অভিভাবকদের আস্থা সঙ্কটে শিক্ষকরা!

 

প্রতিবেদক, প্রেসবাংলা২৪ডটকম: নারায়ণগঞ্জজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ করে মাদ্রাসায় অব্যাহত যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগে রয়েছেন অভিভাবকরা। এসব ঘটনায় জড়িত শিক্ষকদের কারণে মানুষ গড়ার এই কারিগরদের প্রতি বিশ্বাস হারাচ্ছেন অভিভাবকরা। ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে গুটি কয়েকটি শিক্ষক। যার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজেদের সন্তানের পাঠাতেও কিছুটা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। এ জেলায় কয়েকদিনের ব্যবধানে শিক্ষক নামের ৪ ধর্ষক গ্রেফতার হওয়াতে এ শঙ্কা আরও বাড়ল।

 

গত ২৭ জুন গ্রেফতার হয় সিদ্ধিরগঞ্জের অক্সফোর্ড হাই স্কুলের গণিতের শিক্ষক আরিফুল ইসলাম সরকার। ওই স্কুলের অন্তত ২০ ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক আরিফুল ইসলাম সরকার। পাঁচ বছর ধরে কোমলমতি শিশুদের যৌন নিপীড়ন করে তা আবার মোবাইল ফোনে ভিডিও করে রাখতো সে। সেসব ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আবার ধর্ষণ করতেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিষয়টি দেখেও যেন না দেখার ভান করতেন। যার দায়ে তাকেও গ্রেফতার করা হয়ছিলো। শিক্ষক আরিফুল গ্রেফতার হবার পরে জেলাজুড়ে আলোচনা ঝড় উঠে। এ ঘটনায় সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে আতঙ্ক ও শঙ্কা তৈরি করে।

 

৭ দিনের ব্যবধানে ৪ জুলাই ১০ এর অধিক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানী ও নিপীড়নের অভিযোগে আরেক মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা আল আমিনকে শিক্ষককে মাহমুদপুর এলাকার একটি মাদ্রাসা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

 

এর পর গত ২৭ জুলাই ‘বড় হুজুর’ নামক আরেক মাস্টার মাইন্ড ধর্ষককে গ্রেফতার করে র‌্যাব। গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ‘হুজুরের কথা শোনা ফরজ, না শুনলে গুনাহ হবে। হুজুরের কথা না শুনলে জাহান্নামে যেতে হবে’- এমন ফতোয়া দিয়ে তিন বছরে ১১ ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছেন ভূঁইগড় দারুল হুদা মহিলা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ‘বড় হুজুর’ মোস্তাফিজুর রহমান।

র‌্যাব জানায়েছিলো, শুধু মিথ্যা হাদিস নয়- বিয়ে করার প্রলোভন দিয়েও ছাত্রীদের ধর্ষণ করত লম্পট মোস্তাফিজুর।

 

সর্বশেষ, ৭ আগষ্ট শিশু ধর্ষণের অভিযোগে এক মসজিদের ইমাম ফজলুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা ও ভুক্তভোগীকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে ইমামের ৫ অনুসারীকেও আটক করা হয়েছে। ভুক্তভোগীর পরিবারের বরাত দিয়ে র‌্যাব জানায়, ভুক্তভোগী দ্বিতীয় শ্রেণির মাদ্রাসা ছাত্রী। সে রাতে দুঃস্বপ্ন দেখতো বলে তার বাবা মসজিদের ইমাম ফজলুর রহমানের কাছ থেকে পানি পড়া ও ঝাঁড়ফুক দিতে নিয়ে যায়। ঝাড়ফুঁকের কথা বলে মসজিদের তৃতীয় তলায় নিজের শয়ন কক্ষে নিয়ে গিয়ে মুখ ও হাত বেঁধে শিশুটিকে ধর্ষণ করে ফজলুর রহমান।

 

সম্প্রতি এসব গুটিকয়েক নৈতিকতা বিবর্জিত ও দু:শ্চরিত্র শিক্ষকের কারণে গোটা শিক্ষকসমাজ প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত হয়ে পড়ছে। যা অশনিসংকেত। এতে করে সাধারণ শিক্ষকদের প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন বলেই মন্তব্য সাধারণ অভিভাবকদের।

 

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ কলেজের শিক্ষক আরিফ মিহির বলেন, প্রতিটা দিকেই ভালো এবং মন্দ রয়েছে। যারা এ ধরনে কার্যকলাপে জড়িত তারা শিক্ষক হতে পারে না। এখনো ভালোর সংখ্যাই বেশি। তবে জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনলে বাকী অসাধুরাও সাবধান হয়ে যাবে।

 

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com