থানায় নারীকে ধর্ষণ ! ওসি ক্লোজ্ড আদালতে মামলা
প্রতিবেদক, প্রেসবাংলা২৪.কম: খুলনা রেলওয়ে (জিআরপি) থানায় এক নারীকে গণধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় আসামি করা হয়েছে ওই থানার সেই সময়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উছমান গনি পাঠান ও ডিউটি অফিসারসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যকে।
খুলনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালত-৩ এর নির্দেশে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে ওই মামলা করা হয়েছে। মামলা বাদী হয়েছেন ভুক্তভোগী সেই নারী। মামলার নথির সঙ্গে আদালতে দেওয়া ওই নারীর জবানবন্দীও সংযুক্ত করা হয়েছে। শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এই মামলা হয় বলে জানা গেছে।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দীতে ওই নারী বলেছেন, থানা হেফাজতে থাকার সময় রাত অনুমান দেড়টার দিকে থানার ডিউটি অফিসার তাঁকে পাশের একটি ঘরে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন ওসি উছমান বসে আছেন। এসময় ডিউটি অফিসার তাঁর মুখের মধ্যে ওড়না দিয়ে বেঁধে ফেলেন, যেন চিৎকার করতে না পারেন। ওই কক্ষে দেড় ঘন্টা আটকে রেখে তিনবার ধর্ষণ করেন ওসি। পরে ডিউটি অফিসার ও তিন পুলিশ সদস্য ধর্ষণ করেন।
ভুক্তভোগী ওই নারীর বক্তব্য নিজ হাতে টাইপ করেছেন খুলনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত-৩ এর বিচারক মো. সাইফুজ্জামান। আর ওই স্বীকারোক্তি নিজে পড়ে ও শুনে তাতে স্বাক্ষর করেন ওই নারী।
রেলওয়ে পুলিশের কুষ্টিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদ বলেন, ওসি উছমান গনি, ঘটনার রাতের ডিউটি অফিসার ও অজ্ঞাত তিনজন পুলিশ সদস্যকে আসামি করে ওই নারী মামলা করেছেন। খুলনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নির্দেশে ২০১৩ সালের নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে ১৫ ধারায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। ১৫ ধারা হচ্ছে হেফাজতে থাকা ব্যক্তিকে নির্যাতন করার অপরাধ।
জানতে চাইলে ওই সহকারী পুলিশ সুপার আরও বলেন, তাঁর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি ঘটনার তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তদন্ত শেষ হতে আরও সময় লাগবে। পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাঁকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করেছেন পাকশী রেলওয়ে জেলা পুলিশ সুপার। মামলার তদন্তে ওসি বা অন্য কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁকে বহিস্কার ও গ্রেপ্তার করা হবে।
এদিকে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে আসা রেলওয়ে পুলিশের এসপি’র নেতৃত্বাধীন আরেকটি তদন্ত কমিটি তদন্ত শেষে গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঢাকায় ফিরে গেছেন।
প্রসঙ্গত, গত ২ আগস্ট বেনাপোল থেকে খুলনাগামী কমিউটার ট্রেন থেকে ওই নারীকে আটক করে খুলনা জিআরপি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাতভর থানা হেফাজতে থাকার পর সকালের দিকে তাঁকে আদালতের প্রেরণ করে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধারের মামলা দেওয়া হয়। এসময় ওই নারী তাঁর স্বজনদের জানান, থানায় থাকার সময় রাতে তাঁকে ওসিসহ পাঁচজন ধর্ষণ করেছেন।
আদালতে ওই অভিযোগ করা হলে বিচারক ওই নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার নির্দেশ দেন। সোমবার তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর আবারও কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এরপর বুধবার ওসি ও এসআইকে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করা হয়। তাঁদের ওই থানা থেকে প্রত্যাহার করে পাকশী রেলওয়ে জেলায় সংযুক্ত করা হয়েছে।
সূত্র – প্রথম আলো