মতি চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনীর কর্মকান্ডে দিশেহারা এলাকাবাসী, এসপির হস্তক্ষেপ কামনা

বিশেষ প্রতিনিধি, প্রেসবাংলা২৪ডটকম : একের পর এক অপকর্ম ও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এলাকবাসীর চোখে এখন আতঙ্ক মতি চেয়ারম্যান ও তার বাহিনী । চরম বিচারহীনতা দিয়ে এলাকা দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছেন মতিউর রহমান চেয়ারম্যান। সরকারী দলের এক এমপির আর্শিবাদে নির্বাচনী বৈতরনী পার হয়ে তিনি এখন আর এলাকাবাসীর সমস্যা সমাধানে আগ্রহী নন।

 

এই `খয়রাতী চেয়ারম্যানের’ কাছে কোন মানুষ এখন আর বিচার পাচ্ছেন না। নিজের আত্মীয় স্বজনদের ভুমিদস্যুতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লেলিয়ে দিচ্ছেন তিনি । দিনের পর দিন বিচারের আশায় তার দুয়ারে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত এখন আলীরটেকবাসী। যার ফলশ্রুতিতে আলীরটেক ইউপি চেয়ারম্যান মতি’র খালাতো ভাই সন্ত্রাসী মজিবর এবং তার বাহিনীর বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের কাছে নালিশ দিলেন আলীরটেক ইউনিয়নের ডিগ্রীরচর গ্রামের গৃহবধু তানিয়া কবির। সে ডিগ্রীরচর গ্রামের আলমগীর কবিরের স্ত্রী।

 

 

এর আগেও আরেকটি পরিবারকে ইউনিয়ন কার্যালয়ে নিয়ে বিচারের নামে প্রহসন করে শিক্ষার্থীকে একশত বেত্রঘাত ও দুই লক্ষ টাকা জরিমানা করেছিলেন মতি চেয়ারম্যান । এবং ক্ষমতা দাপটে ভুক্তভোগীদের মামলা নিতে বাধা প্রদান করে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে মতি চেয়ারম্যান। তৎকালীন এসপির বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিল ভুক্তভোগিরা । প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেছিল তারা, কিন্তু তার পরও কোন বিচার হয়নি মতি চেয়ারম্যানের । এলাকায় সে সবসময় বলে বেড়ায়- ‘আমি এম পির সেলিম ওসমানের লোক আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে কোন লাভ হবে না ।’

 

জানা গেছে মতি চেয়ারম্যানের ফুফাতো ভাই সন্ত্রসী নোয়াব বাহিনী এলাকার ভুক্তভোগীর মেয়ের বিয়ের সময় বিয়ে বাড়িতে বেড়াতে আসা ছেলেপক্ষের লোকজন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় নোয়াবের ছেলে নেশাগ্রস্থ অবস্থায় হামলা চালায় । তাদের উদ্ধার করতে গেলে নোয়াবের সন্ত্রাসী বাহিনী ধাওয়া করে বাড়ি ঘোরাও করে, বাড়িঘর কোপাতে থাকে। এক সময় আক্রমনের শিকার ওই পরিবারটি বক্তাবলী পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দিলে পুলিশ এসে তাদেরকে মুক্ত করে । পরে চেয়ারম্যানের কাছে বিচার চাইলে চেয়ারম্যান তার প্রতিপক্ষ জাকির চেয়ারম্যানের ভাই খবুর বিরুদ্ধে মামলা দিতে বলে। ভুক্তভোগীরা খবুর বিরুদ্ধে মামলা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মতি চেয়ারম্যান মামলাবাজ সন্ত্রাসী নোয়াবের ছেলেকে দিয়ে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে হয়রানী শুরু করে । পরে বিচারের নাম করে কউন্সিলে নিয়ে ভুক্তোভোগীদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক বিচারের রায় দেন এই চেয়ারম্যান। বিচারে একশত বেত্রাঘাত করেন ভুক্তভোগীর ছেলেকে এবং দুই লক্ষ টাকা জরিমানা করে একসপ্তাহের মধ্যে চেয়ারম্যানের কাছে জমা দিতে বলেন । কিন্তু থানায় মামলা থাকা অবস্থায় চেয়ারম্যানের এই রায়ের পর ও নোয়াব বাহিনী এখনো পর্যন্ত সেই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নি।

 

 

বর্তমান এসপির প্রতি মানুষের আকাঙ্খা বেড়ে যাওয়ায় এলাকার জনগন আশা করেছিলেন এইবার হয়তো মতি চেয়ারম্যান তার সন্ত্রাসী বাহিনীকে সামলিয়ে রাখবেন । কিন্তু ক্ষমতার বলে মতি তার সন্ত্রাসী নীতিতে অটল রয়েছেন এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম অব্যাহত আছে ।

 

 

এর আগে বিগত ২৫ মার্চ নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে তিনি আরো একটি অভিযোগ করেছিলেন। মজিবর বাহিনী তাদের বাড়িঘর দখল করার পায়ঁতারায় লিপ্ত রয়েছে। মজিবর বাহিনী আরো আগে থেকেই এলাকার ত্রাস হিসাবে পরিচিত। গৃহবধু তানিয়াদের বাড়িঘর দখল করার পায়তারা চালায় এবং তখন এই গৃহবধুকে এবং বাড়ির অন্যান্য সদস্যদেরকে মারধর করে। তখন ওই অভিযোগটি তদন্ত করেছিলেন সদর থানার এএসআই সবুজ চন্দ্র দাস। কিন্তু তখন স্থানীয় চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বিষয়টি বিচার শালিসের দায়িত্ব নেন। সে সময়ে সংবাদকর্মীরা মতিউর রহমান চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি দ্রুততার সঙ্গে বিষয়টি মীমাংসা করে দেবার কথা বলেন। কিন্তু তার সে কথা শুধু কথার মালা হয়েই রয়েছে। কার্যত তিনি সময়ক্ষেপনের পথ বেছে নেন।
এরপর প্রায় পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও চেয়ারম্যান মতি নিরব ভুমিকা পালন করে চলেছেন। বরং চেয়ারম্যান মতির শেল্টারেই ও মজিবর এলাকায় তান্ডব চালাচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। আর এ কারনেই নতুন করে এলাকায় তান্ডব শুরু করেছে মজিবর বাহিনী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এমপি সেলিম ওসমানের নাম ভাঙ্গিয়ে মতি চেয়ারম্যানের স্বজনরা নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে। ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।

 

গত ১৬ আগষ্ট শুক্রবার রাতে মজিবর এবং তার সহযোগী ওহাব ও জামাল কসাই মিলে তানিয়াদের বাড়িতে গিয়ে সবাইকে হত্যা করার এবং বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। ফলে এর আগে থানায় কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় এবং স্থানীয় চেয়ারম্যান কোনো বিচার না করায় পুলিশ সুপারের কাছে নালিশ করতে বাধ্য হন গৃহবধু তানিয়া।

 

এ ব্যাপারে  চেয়ারম্যান মতিউর রহমানের মোবাইলে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায় নি ।

 

এদিকে এলাকাবাসী জানিয়েছে সন্ত্রাসী মজিবর স্থানীয় চেয়ারম্যান মতিউর রহমানের খালাতো ভাই ও নোয়াব ফুফাতো ভাই । মজিবর ও নোয়াব ওই এলাকায় চেয়ারম্যান মতির লাঠিয়াল বাহিনীর প্রধান। মূলত মতিই ওদেরকে তার নিজস্ব লাঠিয়াল হিসাবে লালন পালন করেন। তাই গোটা আলীরটেক এলাকাবাসীই এই সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে জিম্মি। তানিয়ার সঙ্গে এখন এলাকাবাসীর দাবী একমাত্র পুলিশ সুপারই পারেন এই হায়েনাদের হাত থেকে আলীরটেকবাসীকে রক্ষা করতে। তারা দ্রুততার সঙ্গে এসপি হারন অর রশিদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com