নিজ নামে এলাকার নাম করণের চেষ্টা বিএনপি নেতা রওশনের, এলাকাবাসীর ক্ষোভ

নিজ নামে এলাকার নাম করণের চেষ্টা বিএনপি নেতা রওশনের, এলাকাবাসীর ক্ষোভ

সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি, প্রেসবাংলা২৪.কম: নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে নাসিক ১ নংওয়ার্ডে নিজ নামে এলাকার নাম করণের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে বিএনপি থেকে আওয়ামীলীগে যোগদানকারী রওশন নামে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। জমির কাগজ, রেকর্ডসহ সরকারী সকল কাগজ-পত্রে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের নাসিক ১ নং ওয়ার্ডের একটি
এলাকার নাম মিজমিজি বাতানপাড়া।

এমনকি ঐ এলাকার বসবাসকারীদের ভোটার আইডিকার্ডেও এলাকার নাম মিজমিজি বাতানপাড়া।   কিন্তু ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে এলাকাবাসীকে শুভেচ্ছা  জানানো ব্যানারে এ এলাকার অর্ধেকাংশের নাম উল্লেখ করা হয়েছে রওশন নগর। বিলুপ্ত সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ১নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি রওশন আলী তার নামে এলাকার নাম করণ করতে চালাচ্ছেন এ প্রচারনা। এলাকাবাসীকে বাধ্য করছেন সাইনবোর্ড, বিভিন্ন কাগজে-কলমে ‘রওশন নগর’ লিখতে।

 

রওশন আলী ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর থানা আওয়ামীলীগের এক সমাবেশে আওয়ামীলীগ নেতাদের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে বিএনপি থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। সেই থেকে তিনি আওয়ামীলীগের কর্মী বলে এলাকায় পরিচয় দিয়ে আসছেন। অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় অপারেশন ক্লিনহার্টে নের্তৃত্ব দেয়া বাহিনী তার বিরুদ্ধে জমি দখল, জমির ভুয়া-নকল কাগজ তৈরীর অসংখ্য অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার তিন ট্রাঙ্ক জমির ভুয়া কাগজ পুড়িয়ে ফেলেন। ঐ সময় তাকে আটক করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। মিজমিজি বাতানপাড়া’র স্থলে তার নামে এলাকার নাম রওশন নগর করা হলে এ এলাকার জমির সকল রেকর্ডপত্র, ভোটার আইডিকার্ডসহ সরকারী সকল কাগজপত্র পরিবর্তন করতে হবে। এতে অনেক বিড়ম্বনা, হয়রাণির শিকার হতে হবে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

 

ফলে একটি এলাকার নাম হঠাৎ পরিবর্তন করে একজন ব্যক্তির নামকরণ নিয়ে এলাকায় দেখা দিয়েছে ক্ষোভ, অসন্তোষ। তবে নাসিক মেয়র বলছেন, এটা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। কাগজ-পত্রেসহ গেজেটে যে এলাকার নাম যেভাবে রয়েছে সেভাবেই থাকবে।

ঐ এলাকার সত্তোরোর্ধ স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানায়, আমাদের পূর্বপুরুষ থেকে এ এলাকার নাম আমরা মিজমিজি বাতানপাড়া শুনে আসছি। ১ আগষ্ট অনুষ্ঠিত ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে এলাকাবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে এলাকার বিভিন্ন মোড়ে, রাস্তার বিদ্যুতের খুটি, ভবনের পাশেসহ নানা জায়গায় ব্যানার সাটানো হয়। ঐ ব্যানারগুলোতে এলাকার নাম উল্লেখ করা হয় ‘রওশন নগর’।

 

অরবিট সমাজ কল্যান সংস্থা নামে একটি সামাজিক সংগঠনের নামে এ ব্যানারগুলো সাটানো হয়
এলাকায়। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা রওশন আলীর ছেলে আবুল কালাম আজাদ রাসেল। লকডাউনের সময় সংগঠনটির নামে রাসেল কিছু ত্রাণ বিতরণ করে ফলাও করে প্রচার করে আত্মপ্রকাশ করে। এ সামাজিক সংগঠনের জন্য এ এলাকায় নতুন জমি ক্রেতা-বিক্রেতা ও নতুন ভবন, বাড়ি নির্মাতাদের কাছ থেকে ড্র্রোনেশনের নামে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।

 

তাছাড়া এ এলাকায় নতুন বাড়ি করতে আসা লোকদের কাছে জোরপূর্বক ইটা, রড, সিমেন্ট ও বালু বেশী দামে ক্রয় করে নিতে বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে রওশন আলীর ভাই অলিউল্যাহ এবং ছেলে আবুল কালাম আজাদ রাসেলের বিরুদ্ধে। এছাড়াও অন্যের জমি জোর পূর্বক দখলকরে অর্থ আদায়, বহুতল ভবন নির্মাণ করতে হলে মোটা অংকের চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তবে চাঁদাবাজীর শিকার হওয়া ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের কাছে যায় না পরবর্তীতে ঝামেলার ভয়ে।

 

এ ব্যপারে মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভি বলেন, কোনভাবেই কোন ব্যক্তি একটা এলাকার নাম নিজের নামে নামকরণ করতে পারেন না। এইটা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। কাগজ-পত্রেসহ গেজেটে যে এলাকার নাম যেভাবে রয়েছে সেভাবেই থাকবে। রওশন নগর নামে কোন ব্যক্তির নামের কোন এলাকা আমি উদ্বোধন করার কোন সিডিউল কাউকে দেইনি। কেহ এমন বলে থাকলে মিথ্যা বলছেন।

 

এ ব্যাপারে রওশন আলী জানায়, আমার ছেলে রাসেল জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা। মিজমিজি বাতানপাড়ার ক্যানেলপাড়ের দক্ষিণাংশকে আমার ছেলে রাসেল আমার নামে ‘রওশন নগর’ করতে উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য সে মেয়রের লোকদের সাথে যোগাযোগ করছে। তার সাথে মেয়রের লোকদের সম্পর্ক ভাল। তবে সে এখনও কোথাও কোন অবেদন করে নাই। ঐ এলাকার কিছু প্লট বালু ভরাট করার পর মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভি দ্বারা উদ্বোধন করাবো। সে সময় আপনাদেরকে (সাংবাদিক) দাওয়াত দিবো।

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com