এবং আসামি নয়নকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। লাশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের পর পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে ।