বিদ্যানিকেতনের কাশেম হুমায়ুন ও সালামের বিচারের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন

প্রেসবাংলা ২৪. কম: নারায়ণগঞ্জের বিদ্যানিকেতন হাইস্কুলের সাবেক সভাপতি কাশেম হুমায়ুন এবং সিনিয়র সহ-সভাপতি সাংবাদিক আব্দুস সালামের বিচারের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভূঁইয়ারবাগ এলাকাবাসী ও বিদ্যানিকেতন হাইস্কুলের অভিভাবকরা।

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে নগরীর চাষাড়ায় সিনামুন রেস্টুরেন্টে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিদ্যানিকেতন হাইস্কুলের প্রতিষ্ঠাতা মোঃ নাজির হোসেন, এছাড়াও আলহাজ্ব মোঃ রুহুল আমিন, আলহাজ্ব মোঃ আব্দুল গনি, মোঃ নজরুল ইসলাম দেওয়ান, মোঃ জহির আলী, মোঃ হারুন খান ও মোঃ আনোয়ার হোসেন সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বক্তারা বলেন, এক সময়ের নারায়ণগঞ্জ শহরের এক প্রান্তের অনগ্রসর এলাকা দেওভোগ ভূঁইয়ারবাগ এলাকাবাসী সময়ের প্রয়োজনে বিগত ২০০৭ ইং সনে এলাকাবাসীর অর্থায়নে মজা পুকুর ভরাট করে বিদ্যানিকেতন স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করে। অত্র স্কুলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মূল লক্ষ্য ছিল অল্প বেতনে সময়য়োপযোগী উন্নতমানের শিক্ষা প্রদান করা। ১ম, ২য়, ৩য় শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত চালু করার লক্ষ্যে পূর্বদিকে প্রথম ইমারত চার তলা ফাউন্ডেশন সহ ১৫ লক্ষ টাকা খরচ করে মোঃ নাজির হোসেন এই ভবন নির্মান করে দেন।

উল্লেখিত ৩টি ক্লাশ রুমের টিনসেড ভবন ও মাটি ভরাট করতে ১১ লক্ষ টাকা খরচ হয়। এলাকাবাসী এই টিনসেড নির্মানে ৫০০-১০,০০০/- টাকা পর্যন্ত মোট ৩,৫০,০০০/- টাকা চাঁদা প্রদান করেন। বাকী টাকা নাজির হোসেন ঋণ হিসাবে প্রদান করেন। একই সময় এলাকাবাসী জনাব আহসান উল্লাহ ১,৫০,০০০/-টাকা অনুদান হিসাবে প্রদান করেন। জনাব নাজির হোসেনের হাওলাদ প্রদানকৃত টাকা দীর্ঘ ৭/৮ বছর পরে ফেরত দেওয়া হয়। এলাকাবাসীর দানে এই স্কুল নির্মিত হলেও ট্রাষ্টি কমিটিতে এলাকার উল্লেখযোগ্য অনেককে বাদ দিয়ে কাশেম হুমায়ূন তার পরিবারের লোকজন ও বাহিরের লোকজনকে ট্রাষ্টি কমিটিতে স্থান দেয়।

নার্সারী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত ৭টি ক্লাস রুমের স্কুল ব্যাঞ্চ, টুল, টেবিল ও যাবতীয় আসবাবপত্র আলহাজ্ব মোঃ নাজির হোসেন নিজস্ব অর্থায়নে ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরী করে দেন। অত্র ফুল শুরু করার সময় কাশেম হুমায়ূনের কোনরূপ সমর্থন বা সহযোগীতা ছিল না বরং তিনি স্কুল নির্মাণের বিরোধীতা করেছিলেন। একসময় স্কুল পরিচানার জন্য শিক্ষাবোর্ডের নিয়ম মাফিক ম্যানেজিং কমিটির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তখন আব্দুস সালাম সেক্রেটারী হওয়ার ইচ্ছা পোষন করেন এবং দেলোয়ার হোসেন চুন্নু সভাপতি হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। মোঃ নাজির হোসেন একক অর্থায়নে ও অক্লান্ত পরিশ্রমে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করলেও তাকে সহ-সভাপতি করার অপপ্রয়াস চালানো হয়। কিন্তু মহল্লাবাসী এই প্রস্তাব কোনভাবেই মেনে নেয়নি। তখন ২/১ জন এলাকার চাটুকার জনাব নাজির হোসেনকে দাবিয়ে রাখতে ঢাকাবাসী কাশেম হুমায়ূনকে সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত করে। কাশেম হুমায়ূন তার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে স্কুলটিতে নিজেকে “প্রতিষ্ঠাতা” বানিয়ে তার বন্ধু বান্ধব ও পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়ে ট্রাষ্টি গড়ে তোলে। যা আজ পর্যন্ত জনসমক্ষে প্রচার ও প্রশাসনে ব্যবহার করছে। তিনি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এটি নির্ভেজাল মিথ্যা। তিনি অগ্রণী ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার সুযোগ নিয়ে অনৈতিকভাবে ঋণ খেলাপী ও দূর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে স্কুলের নামে অর্থ অনুদান গ্রহণ করে অপ্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় করে ব্যবহারের নামে তহবিল তছরুপ করেন। এই সব ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তিনি কতটাকা অনুদান নিয়েছেন আর কত টাকা স্কুলকে দিয়েছেন তার কোন হিসাব তিনি প্রকাশ করেননি।

