ওসি প্রদীপ ও এসপি মাসুদের বিচারের দাবি সাংবাদিক ফরিদুলের পরিবারের
নিজেস্ব প্রতিবেদক, প্রেসবাংলা২৪.কম: কক্সবাজার নির্যাতনের শিকার ফরিদুল মোস্তফার পরিবারের দাবি, কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মাসুদ ও ওসি প্রদীপ কুমার দাসের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রতিবেদন ও নিউজ করায় তাকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয়। এ সমস্ত কিছু অন্যায় নির্যাতন করেছে এসপি সহযোগীতায় প্রদীপ কুমার দাস। সাংবাদিক ফরিদুল এর পরিবার এখন ওসি প্রদীপের সাথে এসপি মাসুদের বিচারের জোর দাবী জানান। এক ভিডিও বার্তায় ফরিদুলের মা, বোন, স্ত্রী এই দাবী জানান।
সাংবাদিক ফরিদুলের একটাই অপরাধ ছিল। তিনি গ্রেফতারের কয়েক মাস আগে কক্সবাজার জেলার মাদক ব্যবসায়ী, মাদক সিন্ডিকেট, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ঘুষ, দুর্নীতিসহ টেকনাফ থানা ও সদর থানার ওসির ও এসপির বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে সংবাদ প্রকাশ করছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় ‘কক্সবাজার জেলার আইনশৃঙ্খলার অবনতি’, ‘অপরাধে নিমজ্জিত টেকনাফ থানার ওসি’, ‘টাকা না পেলে বন্দুক যুদ্ধের নাটক সাজাচ্ছে ওসি প্রদীপ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। এরপরই সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান রোষানলে পড়েন।
এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে গত বছরের ৩০ জুন সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানের বিরুদ্ধে একজনকে বাদী সাজিয়ে টেকনাফ থানায় চাঁদাবাজি মামলা করা হয়। ফরিদুল পুলিশের আক্রোশ থেকে বাঁচতে হুলিয়া মাথায় নিয়ে ঢাকায় আত্মগোপন করেন।
পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর মিরপুর-১ নম্বর সেকশনের শাহআলী বাগের প্রতীক হাসনাহেনা বাসায় অভিযান চালিয়ে চাঁদাবাজির মামলায় ফরিদুলকে গ্রেফতার করা হয়। মিরপুর মডেল থানার পুলিশের সহায়তায় অভিযানে অংশ নেয় টেকনাফ ও কক্সবাজার সদর থানা পুলিশ। পরে ফরিদুলকে নিয়ে লোক দেখানো অভিযানে কক্সবাজার শহরের সমিতি পাড়ায় বাড়ি থেকে গুলিসহ দুইটি অস্ত্র, চার হাজার ইয়াবা ও বিপুলসংখ্যক বিদেশি মদের বোতল উদ্ধার দেখায় টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপের নেতৃত্বে কক্সবাজার মডেল পুলিশ।
ওসি প্রদীপ কুমার দাস এর নির্যাতনের শিকার ফরিদুল মোস্তফা খান দৈনিক কক্সবাজার বাণী এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘জনতার বাণী ডটকম’র সম্পাদক ও প্রকাশক। প্রদীপ কুমার দাশের নির্যাতনে চোখ হারিয়েছেন এই সাংবাদিক। থানা হাজতে তো নয়ই, কারাগারে নেয়ার পরও ফরিদুল কোনো চিকিৎসা না পেয়ে আজ তিনি পঙ্গু। ১১ মাস ধরে ছয়টি মিথ্যা মামলায় বর্তমানে কক্সবাজার কারাগারে রয়েছেন এই সংবাদকর্মী।
তার পরিবারের দাবি টেকনাফ থানা থেকে কক্সবাজার শহরে কিভাবে প্রদীপ এসে নির্যাতন করতে পারে! এসপি সাহেব ও ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে লেখনী কাল হয়েছিল ফরিদের। এমনকি ফরিদুলকে ধরার জন্য প্রতিরাতে তার বাড়িতে ওসি প্রদীপ হামলা দিত স্ত্রীকে সম্ভ্রমহানীর জন্য। এসপি সাহেবের ও বিচার হতে হবে বলে দাবি করেন সাংবাদিক ফরিদুলের বোনের।
নির্যাতনের ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে ফরিদুলে স্ত্রী বলেন, আমার স্বামীকে নির্যাতনে পর পানি পান করতে চাইলে তাকে প¯্রাব পান করানো হয়। তার চোখে মরিচ এর গুড়া দিয়েও নির্যাতন করেছে। আমার স্বামী এখন চোখের দৃষ্টি হারাতে বসেছে। তাকে উলঙ্গ করে পতিতা দিয়ে ছবি তুলে রেখেছে। এতেও ক্ষান্ত হয়নি সে পরপর ১১টি মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে কারগারে রাখার সকল ব্যবস্থা করেছে। আমাদের অনেক নির্যাতন করেছে, তার নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য আমি হাইকোর্টে ও গিয়েছি। এগুলো সবকিছুই এসপির নির্দেশে করেছে প্রদীপ। আমার স্বামীর একটি দোষ সে এসপির ও ওসির বিরুদ্ধে মাদক নিয়ে টাকা ভাগাভাগি করে লুটপাট করে অপকর্ম চালিয়ে যেত বলে নিউজ করেছে। এসপি সাহেবের সাথে সমোঝোতার ভিত্তিতেই চলত প্রদীপের সকল অপকর্ম ।
ফরিদুলের কারাবন্দি এ ১১ মাসে বন্ধ হয়ে গেছে তিন ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা। তিন সন্তান আর বৃদ্ধা মা নিয়ে চরম অভাব-অনটনে দিন কাটছে পরিবারের সদস্যদের। সংসার ও মামলার খরচ চালাতে বসত ভিটা বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন তারা।