না’গঞ্জের আড়াইহাজারে হচ্ছে জাপানি গাড়ি কোম্পানীর বড় বিনিয়োগ
প্রতিবেদক, প্রেসবাংলা২৪.কম: নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে হচ্ছে জাপানি গাড়ি কোম্পানীর বড় বিনিয়োগ। আড়াইহাজারে জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজ শুরু হয় চার বছর আগে। সরেজমিনে দেখা যায়, চার শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন, যাঁরা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন। তাঁদের কেউ ভূমি উন্নয়ন, কেউবা অবকাঠামো উন্নয়নের কাজে ব্যস্ত। নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন অনেকে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চলটির অবকাঠামো উন্নয়নে জড়িত আছেন বাংলাদেশ, জাপান, ফিলিপাইন ও মিসরের ৪২ জন প্রকৌশলী।
জাপানি গাড়ির বড় বাজার বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশেই গাড়ি তৈরির বড় কারখানা করতে আগ্রহী দেশটি।
বাংলাদেশে অটোমোবাইল শিল্পের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চায় জাপান।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) জানায়, রাজধানী ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অবস্থিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ নিয়ে আসছে জাপান। গাড়ির কারখানাসহ এখানে অন্য আরও কয়েকটি শিল্প স্থাপন করবে তারা।
বেজা থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, আড়াইহাজার অর্থনৈতিক অঞ্চলে মূলত অটোমোবাইল, অর্থাৎ গাড়ি তৈরির কারখানা স্থাপিত হবে। সেই সঙ্গে সেখানে গাড়ির যন্ত্রপাতি সংযোজন, মোটরসাইকেল, মোবাইল হ্যান্ডসেটসহ বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক পণ্য ও যন্ত্রপাতি উৎপাদিত হবে। সেখানে বিনিয়োগ করতে এরই মধ্যে আগ্রহ দেখিয়েছে জাপানের টয়োটা, মিতসুবিশি, সুমিতোমো, তাওয়াকি, সুজিত প্রভৃতি কোম্পানি। সব ঠিকঠাক থাকলে এশিয়ায় জাপানের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগের কেন্দ্র হবে আড়াইহাজার অর্থনৈতিক অঞ্চল—এমন ঘোষণাই দিয়ে রেখেছে জাপান সরকার।
শিল্প মন্ত্রণালয় বলছে, বাংলাদেশের নিজস্ব ব্র্যান্ডের গাড়ি তৈরিতে সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে কারিগরি সহায়তা দেবে জাপানের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান মিতসুবিশি মোটর করপোরেশন।
এ ছাড়া এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে বাস, ট্রাক, পিকআপ ও মোটরকার উৎপাদনে বিনিয়োগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে মিতসুবিশি।
বর্তমানে মিতসুবিশি করপোরেশন প্রগতির সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশে পাজেরো স্পোর্টস সি আর-৪৫ ও মাইক্রোবাস সংযোজন করছে। ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আরও নতুন ব্র্যান্ডের গাড়ি সংযোজন করবে তারা।
বেশ কিছুদিন আগে মিতসুবিশি করপোরেশনের দক্ষিণ এশিয়া, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য বিভাগের একটি প্রতিনিধিদল বেজার নিবার্হী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেন। ঐ সময় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে তারা।
বেজার নিবার্হী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে অটোমোবাইল শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চায় মিতসুবিশি।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বিনিয়োগের চমৎকার পরিবেশ বিরাজ করছে। বাংলাদেশে জাপানি ব্র্যান্ডের গাড়ি উৎপাদন এখন সময়ের ব্যাপার।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, দেশের মধ্যে নিজস্ব ব্র্যান্ডের গাড়ি উৎপাদন করতে হলে অটোমোবাইল খাতের জন্য পৃথক একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। খসড়া নীতিমালার কাজ চলছে। শিগগিরই এটি চূড়ান্ত হবে।
জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে দেশটি বাংলাদেশের উন্নয়নের সবচেয়ে বড় অংশীদার।
বেজা থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য মোট এক হাজার একর জায়গার ওপর গড়ে উঠছে আড়াইহাজার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড)। প্রথম পর্যায়ে ৫০০ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ। এখন সেই জমি উন্নয়নের কাজ চলছে। ১৫ কিলোমিটার দূরের মেঘনা নদী থেকে পাইপলাইনে বালু এনে ভূমি উন্নয়ন করছে জাপানি প্রতিষ্ঠান তোয়া করপোরেশন। সমতল থেকে ১৫ ফুট উঁচু করা হচ্ছে জায়গাটি।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) এলাকায় শ্রমিকদের যাতায়াতের কারণে সেখানে সব সময় যানজট লেগেই থাকে। সেটি মাথায় রেখেই আড়াইহাজার অর্থনৈতিক অঞ্চলে আট কিলোমিটার দীর্ঘ ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে, যাতে শ্রমিকেরা যেকোনো প্রান্ত থেকে ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচল করতে পারেন। আর আড়াইহাজার অর্থনৈতিক অঞ্চলটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে হওয়ায় সেখানে যাতে যানজট তৈরি না হয়, সে জন্য একটি উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হবে। ফলে অর্থনৈতিক অঞ্চলে চলাচলকারী যানবাহনগুলো উড়ালসড়ক ব্যবহার করে নির্বিঘ্নে চলতে পারবে।
বেজার কর্মকর্তারা জানান, চার বছর আগে আড়াইহাজার অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে জাপানি কোম্পানিগুলোর তেমন আগ্রহ ছিল না। অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য তখন জাপানি বিনিয়োগকারীদের পছন্দের তালিকায় ছিল গাজীপুরের শ্রীপুর, নরসিংদীর পলাশ, ঢাকার সাভার ও মানিকগঞ্জ। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর তুলনামূলক কাছে হওয়ায় এবং যোগাযোগব্যবস্থা ভালো দেখে শেষ পর্যন্ত তারা আড়াইহাজারকে বেছে নেন জাপানি বিনিয়োগকারীরা। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে শিল্পকারখানাগুলো উৎপাদন শুরু করবে, এমনটাই আশা করছে বেজা।