নড়াইল স’ মহিলা কলেজ দূর্নীতি ও অনিয়মের স্বর্গরাজ্য
নড়াইল প্রতিনিধি, প্রেসবাংলা২৪ডটকম: বর্তমান সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে দূর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরন করলেও নড়াইল সরকারী মহিলা কলেজে ভর্তি বানিজ্য সহ দূর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ আত্বসাতের অভিযোগ উঠেছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।
ডিআইজি মিজান ও দুদক কর্মকর্তা বাশির ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগের মামলায় কারাগারে থাকলেও নড়াইল সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড.মোঃ মাহবুবুর রহমান কোন সরকারী নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে একাধিক অনিয়ম অন্যায় ও দূর্নীতির মাধ্যমে টাকা আত্বসাত ও ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন অত্র কলেজের একাধিক ছাত্রী ও শিক্ষক কর্মচারী বৃন্দরা।
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক একাধিক ছাত্রী বলেছেন.আমাদের অনেক বন্ধু / বান্ধবী নড়াইল সরকারী ভিক্টোরিয়া কলেজে ২০০০/= টাকায় ভর্তি হলেও নড়াইল সরকারী মহিলা কলেজে আমাদের কাছ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ২৫৩৭/= (দুই হাজার পাচ শত সাইত্রিশ) টাকা মানবিক ও বানিজ্য বিভাগে ২৪৩৭/=(দুই হাজার চারশত সাইত্রিশ) টাকা করে নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ প্রফেসর ড.মোঃ মাহবুবুর রহমান অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন. আমরা ভর্তি ও পরিক্ষার ফিস বাবদ এককালিন উক্ত টাকা নিয়ে ভর্তি করিয়েছি। সরকারী নির্দেশনার বাহিরে বেশি টাকা নেওয়া অনিয়ম হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন অনিয়ম হইনি।
কলেজ প্রতিষ্ঠার সাথে জড়িত কয়েকজন ব্যাক্তি বলেন, নড়াইল সরকারী মহিলা কলেজটি ১৯৮৬ সালে স্থাপিত হয়ে সরকারীকরন হয় ১৯৯৭ সালে। তারা অভিযোগ করে বলেন, কলেজ বাউন্ডারির ভিতরে সেই সময়ে অনেক গুলো গাছ রোপন করি সেটা এখন অনেক বড় হয়ে কলেজ ও পরিবেশের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করেছে। কিন্ত সেসব গাছ গুলোর মধ্যে ৬টি আমগাছ, ১টি বকুল গাছ, ১টি অর্জুন গাছ, ৩টি কাঠাল গাছ, ১টি কৃষ্ণচূড়া গাছ, ১টি শীলকড়াই গাছসহ বেশির ভাগ গাছ বিক্রি করে ফেলেছে কোন রকম নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে । যার আনুমানিক মূল্য এক লক্ষ টাকা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, ডাল পালা কাটা হয়েছে । কিন্ত সরোজমিনে গিয়ে দেখা গেছে অনেক গুলো গাছের শিকড়সহ উপড়ে ফেলা হয়েছে।
অধ্যক্ষ প্রফেসর ড.মোঃ মাহবুবুর রহমান কলেজের মেয়েদের গেমস রুমে বসবাস করছেন এবং খাবার খাচ্ছেন কলেজের হোস্টেলের মেয়েদের সাথে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারকে টাকা দিয়েই থাকি এবং টাকা দিয়েই খাই।
কলেজের প্রধান হিসাব রক্ষক আব্দুল আলিমের ভাতিজা ২০১২ সালে পুলিশের উপর হামলা মামলার আসামী (১০ মাস কারাবাসের পরও) এমএলএস আশরাফুল আলমকে তিন তলায় একটি রুমে থাকতে দিয়েছেন। এ বিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, মামলা ও ১০ মাস জেল খাটার বিষয়টি আমি জানিনা। তদন্ত করে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য এমএলএস আশরাফুল আলম উক্ত মামলায় ০২.০৬.২০১২ ইং তারিখ হতে ০৯.০৪.২০১৩ ইং পর্যন্ত নড়াইল জেলা কারাগারে ছিলেন।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত কলেজ ও হোস্টেলের যাবতীয় পুরানো মালামাল কোন কমিটি ছাড়াই বিক্রয় করা হয়েছে এবং কিছু গ্রিলের জানালাসহ অন্যান্য মালামাল সামগ্রী প্রধান হিসাব রক্ষকের বাড়িতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, আমি কোন কিছু বিক্রি করি নাই. এবং প্রধান হিসাব রক্ষকের বাড়িতে কলেজের গ্রিলের জানালাসহ মালামাল আছে কিনা তা তদন্ত করা হবে।
