বেপরোয়া সাবেক বিএনপি নেতা আব্দুল আউয়াল, আতঙ্কে এলাকাবাসী

বেপরোয়া সাবেক বিএনপি নেতা আব্দুল আউয়াল, আতঙ্কে এলাকাবাসী

 

সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি, প্রেসবাংলা২৪.কম: সিদ্ধিরগঞ্জের হাউজিং এলাকার সেই আব্দুল আউয়াল আবারও বেপরোয়া কর্মকান্ড শুরু করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অবৈধভাবে জমি দখল, জাল কাগজ তৈরী করে জমির মালিকানা দাবি, ব্যবসায়ী- জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের, মসজিদ কমিটিসহ মসজিদের ইমামকে হুমকি-ধমকি, স্কুলের হিসাব খাতা ছিনতাইসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

 

নূর হোসেন এলাকায় থাকার সময় তার নাম বিক্রি করে ঐ সময় সিদ্ধিরগঞ্জ হাউজিং এলাকার জমি দখলসহ নানা কর্মকান্ড করে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয় বলে জনশ্রুতি রয়েছে। সেভেন মার্ডারের পর কিছুদিনের জন্য গা ঢাকা দিয়েছিল আব্দুল আউয়াল ও তার ভাই নাজির। কিছুদিন আত্মগোপনে থাকার পর ২০১৬ ইং সনে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুর রহমানের হাতে ফুলের তোড়াদিয়ে আনুষ্ঠানিকেভাবে আওয়ামীলীগে যোগ দেয় বিএনপির সাবেক এ সমর্থক। পল্টিবাজ হিসাবেও আব্দুল আউয়াল এলাকায় পরিচিত। এরপর থেকেই নিজেকে হাউজিং এলকার ডন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে আপ্রান চেষ্টা করছেন তিনি।

 

এলাকাবাসী জানায়, সুযোগমত কখনো সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন, কখনো সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত, আবার কখনো এমপি শামীম ওসমানের লোক পরিচয় দিতো বহুল আলোচিত-সমালোচিত সিদ্ধিরগঞ্জ হাউজিং এলাকার বিতর্কিত আব্দুল আউয়াল। একইভাবে কখনো সাবেক কাউন্সিলর নুর হোসেনের খাস লোক আবার কখনো বর্তমান কাউন্সিলর আরিফুল হক হাসানের পরিচয় দিতো। তাদের নাম ব্যবহার করেই এভাবেই চলছিলো তার নানা অপকর্ম।

 

উল্লেখ্য, গত ৯-৪-২০১৯ ইং তারিখে জনৈক সাইদুজ্জামান আব্দুল আউয়াল ও তার ভাই নাজিরের বিরুদ্ধে একটি জিডি করেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানায়। জিডিতে সাইদুজ্জামান উল্লেখ করেন, সাইদুজ্জামানের জায়গার কাজ করিয়ে দিবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনেক টাকা পায়সা হাতিয়ে নেয় আঃ আউয়াল ও তার ভাই নাজির। টাকা-পয়সা নেয়ার সময় অনেক গন্যমান্য ব্যক্তি স্বাক্ষী ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয় ঐ জিডিতে। পুনরায় গত ২৯-৩-২০১৯ ইং তারিখ দুপুর ২ টায় তার নিকট পাওনা টাকা চাইতে গেলে সে ক্ষিপ্ত হয়ে সাইদুজ্জামানের ক্রয়কৃত সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল পায়তারা করছে বলে উল্লেখ করা হয় জিডিতে। তার এসব কর্মকান্ডে বাধা প্রদান করলে তার অজ্ঞাতনামা লোকজন নিয়ে সাইদ্দুজ্জামানকে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি ও হুমকি-ধমকি প্রদর্শন করছে বলে সাইদুজ্জামান জিডিতে উল্লেখ করেছেন।

 

