নগর প্রতিনিধি, প্রেসবাংলা২৪.কম: আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের পাট শিল্পকে রক্ষায় প্রস্তাবিত কর প্রত্যাহারসহ কাঁচা পাট রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা বন্ধ করতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন পাট রপ্তানিকারকদের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ জুট এসোসিয়েশনের নের্তৃবৃন্দ।
শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জে বাংলাদেশ জুট এসোসিয়েশনের (বিজেএ) প্রধান কার্য্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
প্রতিষ্ঠানটির ভাইস চেয়ারম্যান আরজু রহমান ভুঁইয়া জানান, চলতি বছর সরকারি হিসেব অনুযায়ী দেশে ৮৪ লাখ বেল পাট উৎপাদন হলেও সাম্প্রতিক বন্যায় ৫ লাখ বেল পাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ জুট এ্যাসোসিয়েশন মাত্র দশ লাখ বেল কাঁচা পাট রপ্তানি করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তবে দেশের বেসরকারি পাটকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স এসোসিয়েশন (বিজেএসএ) এবং বাংলাদেশ জুট মিলস এসোসিয়েশন (বিজেএমএ) ইতিমধ্যে প্রতি টন কাঁচা পাট রপ্তানির জন্য ২শ’ ৫০ ডলার রপ্তানি শুল্ক ধার্য্য করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছে। এটি দেশের পাট শিল্পের জন্য আত্মঘাতি প্রস্তাব দাবি করে পাট রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের এই নেতা আশংকা করেন, তাদের এই প্রস্তাব সরকার বাস্তবায়ন করলে পাট শিল্পের জন্য মারাত্মক বিপদজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে। এতে দেশের পাটের বাজার চলে যাবে অন্য দেশে এবং পাট শিল্পের সাথে জড়িত বৃহৎ জনগোষ্ঠা কর্মহীন হয়ে পড়বে।
তিনি আরো বলেন, বিজেএমসির কাছে গত অর্থ বছর উৎপাদিত সাড়ে ছয় লক্ষ বেল পাট এখনো উদ্বৃত্ত রয়েছে। সে হিসেবে এবার বন্যার ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পরও দেশে প্রায় ৭২ লাখ বেল কাচাঁ পাট উৎপাদন হবে। অভ্যন্তরিন শিল্পকারখানায় কারাখানয় পাটের প্রয়োজন ৫৫ লাখ বেল পাট। ফেলে দেশে উৎপাদতি কাচাপাট উদ্ধত্ত থাকবে ১৭ লাখ বেল । আর কাচাপাট রপ্তানিকারকরা মাত্র দশ লাখ বেল কাঁচা পাট চলতি বছর রপ্তানি করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করেছে বিজেএ। কিন্তু দেশের বেসরকারি পাটকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স এসোসিয়েশন (বিজেএসএ) এবং বাংলাদেশ জুট মিলস এসোসিয়েশন(বিজেএমএ) ইতিমধ্যে প্রতিটন কাঁচা পাট রপ্তানীর জন্য ২শ' ৫০ ডলার রপ্তানি শুল্ক ধার্য করার জন্য সরকারের কাছে যে আবেদন করেছে তা সম্পুর্ণ অযৌক্তিক ও বাস্তবতা বিবর্জিত। যা পাট শিল্পের জন্য মারাত্মক বিপদজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে এবং কাচা পাট রপ্তানীতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে। এটি সরকার বাস্তবায়ন করলে একটিকে যেমন কাচাঁপাট রপ্তানী কারকরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে অন্যদিকে বাংলাদেশ আন্তজার্তিক বাজার হারাবে। এর ফলে কৃষকরা পাটের ন্যায্য মুল্য থেকে বঞ্চিত হবে।
দেশের পাট রপ্তানী বন্ধ করতে আবারও ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে দাবি করে, জুট এসোসিয়েশনের নেতারা অভিযোগ করেন, স্পিনার এসোসিয়েশনের ১০টি প্রতিষ্ঠান সিন্ডিকেট করে কাচঁপাটের দর কমাতে এবং পাটমজুদ করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য অযুক্তিক প্রস্তাব তুলে ধরছে। তাই কাচঁপাট রপ্তানীর খাতে যে কোন ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে সরকারকেব ভেবে চিন্তে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার দাবি জানান । অন্যথায় সরকারকে দায়িত্ব নিতে বলে বলে সতর্ক করে দেন পাটরপ্তানীকারক নেতারা।
বিজেএর এই নেতা আরো অভিযোগ করেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ জুট স্পীনার্স এসোসিয়েশন চলমান করোনা পরিস্থিতি ও বন্যায় পাট কাচাঁপাট উৎপাদনে ক্ষতির কথা উল্লেখ করে মন্ত্রনালয়ে একটি আবেদন করেছেন । সেখানে তারা উল্লেখ করেছেন দেশীয় পাট শিল্পে পাট পন্য উৎপাদনের জন্য বছরে প্রায় ৬০ লাখ বেল (এক বেল সমাপরিমান হচ্ছে ৫ মন) পাট প্রয়োজন। তারা দাবি করেছেন পাট শিল্প রক্ষার্থে কাচাপাটর মজুদ যেন আইন বহির্ভুত না হয় এবং বাজার যেন সহনীয় পর্যায়ে থাকে এ বিষয়টি সরকারের নজর দেয়ার দাবি জানান। একই সাথে কাঁচা পাট রপ্তানির উপর শুল্কারোপের দাবি করেছেন।
বিজেএ'র ভাইস প্রেসিডেন্ট আরজু রহমান ভুইয়া দাবি করেন, কাচঁ পাট রপ্তানির উপর শুল্ক আরোপ করা হলে দেশের কৃষকদের কাছ থেকে বাজার মুল্যের চেয়ে কম মুল্যে আমাদের পাট ক্রয় করতে হবে। বাজার মুল্যের চেয়ে কম মুল্যে পাটক্রয় করলে কৃষক ন্যার্য মুল্য থেকে বঞ্চিত হবে। আগামীতে পাট উৎপাদনে আগ্রহ হারাবে। একই সাথে যে সব দেশ বাংলাদেশের কাচঁপাটের উপর নির্ভরশীল রয়েছে তারা ভারতসহ অন্য দেশের দিকে ঝুকে পড়বে। আর্ন্তজাতিক বাজার হারাবে বাংলাদেশ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দেশের সর্ববৃহৎ কাচা পাট রপ্তানী কারক প্রতিষ্ঠান পপুলার জুট এক্সচেঞ্জের পরিচালক অরুপ কুমার হোর এবং ইন্টারন্যাশনাল জুট ট্রেডার্সের পরিচালক গনেশ কুমার সাহা সহ নারায়নগঞ্জের ২০ জন কাঁচা পাট রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক ও তাদের প্রতিনিধিরা।