মন্ত্রী গাজীর আবেদনে বিতর্কিত আ’লীগ নেত্রী নীলার অব্যাহতির আদেশ প্রত্যাহার
স্টাফ রিপোর্টার, প্রেসবাংলা২৪.কম: গত ১১ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জেলা আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদকসহ দলীয় সব পদ থেকে ফেরদৌসী আলম নীলাকে অব্যাহতির বিরোধিতা করে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার দাবি করেছিলেন মন্ত্রী ও নারায়ণগঞ্জ ১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী।
অবশেষে মন্ত্রী গাজীর আবেদন গৃহীত হলো। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের বিতর্কিত আওয়ামী লীগ নেত্রী ফেরদৌসী আলম নীলাকে দলীয় পদ পদবি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আদেশ প্রত্যাহার করেছে জেলা আওয়ামীলীগ।
মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদলের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ আদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
এ সময় বিজ্ঞপ্তিতে নীলার জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদকসহ সব পদ থেকে অব্যাহতির আদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ৮ মার্চ চাঁদাবাজি, জমিদখলসহ নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় সব পদ থেকে নীলাকে অব্যাহতি দেয় নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ।
সে সময় নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে উদ্দেশ্য করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক বলেছিলেন, এমন কোনো লোক নেই যার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠেনি। এর জন্য যদি আমাদের বহিষ্কার করা হয় বা অব্যাহতি দেওয়া হয় তাহলে তো আওয়ামীলীগ থাকবে না। আমাদের তিনবারের ভাইস চেয়ারম্যান ও রূপগঞ্জ আওয়ামীলীগের নেত্রী। সামনে নির্বাচন, তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আস্তে আস্তে এটা আলোচনায় আসবে যে, আওয়ামীলীগের জনপ্রতিনিধিরা কেমন। এতে নারায়ণগঞ্জের সব এমপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আওয়ামী লীগের এক এমপি-মন্ত্রীর ছত্রছায়ায় এ ধরনের নেত্রী আছে মানে সবার সঙ্গে আছে, এ ধরনের কথা হবে। আগে শোকজ করতে হয়। অপরাধ করে থাকলে এটা রাজউকের ব্যাপার। রাজউককে নিয়ে এটা আলোচনা হবে। আওয়ামীলীগের তো এখানে কিছু করার নেই।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সংগঠনের একটি সার্কুলার দেওয়া হয়েছে। কোনো কমিটি ভাঙা যাবে না। কাউকে অব্যাহতি বহিষ্কার করা যাবে না। যদি কেউ নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করে তাহলে তাকে অব্যাহতির জন্য প্রস্তাব পাঠাতে পারে। সুতরাং কাউকে অব্যাহতি দেওয়া যাবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাতে হবে। কোনো কমিটিও ভেঙে দেওয়া যাবে না।
নিজেদের মধ্যে কোন্দল আছে উল্লেখ করে গোলাম দস্তগীর গাজী এমপি বলেন, আওয়ামীলীগ একটি বড় দল। সেখানে কোন্দল থাকতেই পারে। একে অপরকে যদি হিংসে করি আপনাদের বিবেক আছে কী করতে হবে। আমরা বার বার আওয়ামীলীগকে বিজয়ী করেছি। আজ বিএনপি মাঠে নেমেছে। তারা বিভিন্ন দিক দিয়ে আমাদের হেয় করার চেষ্টা করছে। এগুলো যখন বিএনপি মাঠে মাঠে বলে বেড়াবে তখন আওয়ামীলীগের উন্নতি হবে না, অবনতি হবে। আপনি সভাপতি, সেক্রেটারি- আপনি তো রক্ষা করবেন আওয়ামী লীগকে। সেটা না করে আপনি যদি আওয়ামীলীগকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যান তাহলে দল কীভাবে টিকে থাকবে। শেখ হাসিনা কীভাবে প্রধানমন্ত্রী হবেন আগামী নির্বাচনে।
আওয়ামী লীগের নেতারা বিপদে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সবাই বিপদে আছি। আপনাদের একটি চিঠিতে অনেক কিছু আসে যায়। এতে মানুষের অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে।
সভায় তিনি বলেন, আমি হাউজের মতামত চাই। কারণ এই অব্যাহতি দেওয়ার অধিকার আমাদের আছে। আমরা চাই আপনি এই অব্যাহতি তুলে নিন। আপনি শোকজ করে দিতে পারেন। নাহলে গণতন্ত্র কীসের। এমন হলে গণতন্ত্র কোথায় থাকবে?
সে সভায় জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ৪ আগষ্ট জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদলের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বহিষ্কারের তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, সংগঠন বিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার দায়ে নীলার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয় জেলা আওয়ামীলীগ।
রুপগঞ্জের পূর্বাচল ও এর আশেপাশের এলাকায় জমি দখলসহ নানা অবৈধ কাজে দাপট ও প্রভাব খাটানোর অভিযোগ রয়েছে এই নীলার বিরুদ্ধে।
১০ আগস্ট দিনভর অভিযান চালিয়ে আওয়ামীলীগ নেত্রী ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌসী আলম নীলার নির্মিত ‘পূর্বাচল লেডিস ক্লাব’ ও ‘লাভ ফরেস্ট রেস্টুরেন্ট’ গুঁড়িয়ে দেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।
অভিযানে অংশ নেওয়া রাজউকের কর্মকর্তারা জানান, পূর্বাচল ১৩ নম্বর সেক্টরের ৩০৫ নম্বর রোডে প্রায় তিন বিঘা জমি প্রতিবন্ধীদের খেলার মাঠ হিসেবে সংরক্ষণ করেছিল রাজউক। এখান থেকে দুই বিঘা নীলা দখল করে তৈরি করেছেন পূর্বাচল লেডিস ক্লাব। ইতোমধ্যে ২ শতাধিক সদস্যের ক্লাবটির সদস্যপদ বিক্রি হয় তিন লাখ টাকায়। আজীবন সদস্যপদ পেতে চার লাখ আর দাতা সদস্যপদ বেচাকেনা হয় ছয় লাখ টাকায়।
জানা যায়, পূর্বাচল লেডিস ক্লাব অভিজাত শ্রেণির ক্লাবে পরিণত হয়েছিল। ক্লাবটিতে ধনীদের যাতায়াত ছিল। চারপাশে সীমানা দিয়ে ভেতরে বানানো হয়েছিল সুইমিং পুল, অফিস কক্ষ, ব্যায়ামাগারসহ কয়েকটি অবকাঠামো। ক্লাবটি গড়ে তুলে নীলা নিজেই বসেন ক্লাবের সভাপতির পদে।