এদিকে গত ৫ মে সিদ্ধিরগঞ্জ হাউজিংস্থ হাজী ফজলুল হক মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে গিয়ে জোরপূর্বক স্কুলের হিসাবের খাতা তিনি কেড়ে নেন বলে জানিয়েছেন ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষক শফিউর রহমান খান লিটন। এর আগে এ স্কুলের নাম করে কিংবা অনুষ্ঠানের নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা দাবী করে আব্দুল আউয়ালের লোকজন। কেউ না দিতে চাইলে নানা ভয় ভীতে দেখিয়ে থাকে তার বাহিনী। ঝামেলা এড়াতে অনেকে বাধ্য হয়েই টাকা দিতে হয় আব্দুল আউয়ালকে।

 

সিদ্ধিরগঞ্জ হাউজিং এলাকার ফজলুল হক মডেল স্কুলের ভর্তির টাকাসহ যাবতীয় টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অনেক অর্থ আত্মসাতসহ নানা অনিয়ম করায় এলাকাবাসী তাকে অনিয়ম করা থেকে বাধা প্রদান করলে আব্দুল আউয়াল তার সহযোগীদের নিয়ে এলাকাবাসীর সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

 

গত ৭ মে (মঙ্গলবার) আসরের নামাজের পর সিদ্ধিরগঞ্জ হাউজিং মসজিদে মুসল্লি ও মসজিদ কমিটিকে তার কথা শোনতে হবে বলে জানিয়ে দেয়।

 

এলাকাবাসী জানায়, আসরের নামাজের পর হঠাৎ করে তিনি মুসল্লিদের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলেন, এ মসজিদ চালাতে হলে আমার কথা শুনতে হবে। সেমতে তারাবীর নামাজের জন্য হাফেজ তার কথা মত ঐ এলাকার কাজী নূরুল ইসলামের ছেলে হাফেজ শফিউল্যাহকে নিয়োগ দিতে হবে।

 

 

মুসল্লিরা জানায়, এর আগে ২০ এপ্রিল এ মসজিদের হাফেজ নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে পরীক্ষার মাধ্যমে। হাঠাৎ করে পরীক্ষা ছাড়া নতুন করে পূর্বের দুই হাফেজের একজনকে বাদ দিয়ে আরেকজন হাফেজ নিয়োগ করা হলে নানা সমস্যার সৃষ্টি হবে। এসময় এলাকাবাসী তার কথা শুনতে অপারগতা প্রকাশ করায় তিনি হুমকি-ধমকি দেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এতে এলাকায় উত্তেজনা বিরজ করছে।

 

এলাকাবাসী জানায়, চিটাগংরোড বিদ্যুৎ অফিস সংলগ্ন মার্কেটে আব্দুল আউয়ালের রয়েছে রড-সিমেন্টের দোকান। হাউজিং এলাকায় কেউ নতুন বাড়ী করতে হলে তার দোকান থেকে রড-সিমেন্ট কেনার জন্য চাপ দিয়ে থাকেন তিনি। এই ব্যাপারে আব্দুল আউয়াল তার ছেলে কামরুজ্জামান ও ছোট ভাই নাজিরকে কাজে লাগান। নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশী দাম নেয়ায় অনেকেই তার দোকান থেকে রড-সিমেন্ট কিনতে আগ্রহী হয় না। আর কেউ অন্য দোকান থেকে রড সিমেন্ট কিনলেই নানা ভাবে হয়রানি করে থাকে আব্দুল আউয়াল গং। সামান্য একজন শ্রমিক থেকে কয়েক শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন আব্দুল আউয়াল। এক দশক আগেও সিদ্ধিরগঞ্জের কসাই পাড়া এলকায় ছোট একটি টিনের ঘর ছিল আউয়ালের। এক পর্যায়ে প্রথম শাশুড়ির টাকায় ব্যাবসা শুরু করে সে। কিন্তু প্রথম শাশুড়ির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে টাকা আত্মসাৎ করে দ্রুত ধনী বনে যায় আব্দুল আউয়াল। এই নিয়ে দীর্ঘদিন শশুরবাড়ীর স্বজনদের সাথে তার দ্বন্ধ চলে আসছে। কিন্তু তার শক্তিমত্তার কাছে অসহায় হয়ে পড়ে শ্বশুরবাড়ীর নিরীহ লোকজন। অল্প দিনে বড় লোক হয়ে যাওয়ায় নিজ বাড়ীর কাজের মেয়ের সাথে প্রণয় গড়ে ওঠে আব্দুল আউয়ালের। পরবর্তীতে তিন সন্তান থাকারও পর কাউকে না জানিয়ে কাজের মেয়েকে বিয়ে করেন বহুরুপী আব্দুল আউয়াল।

