প্রতিটা ইউনিয়নে খামার হবে : সেলিম ওসমান
প্রেসবাংলা ২৪. কম: নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ সেলিম ওসমান বলেছেন, আপনারা জানেন একসময় আমার আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিলো না। আমার মেয়ে যখন ছোট ছিলো তখন হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লো। ঠান্ডা-সর্দি লেগেই থাকতো। ডাক্তাররা যে ওষুধ দেয়, সে ওষুধ কেনার মতো টাকা আমার কাছে ছিলো না। তখন একজন আমাকে বুদ্ধি দেয়, আপনে একটা ছাগল কিনেন, আর বাচ্চাকে সেই ছাগলের দুধ খাওয়ান। দেখবেন সর্দি-কাশি, ঠান্ডা সব নাই হয়ে যাবে। তখন আমি ৮০০ টাকা দিয়ে একটি ছাগল কিনি, ছাগলটা ভালো দুধ দিতো। সেই যে ছাগলের দুধ মেয়েকে খাওয়ালাম, আল্লাহর রহমতে ৬ মাসের মধ্যে আমার মেয়েটা যে ভালো হলো, আজ পর্যন্ত আর অসুস্থ হয় নি। এই ছাগল থেকেই কিন্তু আজকের আমার কাছে এই মুহুর্তে ৬শত দুগ্ধজাত গরু আছে। আমি প্রতিদিন আড়াই হাজার লিটার গরুর দুধ বিক্রি করতে পারি।
বুধবার (৩১ মে) সকালে সৈয়দপুর বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের ২সহস্রাধিক শিক্ষার্থীদের মাঝে দুধ বিতরণ করা হয়। “টেকসহ দুগ্ধ শিল্প, সুস্থ মানুষ, সবুজ পৃথিবী” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ^ দুগ্ধ দিবস-২০২৩ উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও ছাত্রছাত্রীদের মাঝে দুধ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেলিম ওসমান একথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, জ্ঞান-বুদ্ধি ও মেধা সম্পন্ন হতে হলে নিয়মিত দুধ খেতে হবে। দুধ খেলে ক্যান্সার সহ নানা রোগ থেকে বাঁচা যায়। নিয়মিত দুধ খেলে দিনরাত ২৪ ঘন্টা পড়তে হবে না, ভালোভাবে অল্প পড়লেও সেই পড়া মনে থাকবে। আজকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে লক্ষ-কোটি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলি, এটার প্রয়োজনীয়তা ছিলো। আপনি এটা উৎসাহিত করছেন, এটাকে আপনি সহযোগীতা করছেন। আমরা যদি নিয়মিত দুধ খাই, তাহলে গরুর সংখ্যা বাড়বে, গরুর সংখ্যা বাড়লে কিছু ষাড় গরুও হবে। ষাড় গরু বাড়লে মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, ফলে মাংসের ঘাটতিও কমবে। দুধ মানে কিন্তু শুধু গরুর দুধ নয়, দুধ মানে দুধ। সেটা মহিষের দুধও হতে পারে। আজকাল কিন্তু গরুর দুধের চেয়ে অনেক উন্নত মহিষের দুধ। মহিষ পালতে খাদ্য খরচ অনেক কম লাগে। ৩ লিটার গরুর দুধ খেলে যা হবে, ১লিটার মহিষের দুধ খেলেই তা হবে। এটার মধ্যে ভিটামিন অনেক বেশী, আর মহিষের মাংসের মধ্যে কোলেষ্টেরল নাই।
স্কুলের পিছনে গরুর খামার করার লক্ষ্যে এডিসি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে সংসদ সদস্য বলেন, এটা তো সরকারী স্কুল, এখানে আমাদের কিছু করার নেই। তারপরও এডিসি জেনারেল সাহেব এখানে আছেন, আমি তার কাছে বলবো স্কুলের পিছনে ৪৫ শতাংশ জায়গা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আপনি হয়তো বলবেন, ফান্ড পাবো কোথায়, ফান্ড পেতে তো অনেক সময় লাগবে। আপনারা চাইলে ফজর আলীর সহযোগীতা নিতে পারেন। আমি তাকে চিনি, তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ। এরকম মানুষ পাওয়া যায় না। এই ৪৫ শতাংশ জায়গায় প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে একটি গরুর খামার গড়ে তোলা হবে। গরুর খামার গড়ে তোলার জন্য যা যা করার সম্পূর্ণটা করবো। আমার খামার থেকে ৩টি গাভী গরু ও ৩টি ষাড় গরু কালেক্ট করা হবে। দুধ দেয়া গরুর কোনো সমস্যা হলে যাতে ষাড় গরু বিক্রি করে সেই সমস্যা সমাধান করা যায়।
প্রতিটি ইউনিয়নে গরুর খামার করা হবে উল্লেখ করে সেলিম ওসমান বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্কুলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডাকে আমরা একটা গরুর খামার দিবো, যেটা থেকে দুধ উৎপাদন হবে। আমার ছাত্র-ছাত্রীরা জানতে পারবে গরু কি খায়, কিভাবে, কখন টিকা দিতে হয়, কখন তাকে চিকিৎসা দিতে হয়। আমরা একটি সিদ্ধান্তে চলে আসলাম, প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ভালো মানুষ, ডিসি সাহেব ভালো মানুষ, আমার চেয়ারম্যান অত্যন্ত ভালো মানুষ। একটা জায়গায় আপনারা টিম করে ফেলেন। ইনশাআল্লাহ দেখবেন আমার প্রত্যেকটা ইউনিয়নে আল্লাহর রহমতে আমি একটা করে গরুর খামার হবে। মানুষ যদি লাভটা বুঝতে না পারে, তাহলে গরু কেন পালবে?
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা বাসনা আকতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মশিউর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক সাকিব আল রাব্বী, গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজর আলী, আলীরটেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সহ আরও অনেকে।