স্কুলে পড়াশুনার মান এতটা নিচে নেমে গেছে যে, অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল দেখলে বুঝাযায় ২০২৫ সালের এস.এস.সি পরীক্ষার্থীরা নির্বাচন পরীক্ষায় অর্ধেকই উত্তীর্ণ হতে পারবে না। অথচ স্কুল নির্মাণের সময় মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল গতানুগতিক ব্যবস্থা থেকে উন্নতমানের শিক্ষা প্রদান করা এবং স্বল্প বেতনে স্কুলে পড়ার সুযোগ করে দেয়া। শুরুতে ৫০ টাকা বেতন নির্ধারণ করা হলেও বর্তমানে স্কুলের বেতন করেছে ৫৭০ টাকা ও পরীক্ষার ফি ৬০০ টাকা।

সরকারী নিয়মের বাহিরে ৪ বারের পরিবর্তে ৬ বার পরীক্ষা নেওয়া এবং অনুপস্থিতির জন্য ১০০ টাকা জরিমানা জোর পূর্বক আদায় করা হতো। স্কুল থেকে টিসি নিতে ৩৫০০ টাকা দিতে হয়। কখনো বাইরের এলাকার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫০০০ টাকা রেখে দিত। সবচেয়ে লজ্জাজনক বিষয় স্কুলের ক্যান্টিনে নিম্নমানে খাবার পরিবেশন করে বিক্রেতার কাছ থেকে ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ রয়েছে কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে। আব্দুস সালামের কাছে যৌক্তিক দাবী নিয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের নেশাখোর ও বাবাখোর বলে গালি দিয়ে তাড়িয়ে দিত। বিভিন্ন সময়ে অভিভাবক ও এলাকাবাসী অভিযোগ নিয়ে গেলে স্বৈরাচারী কায়দায় তাদেরকে নাজেহাল করা হতো। অনেক শিক্ষার্থীকে শারিরকভাবেও তাদের কাছে নিগৃহিত হতে হয়েছে। কৃষ্টি ও সংস্কৃতির নামে বছর জুড়ে অনুষ্ঠান করে স্কুলের পড়াশুনার মানের বারোটা বাজিয়েছেন।

শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মনে দীর্ঘ দিনের এই কমিটির দৌরাত্ম ও রামরাজত্বের প্রতি পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিজ্ঞাকাশ ঘটে গত ২০/০৮/২০২৪ ইং তারিখে। (শিক্ষার্থীরা কাশেম হুমায়ূন ও আব্দুস সালাম সহ ট্রাষ্টি কমিটির প্রতি বিক্ষুব্ধ হয়ে সহ সভাপতি আব্দুস সালামকে অবাঞ্চিত, অপমানিত ও গন পিটুনি দিয়ে স্কুল থেকে বিতাড়িত করে।

শিক্ষার্থীদের মূল দাবী ছিল কাশেম হুমায়ূন, আব্দুস সালাম ও প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ। ছাত্রদের প্রচন্ড বিক্ষোভের মুখে প্রধান শিক্ষক তাৎক্ষনিকভাবে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ঐ সময়ে শিক্ষার্থী ও জনরোষ থেকে বাঁচতে আব্দুস সালাম অসুস্থতার ভান করে স্কুল থেকে পালিয়ে যায়। এই ছদ্মবেশী আব্দুস সালাম গত ১৯/০৮/২০২৪ইং তারিখে রাত ১০টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত স্কুলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ডেকে ভয় ও হুমকি দিয়ে নাজেহাল ও অপদস্থ করে যাতে তারা কোন আন্দোলনে যোগ না দেয়, যা দেশের প্রচলিত ফৌজদারী আইনে দন্ডনীয় অপরাধ। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে প্রথম থেকেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়কগন এ ব্যাপারে সার্বিক সমর্থন ও কার্যকর ভূমিকা পালন করেন যা সত্যি প্রশংসার দাবিদার। স্কুলের অভ্যন্তরে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর সম্মুখে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সমন্বয়কদের কাছে পদত্যাগের ঘোষণা দেয় সভাপতি কাশেম হুমায়ূন। বর্তমানে স্কুলের পড়াশুনা ও ব্যবস্থাপনার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে জনাব মোঃ নাজির হোসেন সহ অভিভাবক ও এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এছাড়াও বক্তৃতারা আরো বলেন, কাশেম হুমায়ূন ও আব্দুস সালাম গংদের স্বৈরাচারি ও পরিবারতান্ত্রিকভাবে ভুলটাকে নিজস্ব সম্পত্তির মতো নিজেদের খেয়াল খুশি মতো ব্যবহার করেছে যা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com