 

এই ব্যাপারে এলাকায় ব্যাপক সমালোচিত হন তিনি। বর্তমানে হাউজিং এলাকায় তিন তলা বিশাল বাড়ীতে দুই বউকে নিয়ে এক সাথেই বসবাস করছেন আব্দুল আউয়াল।  সিদ্ধিরগঞ্জ হাউজিংয়ে সাধারণত বাইরে থেকে লোকজন এসে বাড়ী ঘর করে। স্থানীয় লোকদের মত তাদের প্রভাব না থাকায় সুযোগ নিয়ে থাকে আব্দুল আউয়াল গং। রড সিমেন্টের ব্যবসার পাশাপাশি নানা অজুহাতে
তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকে সে। নূর হোসেনকে ভুল বুঝিয়ে এবং নূর হোসেনের নাম ভাঙ্গীয়ে হাউজিং এলাকার অনেকের কাছ থেকে চাঁদা উত্তোলন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

 

ঐ সময় তিনি  এলাকার চলাচলের সরকারী রাস্তা দখল করে ঘর নির্মাণ করেন। কিছুদিন  পূর্বে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ঐ এলাকায় রাস্তা নির্মাণ করলে তার দখল করা রাস্তা পূনরুদ্ধার করেন সিটি কর্পোরেশন।এসময় তার ঘরের কিছু অংশ ভেঙ্গে ফেলে সিটি কর্পোরেশন। এতে আব্দুল আউয়াল মনে করতে থাকে কাউন্সিলর হাসান তার বাড়ি ভাঙ্গিয়েছে। পরবর্তীতে তিনি এ ব্যাপারে নালিশ করেন সিটি মেয়র সেলিনা হায়াত আইভির কাছে।

 

সিটি মেয়র এ ব্যাপরে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা এবং সার্ভেয়ার দিয়ে তদন্ত করান। তদন্তে আব্দুল আউয়াল সরকারী রাস্তার জায়গা দখল করে ভবন নির্মাণের প্রমাণ পায়। পরবর্তীতে সিটি মেয়রও ঐ তদন্তের পক্ষে রায় দিয়ে সরকারী রাস্তার জায়গা পুনরুদ্ধার বৈধ বলে মত দেন। এতেও
কাউন্সিলর হাসানের হাত ছিল বলে প্রচার করতে থাকে আব্দুল আউয়াল। সেই থেকেই  তিনি কাউন্সিলর হাসানের বিরোধ করতে থাকে।

 

এরপূর্বে তিনি কাউন্সিলর হাসানের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। বিগত সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আব্দুল আউয়াল ভোটারদের কাছে কাউন্সিলর হাসানের জন্য ভোট
প্রার্থনা করেছিলেন। একইভাবে নিজ এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি, ব্যবসায়ীরও বিরুদ্ধাচারণ করতে থাকে।

 

তবে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে আব্দুল আউয়াল বলেন, আমি কাউকে হুমকি ধমকি দেইনি। আমি সাধারনত ব্যবসা করি। প্রয়োজনে বিভিন্ন নেতাদের সাথে মিশি। তাছাড়া আমার প্রতিপক্ষরা বিভিন্ন সময় নানান ধরনের গুজব ছড়ায়।

 

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com