রূপগঞ্জ প্রতিনিধি, প্রেসবাংলা২৪ডটকম : দেশের হটস্পট খ্যাত নারায়ণগঞ্জ ও রূপগঞ্জের অবস্থা ক্রমেই ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে। বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এখানে বেসরকারী ভাবে কাঞ্চনে গাজী গ্রুপের অত্যাধুনিক পিসিআর ল্যাব থাকলেও নেই আলাদা করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থা। ফলে আক্রান্তদের বেশিরভাগই ব্যক্তিগতভাবে যার যার বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে খোঁজ খবর রাখছেন উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত উপজেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৫১জন। এদের মধ্যে ইউএস বাংলা ও রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৫ শতাধিক করোনা সন্দেহে রোগীদের থেকে নমুনা সংগ্রহের পর ৩৯ জনের করোনা ভাইরাস পজেটিভ আসে। এছাড়াও রূপগঞ্জের বিভিন্ন স্থানের বসবাসকারী নাগরিকদের মধ্যে আরো ১২ জন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা করার পর তাদের পজেটিভ পাওয়া যায়।
এদিকে জেলা সিভিল সার্জন সূত্র জানায়, রূপগঞ্জের ঠিকানা ব্যবহারকারী করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরো বেশি। তাদের মধ্যে অনেকেই জেলা শহরের বসবাস করায় উপজেলা হিসেবে গণ্য হচ্ছেন না। সূত্র জানায় এ পর্যন্ত রূপগঞ্জ উপজেলায় মোট করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের পর তাদের মধ্য থেকে গত ২৪ ঘন্টায় ৫জন সুস্থ্য হয়েছে। এদের মধ্যে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাসপাতালে কর্মরত রেডিও অপারেটর সেলিনা আক্তার , আয়া পারভীন , সেকমো লাকী বেগমসহ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের বীর হাটাবোর এলাকার কলেজ শিক্ষার্থী আছমাউল হুসনা, তার মা নাছিমা বেগম সুস্থ্য হয়েছে। এসব সুস্থ্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে রোববার দুপুরে রূপগঞ্জ উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান ভুঁইয়া, রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম, রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পণা কর্মকর্তা ডাক্তার সাইদ আল মামুন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার ফয়সাল আহমেদের উপস্থিতিতে সুস্থ রোগীদের ফুল দিয়ে বরণ করে, চিকিৎসা সামগ্রি, খাবার ও ফলসহ বাড়িতে পৌঁছে দেন তারা।
এদিকে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে যাদের শারীরিক অবস্থা তেমন দুর্বল নয় তাদের বাড়িতে চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে এখনো ৪জন করোনা পজেটিভ রোগী এ সরকারী হাসপাতালের আলাদা ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতে আতঙ্কিত হয়ে সাধারন রোগীরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন না অনেকেই। সূত্র আরো জানায়, এ পর্যন্ত মারা গেছেন ২জন। তাদের দাফন করেছেন রূপগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের গঠিত দাফন টীম।
এসব বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পণা কর্মকর্তা ডাক্তার সাইদ আল মামুন বলেন, সরকারি নির্দেশনা রয়েছে করোনা আক্রান্ত রোগী যাদেও শারীরিক অবস্থা কিছুটা ভালো তারা বাড়িতে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিবেন। তাই তাই তাদের বাড়িতে রাখা হচ্ছে। তাছাড়া ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল তাদের জন্য পর্যাপ্ত সুবিধা নেই। এখন রোগী যেভাবে বাড়ছে তাতে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ ইউএনও' মমতাজ বেগম বলেন, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা মানবিক দৃষ্টিকোণ নিয়ে মাঠে থেকে মোকাবেলা করছি। রূপগঞ্জ উপজেলায় কোন ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। তাদের মধ্যে যারা গরীব, অসহায় তাদের চিকিৎসা, খাবারসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিচ্ছি। তারপরও সামনের পরিস্থিতির জন্য আরো উন্নত ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। সেবাদানকারীদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম আরো প্রয়োজন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার ইমতিয়াজুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, জেলার করোনা পরিস্থিতিতে ক্রমেই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। যেসব উপজেলায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। জেলার সঙ্গে সমন্বয় করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। তবে রোগী ও স্বজন কিংবা প্রতিবেশিরা যেন আতঙ্কিত না হয় তার জন্য সচেতন নাগরিকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। স্বাস্থ্য বিধি মানা ছাড়া কোন বিকল্প নেই।