পুলিশ-র‌্যাবের সঙ্গে বিহারীদের সংঘর্ষ, গ্রেপ্তার ৩৬

পুলিশ-র‌্যাবের সঙ্গে বিহারীদের সংঘর্ষ, গ্রেপ্তার ৩৬

প্রেসবাংলা ২৪. কম: নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ আদমজীতে পুলিশ-র‌্যাবের সঙ্গে বিহারীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারসেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে কমপক্ষ ১৫/২০ জন আহত হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে আদমজী এলাকার চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

সােমবার (১৩ জুন) সকালে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কার্যালয়ের সামনে এঘটনাটি ঘটেছে।

এ ঘটনায় পুলিশ বিক্ষোভকারীদে ছত্রভঙ্গ করতে প্রায় অর্ধশতাধিক টিয়ারশেল ও কয়েকশ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষন কর।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শুক্রবার (১০ জুন) আদমজী জামে মসজিদের ভিতরে পুলিশ কর্মকর্তার উপর হামলার ঘটনায় রােববার (১২ জুন) দিবাগত রাত ১টা থেকে সােমবার (১৩ জুন) ভােররাত ৪টা পর্যন্ত বিহারী ক্যাম্পের ভিতর অভিযান চালায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ। অভিযানে ৩৫ থেকে ৪০ জনক গ্রেপ্তার এবং অনেক নারী-পুরুষকে লাঞ্ছিত করে এবং ঘরের দরজা জানালা ভাংচুরের অভিযােগ আনে বিহারী ক্যাম্পের বাসিদারা।

এই ঘটনার প্রতিবাদ বিহারী ক্যাম্পের কয়কশত নারী-পুরুষ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষােভ করে। এতে নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-চিটাগাংরাড সড়ক যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ ঘটনায় বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে আদমজী ইপিজড প্রবেশ করতে গিয়ে চরম ভােগান্তিতে পড়ে শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা। পরে পুলিশ ও র‌্যাব যৌথভাবে এ্যাকশন গিয়ে লাঠিচার্জ, টিয়ার সেল ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে বিক্ষাভকারীদের ছত্র-ভঙ্গ করে দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানায়, সােমবার (১৩ জুন) সকাল ৬টা থেকে থানা কার্যালয়ের আশপাশে অবস্থান নেয় বিহারীরা। এবং আদমজী ইপিজেডের তিনটি প্রবেশ পথ ব্যারিকড সষ্টি করে। শ্রমিকদের ভিতর ঢুকতে দিলেও অন্য কােন গাড়ি ঢুকতে বাধা দিছিল তারা। আর সকাল ৮টার দিকে বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কার্যালয় ঘেরাও করে প্রধান ফটকের সামন অবস্থান নিয়ে বিক্ষােভ করে। তারা সড়কের উপর কাঠের টেবিল, চকি ফেলে যানবাহন চলাচল প্রতিবন্ধকতা সষ্টি করে। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয় অভিযান যদি কােন নিরপরাধ মানুষ আটক হয় থাকে আলােচনার মাধ্যম তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। কিন্তু বিক্ষােভকারীরা বলে সবাইকে ছেড়ে দিতে হবে। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তর্কে জড়ায় তারা। এদিকে ঘটস্থলে সকাল ৯টায় এস উপস্থিত হয় নারায়ণগঞ্জর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অপরাধ আমির খসরু। তিনি বিক্ষাভকারিদের সাথে কথা বলার এক পর্যায় তাদের মধ্য থেকে অতর্কীত পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এ সময় পুলিশ বিক্ষােভ কারিদের ছত্রভংগ করতে প্রায় অর্ধশতাধিক টিয়ারশল ও কয়েকশ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষন করে। এরপর প্রায় ঘটাব্যাপী পুলিশ ও বিহারিদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পর সকাল সােয়া ১০ টার দিকে ৬ নং ওয়ার্ডর সাবেক কাউন্সিলর সিরাজ মন্ডল ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন। এসময় তিনি বিক্ষােভ কারিদের সাথে কথা বলেন। এবং তাদের বুঝিয়ে ফেরত পাঠানাের চেষ্টা করেন। একপর্যায় বিক্ষাভকারিরা বেলা সাড়ে ১০টায় সরে যায়। পরে পোনে ১১ টায় বিহারিরা আবার আদমজী নতুন বাজার এস অবস্থান নেয়। এবং আবারাে ইট পাটকল নিক্ষেপ করতে থাকে।

