সিদ্ধিরগঞ্জের অলিগলিতে মাদকের ছড়াছড়ি

সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি, প্রেসবাংলা২৪.কম: বর্তমান সরকার মাদকের বিরূদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বহু প্রশংসা পেয়েছে। তবে সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলাধীন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার বিভিন্ন এলাকার অলিতে-গলিতে মাদকে ছড়াছড়ি দিনদিন বেড়েই চলছে। নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (এনসিসি) এর প্রথম ১০ টি গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ড রয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায়। তাছাড়াও আদমজী ইপিজেড, সরকারি আদমজী নগর এম.ডব্লিউ. কলেজসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন বিভিন্ন এলাকায়। থানার বেশ কয়েকটি স্পটে মাদক ব্যবসায়ীদের প্রত্যক্ষ কারবার লক্ষ্য করা গেলেও পুলিশ প্রশাসনের নীরব ভূমিকা নিয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উঠছে নানানরকমের প্রশ্ন। এলাকাবাসীরা তাদের সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে অতি দ্রুত পুলিশকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান।
বিশেষ অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানী ঢাকার প্রবেশপথ এবং ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অবস্থান। যার সুবাদে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে মাদক ব্যবসায়ীরা অতি সহজেই নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকাসহ সিদ্ধিরগঞ্জের বহু স্থানে মাদক সাপ্লাই দিতে পারে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার কিছু এলাকাতো ইতিমধ্যে মাদকপল্লীতে রূপান্তর হয়েছে। যেখানে সহজেই মাদক পাওয়া যায় এবং নিরাপদ ভাবে মাদক সেবনও করা যায়।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, কিছু পরিচয়দানকারী অসাধু রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় থেকে পর্দার আড়াল থেকে প্রভাব বিস্তার করে তাদের মাদক ব্যবসায় চালিয়ে যাচ্ছে। এলাকার কিছু চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছে- সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজির টিসি রোড এলাকার যুবলীগ নেতা ফারুকের ছোটভাই জসিম, সিদ্ধিরগঞ্জের মাদক ব্যবসায়ী পলাশ, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর ফারুকের সহযোগী পরিচয়দানকারী হান্নান ও আহাদ, পাইনাদী এলাকার মুন্না, সাইলো গেইট এলাকার মানিক, মিজমিজি এলাকার চান বাদশা, মুজিববাগ এলাকার ইমরান এবং স্থানীয় জামায়াত নেতা ও মসজিদ কমিটির মুতওয়াল্লী আব্দুস ছামাদের ছেলে আবু সুফিয়ানসহ আরো অনেকে।
বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর বরাতে জানা যায়, মিজমিজি পূর্ব পাড়া এলাকার আওয়ামিলীগ নেতা আঃ আজীজ মাদবরের প্রতিবেশী আব্বাস ও রহিমা তারা নিজ বাড়িতেই নারীদের দেহ ব্যবসাসহ তাদের রমরমা মাদক ব্যবসায় পরিচালনা করে আসছে। তারা তাদের স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন অসাধু প্রতিবেশীদের ছত্রছায়ায় এসব কাজ প্রকাশ্যে করে আসছে বহুদিন ধরে। উল্লেখিত মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন একাধিক মামলা কয়েকবার গ্রেফতার হওয়া আসামী।
এছাড়াও সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন বিভিন্ন এলাকার অলিতে-গলিতে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের সমন্বয়ে তৈরি হওয়া পৃথক পৃথক কিশোর গ্যাং রয়েছে। যারা অতি সতর্কতা অবলম্বনে বিভিন্নভাবে মাদক বহনকরে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেয় এবং নিজেরাও সেবন করে থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিদ্ধিরগঞ্জের এক প্রবীণ বাসিন্দা আফসোস করে বলেন, পুলিশ প্রশাসন কি এতটাই দুর্বল যে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে পারছে না? এই মাদকে আমাদের সিদ্ধিরগঞ্জের শুধু যুবসমাজ নয় আমাদের কিশোর সমাজকেও একেবারে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। সিদ্ধিরগঞ্জ পুলিশের কাছে আমার বিশেষ অনুরোধ আপনারা আমাদের কে মাদকের এই ভয়াল থাবা থেকে বাঁচান। আমাদের সন্তানদেরকে এভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিবেন না।
গত ২৮ অক্টোবর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান সিদ্ধিরগঞ্জে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে এলাকায় মাদক ব্যবসা ও মাস্তানির বিরূদ্ধে বলেন, আমার নারায়ণগঞ্জ -৪ আসনে (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জে) কোনো মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবনকারীর যায়গা নেই। মাদক বিক্রি ও মাদক সেবন করতে হলে নারায়ণগঞ্জের বাহিরে গিয়ে করতে হবে। আল্লাহ যদি আমাকে সুস্থ রাখেন আগামী সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আমরা প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে মিটিং করে পঞ্চায়েত কমিটি করবো। ওই পঞ্চায়েতের মাধ্যমে এলাকা চলবে। কোনো মাস্তানকে মাস্তানি করতে দেয়া হবে না।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ কামরুল ফারুক জানান, আমরা সবসময় মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিনিয়ত আমরা বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করছি মাদকের বিরুদ্ধে। স্থানীয়দেরকে আমরা বলছি আপনারা তথ্য দিয়ে পুলিশকে
সহযোগিতা করুন।