প্রতিনিধি, প্রেসবাংলা২৪.কম: নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আপন ভাসুরের শ্বশুর কর্তৃক প্রবাসী ছোট দুই ভাইয়ের বাড়ি দখল চক্রান্তের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী আয়েশা আক্তার।
বুধবার সকালে সিদ্ধিরগঞ্জ পুলস্থ শ্বশুরবাড়ি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট এক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের এ কথা জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আয়েশা আক্তার জানান, তার প্রবাসী স্বামী নূর নবী এবং তার স্বামীর মেঝো ভাই আলমের সম্পদ দখল করে রেখেছেন তার বড় ভাইয়ের শ্বশুর মাহবুব এনামুল হক। তারা দীর্ঘ ১১ বছর যাবত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নাসিক ১নং ওয়ার্ডের পাইনানী নতুন মহল্লা এলাকায় বসবাস করে আসছেন। তাদের বড় ভাসুর নূরুল ইসলাম তিনিও প্রবাসে ছিলেন। ছোটবেলায় আমার স্বামীর বাবা মারা যাওয়ায় পরিবারের সব কিছু দেখাশোনা করতেন আমার ভাসুরের শ্বশুর মাহবুব এনামুল হক।
তিনি আরো জানান, ২০০৫ সালে তার স্বামীসহ তারা তিন ভাই মিলে পাইনাদী নতুন মহল্লায় ৬ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। জমি ক্রয়ের বিষয়টি মধ্যস্থতা করেন আমার ভাসুরের শ্বশুর মাহবুব এনামুল হক। জমিটি ক্রয় করার পর এই তিন ভাইরের নামেই নামজারী ও জমি ভাগ করা হয়।
সর্বশেষ ২০০৮ সালে জমিতে বাড়ির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তার স্বামীসহ সবাই প্রবাসে থাকার কারণে কাজের দেখাশোনার জন্য ভাসুরের শ্বশুর মাহবুব এনামুল হক সাহেবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তিনি আমাদের পিতৃতুল্য হওয়ায় তারা তিন ভাই মিলে তাকে সব কাজের অনুমতি দেন। নির্মাণকাজ চলাকালে যখন নিচতলার পিলারের কাজ শেষ হয় তখন মাহবুব এনামুল হক তাদের তিন ভাইকে ব্যাংক লোন নেয়ার পরামর্শ দেন। পরে তিন ভাই বিদেশ থেকে বাংলাদেশে এসে ২০০৯ সালে ব্যাংক লোন এবং সার্বিক কাজ দেখাশোনা করার জন্য মাহবুব এনামুল হককে একটি আম মোক্তার নামা দলিল করে দেন। তারা প্রবাসী হওয়ায় ব্যাংক থেকে টাকা উঠানো, ব্যাংকের কিস্তি জমা দেওয়াসহ যাবতীয় কাজ পরিচালনার জন্য তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তার স্বামীসহ তাদের তিন ভাইয়ের নামে ২০০৯ সালে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে ২০ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করা হয়। ২০১০ সালে বাড়ির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরেও ২০১১ সালে কোনো ভাইকে না জানিয়ে মাহবুব এনামুল হক ব্যাংক থেকে আরও ১০ লাখ টাকার ঋণ গ্রহণ করেন। তবে ২০১০ সালে বাড়ির তিন তলার নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছিল এবং তখনই প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা ভাড়া উঠানো হতো। সেই ভাড়ার টাকা মার্কেন্টাইল ব্যাংকে প্রতি মাসে জমা দেওয়ার কথা ছিল মাহবুব এনামুলের।
২০১৬ সাল পর্যন্ত অনিয়মিতভাবে ব্যাংকের কিস্তি প্রদান করতেন মাহবুব এনামুল। বিষয়টে তাদের সবার অজানা ছিল। তবে তিনি বলতেন কিস্তি পরিশোধ হচ্ছে, চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমার স্বামী ২০০৮ সাল থেকে মাহবুব এনামুল হকের পার্সোনাল অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিতেন। ২০১৩ সালে তার স্বামী ও তার মেজো ভাই নূর আলম বাংলাদেশে আসেন এবং মাহবুব এনামুল হককে ব্যাংকের যাবতীয় হিসাব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে মাহবুব এনামুল হকের কথা-কাটাকাটি হয়। এতে মাহবুব এনামুল হক ক্ষিপ্ত হয়ে তার স্বামীসহ মেজো ভাই নুর আলমকে সন্ত্রাসী দিয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন চালান। তখন মাহবুব এনামুল হক বলেন, ২০১৯ সালের মধ্যে ব্যাংক লোন পরিশোধ করার পর সবাইকে বাড়ি বুঝিয়ে দিবেন।
একপর্যায়ে আয়েশা আক্তারের স্বামী বিদেশ চলে যান এবং ২০১৯ সালে নভেম্বরে ফিরে এসে হিসাব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আবারো অনুরোধ জানান। তবে মাহবুব এনামুল হক হিসাব বুঝিয়ে না দিয়ে নানা টালবাহানা শুরু করেন। পরে বিষয়টি নিয়ে সবার সন্দেহ হওয়ায় সরাসরি ব্যাংকে যান। সেখানে জানা যায়, মাহবুব এনামুল হক ২০১৭ সাল থেকে ব্যাংকের কোনো কিস্তি পরিশোধ করেননি। ৬ বছরের বাড়ি ভাড়া প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা উঠানো হয়েছে। সরলতার সুযোগ নিয়ে এই ৬০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন মাহবুব এনামুল হক। ভাসুর নুর আলম বিষয়টি জানার পর আম মোক্তারটি বাতিল করেন। পরবর্তীতে তারা নারায়ণগঞ্জের যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতে একটি বণ্টনের মামলা নং-৮২/২১ দায়ের করেন। মামলায় ব্যাংকের টাকা পরিশোধের স্বার্থে বাড়ি ভাড়া আদায়ের জন্য একজন রিসিভার নিয়োগের আবেদন করি।
আদালত ২১ সালের মে মাসের ৬ তারিখে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পর্যালোচনা করে রিসিভার নিয়োগ করে যাবতীয় দায়িত্ব প্রদান করেন মার্কেন্টাইল ব্যাংক শিমরাইল শাখার ম্যানেজারকে। কিন্তু ব্যাংক ম্যানেজারের গাফিলতের কারণে তিনি ভাড়া আদায় করতে পারেননি। অথচ আদালতের আদেশ অমান্য করে মাহবুব এনামুল হক এখনো বাড়ির ভাড়া আদায় করে আসছেন কিন্তু ব্যাংকের কোনো টাকাই পরিশোধ করেননি।
আয়েশা আক্তার আরো জানান, মাহবুব এনামুল হক বাড়িটি দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়ে এখন তিনি নিজেই দখল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি এখনো ওই বাড়িটি নিজের বলে দাবি করছেন এবং নানা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি ও তার স্বামীর মেজো ভাই নুর আলমের স্ত্রী জেসমিন বাড়িটি রক্ষার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এ ব্যাপারে আইনগত প্রতিকার পাওয়ার আশায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলামের বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
থানা এবং কাউন্সিলর বরাবর লিখিত আবেদনের পর মাহবুব এনামুল হক আমাদের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। তারা এ ব্যাপারে সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে সব কাগজপত্র পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় আইনগত সহায়তা দিতে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।