এ সময় নাসিক ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান ঘটনাস্থল আসেন। পর তিনি বিহারিদের বুঝিয়ে আবার ক্যাম্পের ভিতর নিয়ে যায়। এর আগ আদমজী ইপিজডের কয়েক কর্মকর্তার ওপর হামলা করে। অপরদিকে ১৫জন বিহারি আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে তাদের নাম জানা যায়নি।

নাম প্রকাশ্য অনিচ্ছুক কয়েকজন বিহারী জানায়, ক্যাম্পের ভােলা মেম্বার হ্যান্ড মাইকিং করে লােকজন জড়াে করে। এবং ইপিজেডের পকেট গেট, রেললাইন গেট বাধা সষ্টি করে। ক্যাম্পের লােকজনক জড়াে করে থানার দিকে পাঠায়। পরে তাকে থানায় ডাকা হলেও সে যায়নি। তারা আরও জানায়, পুলিশের মামলায় যারা আসামী হয়েছে তাদের নাম দিয়েছে পুলিশ সাের্স ক্যাম্পের ভুট্ট ও নাসিম মাস্টারর ভাই তাসলিম। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল না এমন মানুষদের নাম তারা পুলিশকে দিয়েছে।

বিহারী ক্যাম্পের চেয়ারম্যান লিয়াকত হােসেন জানান, শুক্রবার মসজিদের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। রােববার রাত থেকে সােমবার ভােররাত পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক পুলিশ ক্যাম্পের ভিতরে অভিযান চালায়। পুলিশ অনেক নারী-পুরুষকে মারধর করেছে। আর ঘটনার সময় মসজিদে যায়নি এবং হামলায় ছিল না তাদেরও গ্রেপ্তার করেছে। এই ঘটনায় ক্যাম্পের অধিবাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। তারা আমার বাসায় এস দরজা-জানালায় আঘাত করে। পরে আমি সকাল ৬টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি সাহেবকে ফােন করি। কিন্তু ফােন রিসিভ না হওয়ায় আমি থানায় ঘিয়ে বিষয়টি ডিউটি অফিসারকে জানিয়ে চলে আসি। এরমধ্য সকাল সােয়া ৬টার দিকে আদমজী ইপিজেডের জেনারেল ম্যানেজার আমাকে ফােন দিয়ে জানায় তাদের গাড়ি ভিতর যেতে পারছে না। তখন আমি ঘটনাটি তাকে অবহিত করি। তিনি হয়তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি সাহেবকে ঘটনা জানিয়েছেন। পরে ওসি সাহেব আমাকে ফােন দিয়ে থানায় আসতে বলে। সকাল ৭টার একটু আগে আমি থানায় যাই। কিন্তু সেখান গিয়ে দেখি আমার ক্যাম্পের অনেক মানুষ থানার সামনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। থানার ওসি তখন বলে রাতে অভিযান কােন নিরপরাধ লােক আটক হয়ে থাকলে আলােচনার মাধ্যমে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। কিন্তু ক্যাম্পের লােকজনের দাবি সবাইকে ছেড়ে দিতে হবে। এ সময় আমি ক্যাম্পের লােকজনকে অনুরােধ করে বলি আইনের বিষয় আছে যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের তো ছাড়বে না। যারা নিরোপরাধ তাদের ছেড়ে দিবে বলছে। কিন্তু তারা আমার কথা শুনে নাই। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মশিউর রহমান ফােন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া যায়নি। তবে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শওকত জামিল জানান, রাত ৩৬জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com