অধ্যক্ষ মহোদয় বেশির ভাগ সময়ে ছুটি ছাড়াই কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেননা । আবার কাউকে লিখিত দ্বায়িত্ব ও দেননা বেশির ভাগ সময়ে নিজ বাড়ি ঢাকাতে থাকেন । এর ধারাবাহিকতায় গত ০২.০৭.২০১৯ ইং তারিখে সহকারী অধ্যক্ষ নজরুল ইসলামের উপর এক দিনের দায়িত্ব দিয়ে ৪ দিন পর অর্থাৎ ০৭.০৭.২০১৯ তারিখে কর্মস্থলে আসেন অর্থাৎ সরকরী নিয়ম অনুসারে ছুটি নেননা। এ বিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, কলেজের উন্নয়ন মূলক কাজের জন্যই আমি বেশির ভাগ সময়ে ডিজি অফিসে ঢাকাতে দৌড়াদৌড়ি করি।
কলেজের সম্পাদক নির্বাচনে ভোট গণনায় অসচ্ছতা ও অনিয়ম হয়েছে এই মর্মে ১৩ জন শিক্ষক ভোটারের মধ্যে ৯ জন শিক্ষক ভোটার অধ্যক্ষ বরাবরে লিখিত অভিযোগ করার পরও অধ্যক্ষ কোন সুষ্ঠ নিরপেক্ষ ব্যাবস্থা না নিয়ে ভোটে জয়ী হতে পারেননি এমন একজন শিক্ষক আলী হোসেনকে সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। এ অভিযোগ ও অধ্যক্ষ অস্বীকার করেছেন। অধ্যক্ষ মহোদয় কলেজের পরিক্ষা পরিচালনা একাধিক কমিটি নির্বাচনে অর্থনৈতিক ভাবে লাভজনক কমিটি গুলোতে নিজের পছন্দের শিক্ষকদের বার বার সদস্য হিসাবে নির্বাচিত করছেন।
গত অর্থ বছর এবং এই অর্থ বছরে একই শিক্ষকদের সদস্য হিসাবে নির্ধারন করেছেন অর্থাৎ অধ্যক্ষের পছন্দের শিক্ষকদের বেশি আর্থিক সুবিধা দিচ্ছেন। এ অভিযোগ ও অধ্যক্ষ অস্বীকার করেন। কিন্ত কলেজের অফিসিয়াল ডকুমেন্টে দেখা যায় একই শিক্ষকদের দুইবার সদস্য করা হয়েছে। ২৪৫ জন ছাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ক্লাসের জন্য ৩০০/- টাকা করে নেওয়া হয়েছে কিন্ত কোন শিক্ষককে এখন পর্যন্ত কোন টাকা দেননি। বেশির ভাগ শিক্ষক ও কর্মচারীদের সাথে অশ্বালিন ভাষায় কথা বলেন.এক মহিলা কর্মচারীকে বলেছিলেন লেংটি পরিয়ে কলেজ থেকে বের করে দিব। এসব অভিযোগ স্বীকার করে অধ্যক্ষ বলেন, কলেজের উন্নয়নের স্বার্থে আমি একটু বকাঝকা রাগারাগি করি তবে লেংটি পরিয়ে বের করে দিব সেটা আমার মনে আসছেনা।
কয়েক জন শিক্ষক কর্মচারি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন.অধ্যক্ষ স্যার প্রায়ই বলে থাকেন আমার ক্ষমতা সম্পর্কে আপনাদের কোন ধারনা নাই। আমার হাত অনেক লম্বা আপনারা আমার বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারবেননা।
উল্লেখ্য. গত এইচ এস সি পরীক্ষার ব্যবহারিক পরিক্ষায় প্রতি বিষয়ের উপর ছাত্রছাত্রীর নিকট থেকে ১২০/- টাকা করে বাধ্যতামূলক ভাবে আদায় করা হয়েছিল। যা কয়েকটি পত্রিকায় নিউজ হয়েছিল। পরিক্ষা পরিচালনা কমিটির শিক্ষক কর্মচারীর বন্টন নীতিমালায় সরকারী পরিপত্রকে উপেক্ষা করে অধ্যক্ষ নিজের ইচ্ছামত ( অধ্যক্ষ, অফিস ও কমিটি ৫০ পার্সেন্ট + প্রত্যবেক্ষণ ও শিক্ষক পরিষদ ৫০ পার্সেন্ট )বন্টন নীতিমালা জারি করেছেন। প্রধান হিসাব রক্ষক আব্দুল আলিম ছাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্তি টাকা নেওয়া প্রশংসাপত্র দিতে টাকা নেওয়া এবং কলেজের গ্রীলের জানালাসহ অন্যান্য মামালাল নিজ বাড়িতে নেওয়ার বিষয়ে বলেন.আমি অধ্যক্ষ স্যারের নির্দেশ ছাড়া কিছুই করিনা।
এ সব বিষয়ে যশোর বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক কে এম রাব্বানী বলেন. একাদশ শ্রেনীতে ভর্তি হতে সরকারী নিয়মের বাইরে কোন অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার সুযোগ নাই । নিলে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকার পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর শাহেদুল খবির চৌধূরীর সঙ্গে টেলিফোন ও মোবাইলে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।