১২১ বছরে পা রাখলো ভিক্টোরিয়া
মাহির আমির মিলন, প্রেসবাংলা ২৪.কম: কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজ কুমিল্লা জেলায় অবস্থিত সবচেয়ে পুরাতন এবং বিখ্যাত কলেজ। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ১৮৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। রায় বাহাদুর আনন্দচন্দ্র রায় রানী ভিক্টোরিয়ার নামে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ঠিকাদারি পেশার সাথে যুক্ত ছিলেন এবং শিক্ষা-অনুরাগী ছিলেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছেন। এই কলেজ এভাবে পরিপূর্ণ বাস্তবে রূপ নেয়। কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর ব্রিটিশ সরকার তাকে রায় বাহাদুর উপাধি প্রদান করে। তার স্মৃতি রক্ষার্তে ভিক্টোরিয়া কলেজের ইন্টারমেডিয়েট শাখায় প্রধান ফটকে একটি সাদা রঙের ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে। বিজ্ঞানী_সত্যেন্দ্রনাথ_বসু ছিলেন এই কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ যিনি ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। এই কলেজ বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর অধিভুক্ত।
জমিদার রায় বাহাদুর আনন্দচন্দ্র রায় ১৮৮৬ সালে “রায় এন্ট্রান্স ইস্কুল” নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৮৮ সালে মহারাণী ভিক্টোরিয়ার “জুবিলি জয়ন্তী” স্মারক চিহ্ন স্বরূপ এটিকে ভিক্টোরিয়া স্কুলে রূপান্তরিত করা হয়। পরবর্তীকালে ১৮৯৯ সালে তা পূর্ণাঙ্গ কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ও ভিক্টোরিয়া কলেজ নাম ধারণ করে। একই বছর এই কলেজটি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ হিসেবে গণ্য হয়। ১৯০২ সালে এক প্রচন্ড অগ্নিকান্ডের ফলে এই কলেজটি সম্পূর্ণ ভষ্মিভূত হয়। অবশ্য এর কিছু কাল পরেই প্রতিষ্ঠাতা কর্তৃক এর পুননির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। ১৮৯৯ সালে ভিক্টোরিয়া কলেজ একটি টালির ঘর দিয়ে শুরু হয়েছিল। পরে অনেকের আর্থানুকূল্যে বর্তমান উচ্চ মাধ্যমিক শাখার অধ্যক্ষের চেম্বার, অফিসকক্ষ, লাইব্রেরী ও অধ্যাপক মিলনায়তনটি নির্মিত হয়। ১৯০৪ সালে একটি ট্রাস্ট ডিডের মাধ্যমে স্কুল ও কলেজটিকে পৃথক করা হয়েছিল। এ সময়ে কলেজে একটি গভর্নিং বডিও ছিল। এই বডির উপরেই বর্তেছিল কলেজ পরিচালনার দায়ভার। এই গভর্নিং বডি ত্রিপুরার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, কলেজ অধ্যক্ষ ও প্রতিষ্ঠাতা শ্রী আনন্দচন্দ্র রায়ের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল। শ্রী আনন্দচন্দ্র রায় ছিলেন এই গভর্নিং বডির প্রথম সম্পাদক। ১৯০৪ সালের টাস্ট ডিডে মূলত শ্রী আনন্দচন্দ্র রায়কে কলেজ গভর্নিং বডির আজীবন সম্পাদক রাখার স্বপক্ষে একটি রায় ঘোষণা করে হয়েছে।
১৮৯৯ সাল থেকেই কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফিলিয়েটেড কলেজের সারিতে দাঁড়াতে সমর্থ হয়েছিল এই কলেজ। এ সময়ে এই কলেজে এফ এ স্ট্যান্ডার্ড চালু হয়। এর কিছুকাল পরেই চালু হয় আইএ স্ট্যান্ডার্ড। ১৯০৪ সালের পূর্বে এই কলেজে অন্য কোন বিভাগ বা স্নাতক শ্রেণী চালু করা সম্ভব ছিল না। ১৯১৮ সালের পূর্ব পর্যন্ত ভিক্টোরিয়া কলেজ কর্তৃপক্ষ কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফিলিয়েশনের শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ১৯১৮ সালের দিকেই কেবল কলেজের নতুন ভবনটি নির্মিত হয় এবং ঐ বছরই স্নাতক শ্রেণী খোলার জন্য কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি আসে। বিজ্ঞান বিষয়ক আইএসসি এফিলিয়েশন আসে ১৯২৪ সালে। এই কলেজে বিশ দশকের (১৯২৫) মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে দেশ বিভাগ (১৯৪৭) পর্যন্ত ইংরেজি, গণিত, সংস্কৃত, রাজনীতি বিজ্ঞান, অর্থনীতি ও আরবী বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়। তখন অনার্স কোর্স ছিল দুই বছর ব্যাপী। পাস কোর্সও তাই। এমএ কোর্সও দুই বছর পড়ানো হতো। ১৯৪২ সালে এ কলেজে বিএসসি কোর্স চালু হয়। এবং ১৯৫৫-৫৬ সালের দিকে বিকম কোর্স শুরু হয়। এর কিছুকাল আগে থেকেই অর্থাৎ, ১৯৪৭-৪৮ সাল থেকে এখানে আইকম কোর্স চালু ছিল। ১৯৬২-৬৩ সালে ভিক্টোরিয়া কলেজ উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি শাখায় বিভক্ত হয়।
১৯৬৩-৬৪ সালের দিকে কলেজে প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলা ও অর্থনীতি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়। পরে ১৯৭১-৭২ সালের দিকে একাউন্টিং, ব্যবস্থাপনা, রাজনীতি বিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন প্রভৃতি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। উল্লেখ্য, ১৯৬৪ সালের ২৩ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকেই চট্টগ্রাম বিভাগের সব কলেজ এর অধীনে চলে যায়। ১৯৭৩-৭৪ সালের দিকে এই কলেজে বাংলা ও অর্থনীতি বিষয়ে এমএ খোলা হয়েছিল এবং তা প্রায় এক বছরের মতো চালু ছিল। ১৯৮২ সালে এই কলেজে আইসিএমএ কোর্স চালু হয়। ১৯৫৮-৫৯ সালের দিকে এ কলেজে নাইট শিফট চালু হয়। তা ১৯৬৮ সালে ১লা মে নাগাদ চালু ছিল। ১৯৬৮ সালের পয়লা মে কলেজটি সরকারী হয়। এরপর থেকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের নাম পরিবর্তন হয়ে কুমিল্লা সরকারী ভিক্টোরিয়া কলেজ নামকরণ হয়। ১৯৮৪-৮৫ সাল থেকে কলেজটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ হিসেবে মর্যাদা পায়। এরপর থেকে ডিগ্রি শাখা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলে যায়। বর্তমানে কলেজে ২২টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু আছে। এবং এগুলোর প্রায় প্রত্যেকটি বিষয়ে চালু আছে মাস্টার্স কোর্স।